বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের দুঃসাহসী স্পাই মাসুদ রানাকে কি ভোলা যাবে?
মাসুদ রানা বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের এক দুর্দান্ত দুঃসাহসী স্পাই। গোপন মিশন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় দেশ-দেশান্তরে। বিচিত্র তার জীবন। অদ্ভুত রহস্যময় তার গতিবিধি। কোমলে কঠোরে মেশানো নিষ্ঠুর সুন্দর এক অন্তর। একা। টানে সবাইকে কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না। কোথাও অন্যায়- অবিচার-অত্যাচার দেখলে রুখে দাঁড়ায়। পদে-পদে তার বিপদ-শিহরণ-ভয় আর মৃত্যুর হাতছানি।
এই মাসুদ রানার সাথে পরিচয় হয়েছিল সেবা প্রকাশনীর নিউজপ্রিন্টের বইয়ের মাঝে, খসখসে পাতা থেকে কালো কালো অক্ষর গুলো তখন রঙিন বিশ্বের গান শোনাত ঘুরে ঘুরে, ক্লাস রুমে শিক্ষক এক ঘেয়ে গলায় বলে চলেছেন জীবনের লক্ষ্য ঠিক করার উপকারিতা, আমি চলেছি সোহানার সাথে , জিম্বাবুইয়ের ধু ধু মরুভূমির মধ্য দিয়ে জীপে করে, জীবনের লক্ষ্য তখন একটাই- দেখে নিব উমাঙ্গো নামের বদমাশটাকে।
রানার নিজের সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা প্রায় পরিণত হয়েছিল জীবন দর্শনে – নিজের সম্পর্কে সব সময় উঁচু ধারণা পোষণ করেছি আমি। নিজেকে চিনি, নিজের যোগ্যতার পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর রাখি বলেই সম্ভব হয়েছে এটা। শারীরিক যোগ্যতা এবং চিন্তার স্বচ্ছতা অর্জনের জন্য জ্ঞান হবার পর থেকে কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমার আত্মবিশ্বাস কারও চেয়ে কম নয়, তার কারণ নিজেকে মনের মত করে গড়ে তোলার কাজে কখনও ফাঁকি দিইনি আমি। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্যে ভদ্র হওয়া একটা অলঙ্ঘনীয় শর্ত, সে চেষ্টাই করছি। বসুন্ধরা শক্তের ভক্ত, নিজেকে আমি সেভাবেই গড়ে তুলেছি। উচ্চাশা ছাড়া মানুষের উত্তরণ ঘটেনা, তাই আমিও উচ্চাকাঙ্ক্ষী।
কখনও পড়ার ঘর ক্রান্তীয় স্বর্গদ্বীপে পরিণত হতো, তেতলার জানালা দিকে তাকালেই যেন পদ্মাপারের রাজশাহীতেই সদ্য গজিয়ে ওঠা পাম গাছ ছাওয়া পাহাড় আর অদূরের অথৈ সমুদ্র, সাদা বালির সৈকত, নীল ল্যাগুন দেখা যাবে। থাক,আপাতত বইয়ের মাঝেই ডুব দিই মোটা তাজা ক্রাইফিশ ভাজা আর রাফেলা বার্ডের সঙ্গ পাবার লোভে। আবার থেকে থেকেই চারপাশে হয়ে ওঠে রণাঙ্গন, ফুলঝুরির মত গুলি ফুটছে, মাথার উপর দিয়ে ছুটে যাচ্ছে মর্টারের ঝাঁক, যে কোন মুহূর্তে ছুটে আসা স্প্লিন্টার লেগে পঙ্গু হয়ে যেতে পারি জীবনের জন্য, অবিরাম দৌড়ানোর ফলে বুকের ভেতরে হৃৎপিন্ড নিস্তেজ হয়ে পড়ার যোগাড়, উত্তেজনার ধেয়ে আসে হরমোনের স্রোত, কিন্তু থামার উপায় নেই!
আমি থামলেই মাসুদ রানা মারা পড়বে যে! সেটি হবার নয়। কখনো আবার জলের দিশা নেই ত্রিসীমানায়- সাহারার কোন প্রান্তে চলেছি আরব বেশে,ইসরায়েলি স্পাই অ্যালেক বোগানকে মোকাবিলা করতেই হবে, তার কাছে আগে রেবেকা নামের সেই ক্ল্যাসিক বইটি যেখান থেকে গুপ্ত কোডের মাধ্যমে সমস্ত তথ্য পাঠাচ্ছে সে। গলা শুকিয়ে কাঠ, ইতস্তত জিভ ঘুরে বেড়ায় শুকনো ঠোঁটে,সাবধান তাপের কাছে, তৃষ্ণার কাছে, অ্যালেকের কাছে হার মেন না। তুমি হার মানলেই রানা শেষ, ধবংস হয়ে যাবে বাংলাদেশে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স। কখনো বরফের রাজ্যে, গ্রিনল্যান্ডে বা সুমেরুর আশেপাশে, কিংবা কেজিয়ামের দ্বীপের খোঁজে দক্ষিণের দিকে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় দানব যখন মনে হয় হিমশৈলগুলোকে।
কেন এমন ভাবে মিশে গিয়েছিলাম মাসুদ রানার মাঝে?
এই প্রশ্নের কি কোন উত্তর হয়!
বলা হয়ে ছিল জেমস বন্ড কেন এত জনপ্রিয়? একটা উত্তর ছিল অধিকাংশ পুরুষই স্বপ্ন দেখে তার হাতে থাকবে দামী গাড়ীর স্টিয়ারিং, পকেটে বিচিত্র সব অস্ত্র, আশেপাশে লাস্যময়ী নারী, জীবনময় ঝুঁকি, রোমাঞ্চ- তাই সবাই রূপোলী পর্দার জেমস বন্ডের মাঝে খুঁজে নেয় নিজের সেই লালিত স্বপ্নকে। হয়তো না নারীরা পান তাদের স্বপ্নপ্রেমিককে।
কিন্তু মাসুদ রানা জেমস বন্ড না। যখন রানা ক্যাসিনোর টেবিলে জেতা হাজার হাজার ডলার সাথের সঙ্গিনীকে দিয়ে দেয় যেন সে নিজের স্বাধীনতা কিনে নিতে পারে ( মনে হয় বন্ধু বইতে), নিজের জীবন বিপন্ন করে রানা এজেন্সীর অধীনে চাকরি করা এক এজেন্টকে বাঁচাতে চলে যায় যুদ্ধাক্রান্ত আফ্রিকাতে ( টার্গেট নাইন), ছোট মেয়ে লুবনার স্মৃতিকে মর্যাদা দিতে উপরওয়ালাদের সকল নিষেধ অমান্য করে, সকল প্রতিকূলতাকে দলে ধুলোয় গুঁড়িয়ে দেয় মাফিয়া ডন বাকালার প্রাসাদ ( অগ্নিপুরুষ), ভিনদেশকে ভালবেসে নিজের উদ্ধার করা সমস্ত গুপ্তধন অবলীলায় দিয়ে আসে ( আই লাভ ইউ, ম্যান) তখন তাকে অনেক আপনার মনে হয়, একজন খাঁটি মানুষ মনে হয়।
আর সবার উপরে থাকে তার দেশপ্রেম, সবসময়ই। চরমতম বিলাসিতার সুযোগ পেলেও রানার মনে আসে দুর্ভিক্ষের শিকার মাছের জাল পড়া গৃহবধু বাসন্তীর কথা,পথশিশুদের কথা, শত বার উদ্ধার করা টন টন সোনা সে অকাতরে দিয়ে দেয় বাংলাদেশের কোষাগারে। আহা, এমন ভাবে যদি সবাই চিন্তা করত, সবাই তো আর মাসুদ রানা হতে পারে না, কিন্তু সাধ্যমত প্রচেষ্টা করত দেশটাকে সামনে নিয়ে যাবার!
মতিঝিল শাপলা চত্বরে যেতে হাঁ হয়ে গেছিলাম প্রথমবার, এইখানেরই কোন এক অফিসে রানা বসে, আছে সেখান সোহেল, সলীল, রাশেদ, সোহানা, রূপা এবং দ্য বিগ বস মেজর জেনারেল রাহাত খান। এইখানেই বোমা মেরে রানাকে নিকেশ করতে যেয়ে গিলটি মিয়াকে প্রায় মেতে ফেলেছিল দস্যু উ সেন, ফলাফল- নিজের মৃত্যু ডেকে আনল সে! রানার সাথে সঙ্গী হলাম সেই উ সেন নামের এক অসাধারণ অভিযানে, এক অসম্ভবকে সম্ভব করে, দীপ্ত ছন্দময় পদচারনায় ছদ্মবেশের মেলা দেখিয়ে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে ইউনিয়ন কর্সের কাপু উসেনের নিকেশ করে। কিন্তু আসলেই কি ধ্বংস হল উ সেন? তাহলে কেন আবার ফিরে আসল একই ধরনের অপরাধচিত্র আবার উ সেনে? রানারই প্রেমিকা হয়ে হত্যার চেষ্টা করল উ সেনেরই কন্যা, পরিণতি হল তার খুনে বাবার মতোই।
রানা একা, কিন্তু একা না কোন সময়ই! টানে সবাইকে কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না, যদিও কথাটা মনে হয় ঠিক না। রানার নিজের ভাষাতেই- অনেক মেয়ের সান্নিধ্য পেয়েছি আমি, আজ যখন কোন একটা গানের সুর কানে বাজে বা নির্দিষ্ট কোন একটা সুগন্ধ নাকে পাই তখন শুধু মধুময় স্মৃতি হয়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ফিরে আসে তারা আমার মনে।
প্রথম প্রেমিকা রাফেলা বার্ডের ঘন নীল চোখ (দুপুরের কড়া রোদ সরাসরি মোজাম্বিক স্রোতে পড়লে যেমন অপার্থিব গাঢ় নীল হয়) যেমন তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় (আই লাভ ইউ, ম্যান), তেমনই রেবেকা সাউলের গাঢ় কফির মত চোখের মণির কাছে অসহায় হয়ে পড়ে বিশ্ব জয়ী বাঙ্গালী বীর ( বিদায় রানা), মিত্রা সেনের প্রেমে বিয়ের ফাঁদে রাজী হয়েই জীবনের খাঁদে প্রায় পতন ঘটেছিল ( ভারতনাট্যম, মূল্য এক কোটি টাকা মাত্র), ব্যারনেস সিবা কেবলমাত্র তাকেই ভালবাসে বন্ধুত্বের খাতিরে বেছে ছিল আত্নহননের পথ ( সেই উ সেন), লুকিয়ে মেক্সিকোর অ্যাডভেঞ্চারে জড়িয়ে পড়ে কাউবয় মতো ঘোড়ার পিঠে র্যাঞ্চে দাবড়ে বেড়ালেও প্রেম তার পিছু ছাড়ে না এবং প্রেমিকাও চেয়ে বসল একটি মাত্র উপহার- রানার সন্তান ( বুমেরাং), মাল্টার মেয়ে ভায়োলা যেন নতুন জীবন দান করেছিল রানাকে আর বাটু ফারেঙ্গি সমুদ্রতল থেকে শুরু করে ঢাকার ফ্ল্যাট সবখানেই উপস্থিত ভবিষ্যতের মিসেস রানা- সোহানা।
কিন্তু বাস্তবের রানা লম্পট নয়, অপরূপার সাথে এক বিছানাতেও মাঝে গোলাপের তোড়া রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমায় সে আর কিছুই না করে, সকালে সেই আবেদনময়ী তরুণী বলে- আমার পাশে শুয়েও যে আমার দেহের দিকে হাত না বাড়িয়ে কোন পুরুষ থাকতে পারে তার প্রমাণ প্রথম পেলাম। নিয়াপলিটান সৌন্দর্যের উৎকৃষ্ট নমুনা লরা আভান্তিকে ফিরিয়ে দেয় সে চোখ বন্ধ করে। আবার এই রানাই নকল রাফেলার সাথে কামময় রাত কাটানোর আগে বলে- নিজেকে বঞ্চিত করতে নেই, দুর্ভিক্ষ কখন দেখা যায় কেউ বলতে পারে না! লুইসা পিয়েত্রোর সাথে তার বন্ধুত্ব অটুট থাকে, থাকে রূপা সাথে সুদৃঢ় বোঝাপড়া। আবার ডাঁসা পেয়ারার মত ফিগারের অধিকারী নার্স সিস্টার মে-র অবুঝ প্রশ্ন মেয়ে মানুষ এর চেয়ে বড় নেশা আর কি হতে পারে? রানার মুখে আমার নির্লিপ্ত উত্তর ছিল- অ্যাডভেঞ্চার।
কত জানা-অজানা প্রতিপক্ষ, বন্ধু শত্রুতে পরিণত হয়, শত্রু বন্ধুতে। কিন্তু সবচেয়ে বড় শত্রু যারা বাংলাদেশের ক্ষতি চায়, দেশী বা বিদেশী! কবির চৌধুরী তো আছে সেই প্রথম বই ধ্বংস পাহাড় থেকেই, তারপর যে কতবার আমাদের যৌথ চেষ্টার কাছে পরাজিত হল তার কোন ইয়ত্তা নেই, কিন্তু বেড়ালের চেয়ে যেন বেশী প্রাণের অধিকারী লোকটা! মরণ কামড়ের কামড়েই মরণ হবার কথা ছিল তার, কিন্তু বেঁচেছিল সে সেযাত্রা। অবশেষে আবার সেই দুঃস্বপ্নে চাপা দেয়া হয়েছিল এক সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্টকে আটক করা (স্পর্ধা) কবির চৌধুরীকে, ইদানিং তার পুত্রসন্তান মাঝে মাঝে বিরক্ত করার চেষ্টা করে!
জয়দ্রথ নামের বিষাক্ত কেউটের চেয়ে ভয়ংকর লোকটাকে মনে আছে, সোনার বাংলাকে শ্মশান করতে চেয়েছিল যে অভিনব উপায়ে পঙ্গপালের ঝাক দিয়ে ( ভারত নাট্যম)? সিডনী শেরডান নামের সেই হাঙ্গরের মত ক্ষুধার্ত, লোভী, নিষ্ঠুর লোকটাকে যার জন্য চার চারটি বছর নির্বাসনে কাটাতে হয়েছে রানার? হুমায়ুন দাদা নামের সেই দানবটাকে যাকে বোমার বিস্ফোরণও মারতে সক্ষম হয় নি? হেক্টর নামের অহংকারী তেলকূপ বিশেষজ্ঞ কে ( সাগর কন্যা)? বিষকন্যার ভিলেন অফিসার রুস্তমভ? চাই সাম্রাজ্য নামের অসাধারণ বইটির দুই ভাই মিশরীয় উম্মাদ নেতা এবং মেক্সিকান উগ্রবাদীকে? জাপানি ফ্যানাটিকের ভয়ংকর শত্রুকে? শ্বাপদ সংকুল অরণ্যের হাতি অসুর এবং জেনারেল কিরকিটি বাওনাকে? সত্যবাবার তথাকথিত বুজুর্গ পীরবাবা হযরত হিকমত বাগদাদীকে? নাৎসি গুপ্তচর বিভাগের সাবেক প্রধান কোকেন সম্রাট কে? এদের মানুষ মনে রেখেছে কিন্তু রানার জন্যই!
কিন্তু রানা ধ্বংস করতে ইচ্ছুক না, সে চায় সৃষ্টি করতে। সবুজ বাগানে, বনে দেশ ভরে দিতে। যে ধ্বংস তাকে বাধ্য হয়ে করতে হয় সেগুলো মানবজাতির পক্ষে এক একটি বাধা স্বরূপ। বাধ্য হয়েই অপসারণে ডাক পড়ে রানার, কিন্তু সুযোগ পেলেই গড়তে লেগে যায় সে – বঞ্চিত শিশুদের জন্য আশ্রম, বিদ্যালয়, দাতব্য প্রতিষ্ঠান, সবকিছুই।
আর রানার বন্ধুভাগ্য! সেই তালিকা তার শত্রুতালিকার চেয়ে অনেক অনেক লম্বা, ভিনসেন্ট গগলের মত এক অদ্ভুত বন্দী আছে তার যে কোন প্রশ্ন করা ছাড়ায় সারা বিশ্ব পাড়ি দেয় রানার বিপদে! সোহেল না রানা, কে যে কার জন্য বন্ধুঅন্তপ্রাণ বলা মুশকিল! আছে রেমারিক, জিলেট ল্যাম্পনি, ফিলিপ রডরিক, জিপসির প্রিন্স মোর্সেলিন দ্য মুরগা, বন্ধু মিছিলে এত এত বেশী নাম যে সেটার জন্য আলাদা পোস্ট দরকার। তাদের কেউ কেউ চিরবিদায় নিয়েছে রানাকে বাঁচাতে যেয়ে, বন্ধুত্বের শক্তিতে! তারা জানত দরকার হলে রানাও প্রাণ দিতে বন্ধুর জন্যই।
রানার মত এত মহাকাশব্যপী গুণের সমন্বয় কি বাস্তবের কোন মানুষের মাঝে সম্ভব? তার সৃষ্টিকর্তা কাজী আনোয়ার হোসেনের উত্তর ছিল – না! কোন মানুষ একই সাথে এত দক্ষ ভাষাবিদ, পর্বতারোহী, ডুবুরী, কম্পিউটার বিশারদ, ইতিহাসবিদ, শিকারি, যোদ্ধা, কূটনীতিবিদ, বৈমানিক, সাগরবিশেষজ্ঞ, ভূতাত্ত্বিক, অস্ত্রবিশারদ, ড্রাইভার, জীববিদ- এমন অযুত গুণের আকর হতে পারে না! যতবার রানার কাঁধ ছুয়ে গুলি সামান্য মাংস নিয়ে বেরিয়ে গেছে, সেটা বাস্তব হতে হলে যে পরিমাণ মাংসপেশী কাঁধে থাকার কথা কোনো মানুষের কাঁধেই এত বেশী মাংস থাকতে পারে না! কিন্তু রানার সার্থকতা এইখানেই, মনের মধ্যে সে স্বপ্ন বুনে যায়- এমন মানুষ যদি নাও থাকে- আমার রানা হতে দোষ কোথায়? চেষ্টা করতে ক্ষতি কি?
জন্মের আগেই হয়ত কার্ল স্যাগানের কসমস দেখাত টিভিতে, অনেক বছর পরে সেটা দেখেছি ইউটিউবে বারংবার, তাই আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগারের নাম প্রথম জেনেছিল মাসুদ রানার সাথে থেকেই- চাই সাম্রাজ্য নামের অদ্ভুত এক কাহিনীতে। জায়ান্ট স্কুইডের লোমহর্ষক কাহিনী জেনেছিলাম বড় ক্ষুধা পড়েই, সেই দানবের সাথে অতল জলের নিচে দেখা হলে কী হতে পারে চিন্তা করেই হাত-পা পেটের ভিতরে সেঁধিয়ে গেছিল। একশ টন সোনা আপনি হাইজ্যাক করতে পারেনই, কিন্তু সেটা বহন করা এক ট্রাকে সম্ভব না! এত সহজ সরল সত্য কে জানাল? কেন শত্রুপক্ষের খালিদের ছদ্মবেশে মাসুদ রানা! মায়ান সাম্রাজ্যে পা দেবার অনেক আগেই জেনেছিলাম তাদের সিনোতে আর গুপ্তধনের কথা,কোথায়? কেন, মায়ান ট্রেজার পড়ে। এমন আছে লাখো বিষয়ের কথা। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি?
মাসুদ রানার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব- গল্পের এই চরিত্রকে নিজের মাঝে আবিস্কার করে, তার অনুপ্রেরণায় একাধিক অসমসাহসী যুবক একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। এরচেয়ে বড় সন্মান এবং স্বীকৃতি আর কী হতে পারে!
দিন শেষে মনে হয় মাসুদ রানা আমার মতই একজন বাঙ্গালী, ঘুমাবার আগে যার মনে হয় কুয়াশা ঢাকা গ্রাম, আমের বাগান, বাঁশের ঝাড় আর শ্লোক বলা কাজলা দিদিকে।
চিরতরুণ, চিরসবুজ মাসুদ রানার গতি অব্যাহত থাকুক, আমাদের দিনগুলো ভরে উঠুক নব নব অ্যাডভেঞ্চারে, বুকের গহনে তিরতির রোমাঞ্চ নিয়ে আমরা যোগ দিই সেই দুঃসাহসী যুবার সাথে।