বিক্ষোভকারীদের উপর বলপ্রয়োগের নির্দেশ রনিলের, সেনাবাহিনী বলছে 'গুলি চলবে না'
শ্রীলঙ্কায় আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বিক্ষোভকারীদের উপর বলপ্রয়োগের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের দেওয়া নির্দেশ প্রত্যাখান করেছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের উপর তারা কোনো গুলি চালাবে না। চলমান তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই জনতার রোষ এড়াতে দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকশের পলায়ন শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতিকে আরো উত্তপ্ত করে তুলেছে।
ভারত ইতোমধ্যেই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে তারা শ্রীলঙ্কার সাধারণ জনগণের পাশে আছে এবং পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য তাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে। তবে অনুমান করা হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ইতিহাসের এই কলঙ্কিত রাজাপাকশে পরিবার তখনই পদত্যাগ করবে যখন গোতাবায়া মালে থেকে সিঙ্গাপুরে পৌঁছাবেন, যাতে করে চাঙ্গি বিমানবন্দরে তিনি প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক প্রটোকল পান।
কলম্বো থেকে যারা এ বিষয়টির উপর নজর রাখছেন, তাদের বিশ্বাস, গোতাবায়া আজ বৃহস্পতিবারই সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন এবং তার আসল উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে থাকা। তার ছোটভাই বাসিলের এখনো মার্কিন নাগরিকত্ব রয়েছে।
এদিকে রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ায় জনগণের ক্ষোভ আরো চরমে উঠেছে। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে শ্রীলঙ্কার পথেঘাটেই। বুধবার উত্তেজিত জনতা সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ঢোকার চেষ্টা করে। মাহিন্দা রাজাপাকশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা রনিল বিক্রমাসিংহেকে মনে করা হচ্ছে রাজাপাকশে পরিবারেরই আরেকটি বর্ধিত রূপ।
দেশের সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে রনিল বিক্রমাসিংহে ইতোমধ্যেই দেশে কারফিউ জারি করেছেন। শুধু তাই নয়, বিক্ষোভকারীদের দমনের জন্য তাদের উপর বলপ্রয়োগের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি সেনাবাহিনীকে। কিন্তু জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে তার এই নির্দেশ পালনে অস্বীকৃতি জানিয়েছে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী। এদিকে রাজাপাকশে পরিবারের দুর্নীতি ও অরাজকতাপূর্ণ শাসনের ফলে খাদ্য ও জ্বালানি সংকটে ধুঁকে ধুঁকে মরছে শ্রীলঙ্কার জনসাধারণ ।
তিন বাহিনীর কমান্ডারদের আহ্বানে মঙ্গলবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বৈঠক করেন এবং ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে রনিলের পদত্যাগের দাবিতে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব জারি করেন। কিন্তু রনিল বিক্রমাসিংহে জানিয়েছেন, সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন নতুন নেতা বহালের পরেই তিনি পদত্যাগ করবেন। রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করতে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি সেনাবাহিনীকে।
কিন্তু পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কোনো রাজনৈতিক দলের কাছেই নিশ্চিত সম্মতির সংখ্যা না থাকায় এটি স্পষ্ট যে, রাজাপাকশে পরিবার আপাতত নিজেদের জায়গা ধরে রাখতে রনিলকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করবে।
এদিকে পাবলিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনষ্ট করার দায়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে 'আরাগালায়া' প্রতিবাদী গোষ্ঠীও। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চরম বামপন্থী ফ্রন্টলাইন সোশ্যালিস্ট পার্টি'র (এফএসপি) সমর্থকরাই রাস্তায় অরাজক পরিস্থিতির জন্য দায়ী। শ্রীলঙ্কার সংসদ ভবনের সামনে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তারক্ষী আহত হয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া মালদ্বীপে পালিয়ে যাওয়ার পর তাকে পালাতে সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছে স্পিকার মোহাম্মদ নাশিদ ও ক্ষমতাসীন এমডিপি সরকারের বিরুদ্ধে।
মালদ্বীপ ন্যাশনাল পার্টির সংসদীয় গ্রুপ গোতাবায়াকে পালাতে সাহায্য করার জন্য মালদ্বীপ সরকারের পদক্ষেপ পর্যালোচনা করার জন্য সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন করবে বলে জানা গেছে।
রনিল বিক্রমাসিংহেকে শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে জোর করে বহালের জন্য গোতাবায়ার প্রতি জনগণের যে ক্ষোভ, তাতে আগামী দিনগুলোতেও শ্রীলঙ্কার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনিশ্চয়তায় ঝুলছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া, অন্য কোনো নেতাও রাজাপাকশের সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পা রাখতে চাইছেন না। তাই এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার একমাত্র সমাধান হচ্ছে, রাজাপাকশে পরিবারের সাথে কোনোরকম সম্পর্ক বিবর্জিত, নির্দলীয় ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের অধীনে দ্রুত সাধারণ নির্বাচন দেওয়া।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস