ইউক্রেনের বন্দরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, বিশ্ববাজারে আবারো বেড়েছে গমের দর
ইউক্রেনের কাছে থাকা খাদ্যশস্যের বিপুল মজুদ বিশ্ববাজারে আনতে জাতিসংঘের সমর্থিত এক চুক্তিতে সই করেছে মস্কো ও কিয়েভ। তুরস্কে স্বাক্ষরিত দ্বৈত চুক্তির আওতায় রাশিয়া ইউক্রেনকে লাখ লাখ টন শস্য রপ্তানি করতে দিতে রাজি হয়।
চুক্তি সইয়ের এক দিন পরই ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগরের বন্দর ওডেসায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা; বিশ্ববাজারে গমের দরও লাফ দিয়ে বেড়েছে।
বৈশ্বিক অনাহার মোকাবিলায় ইউক্রেন থেকে খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার ওপর জোর দিচ্ছে জাতিসংঘ ও ত্রাণ সংস্থাগুলো। এই সরবরাহ বিশ্ববাজারে খাদ্যের দামও কমাবে, আর তাতে করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর আমদানি ব্যয় ও ভোক্তাপর্যায়ে মূল্যস্ফীতির চাপ কমবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ওডেসায় হামলার পরও এ বন্দর দিয়ে খাদ্য রপ্তানির পরিকল্পনা অব্যাহত রাখা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা। অন্যদিকে, সঙ্গে সঙ্গে হামলার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
তবে এই ঘটনা জাহাজে পণ্য পরিবাহী সংস্থা ও বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য স্পষ্ট ঝুঁকির বার্তা দিল।
ইউক্রেনের কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলি দিয়ে খাদ্যশস্য রপ্তানির চুক্তিটি হয় গত শুক্রবার। বৈশ্বিক খাদ্য সংকট নিরসনে একে তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে তখন বলা হয়েছিল। চুক্তিটি সই হলেও এটি আসলে কার্যকর হতে পারবে কিনা- তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন বিশ্লেষক ও পশ্চিমা কর্মকর্তারা।
এদিকে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আমেরিকার শিকাগোয় গমের ফিউচার্স বৈশ্বিক সূচকে দরে বেড়েছে ৪.৬ শতাংশ। লন্ডনের বাজারে ৩.৬ শতাংশ উচ্চ দরে লেনদেন হয়েছে গমের স্টক।
এর আগে শুক্রবার ইস্তাম্বুলে চুক্তি সইয়ের দিন বিশ্ববাজার দর প্রায় ৬ শতাংশ কমেছিল, ওইদিন বাজারে কার্যদিবসের লেনদেন শেষ হয় গেল ফেব্রুয়ারির পর সবচেয়ে কম দামে।
কৃষি বাজার বিশ্লেষক সংস্থা- এগ্রিটেল জানিয়েছে, 'নতুন কোনো বোমা হামলার ভয়ে বাজারে এখন গভীর উদ্বেগ থাকবে, রপ্তানি সচল করতে চুক্তিটির যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়েও থাকবে শঙ্কা'।
তবে ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ওডেসা বন্দরের শস্য গুদামে আঘাত হানেনি। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বন্দরের কিছু সামরিক স্থাপনাকেই ধবংস করেছে মিসাইল।
যুদ্ধের ফলে বিপর্যস্ত ইউক্রেনের অর্থনীতি। আবার খাদ্য রপ্তানি শুরু করে অর্থনীতিকে সহায়তা দিতে দেশটির সরকার ব্যাপক চাপের মধ্যে রয়েছে। ইউক্রেনের অবকাঠামো মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওডেসা, ক্রোনোমোর্স্ক ও পিভদেনি বন্দরের কার্যক্রম সচল করার উদ্যোগ নিচ্ছে তারা। শস্য রপ্তানির উদ্যোগে যোগ দিতে ইচ্ছুক জাহাজগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
একবার রপ্তানি শুরু হলেই আন্তর্জাতিক বাজারের ব্যবসায়ীরা বড় চালান আসতে কতোটা সময় লাগে–সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। যত দ্রুত বড় চালান আসবে, বাজার দরে তার প্রভাব ততোটাই তাতক্ষণিক হবে।
ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ উদ্ভিজ্য ভোজ্যতেল, গম ও ভূট্টা রপ্তানিকারক। তবে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকেই বন্ধ রপ্তানির কার্যক্রম। দেশটির গুদামগুলিতে এখনও গত মৌসুমের কয়েক কোটি টন ফসল মজুদ রয়েছে। নৌপথে রাশিয়ার অবরোধ থাকায় এসব রপ্তানিও করতে পারছে না।
সড়ক, নদী আর রেলপথে ছোট আকারের কিছু চালান প্রতিবেশী দেশগুলোতে পাঠিয়েছে কিয়েভ। তবে তা যথেষ্ট নয়, সরবরাহের অভাবে যুদ্ধের আগে যেসব দেশ ইউক্রেনের প্রধান প্রধান ক্রেতা ছিল–তারা এখন অন্য উৎসমুখী হচ্ছে। সরবরাহ না থাকায় বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকির মুখে। দিন দিন পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। এজন্য তিনি তুরস্কে স্বাক্ষরিত সমুদ্রপথে রপ্তানির চুক্তিটি 'সম্পূর্ণভাবে' বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে চুক্তির একটি নথি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কির ডেপুটি চিফ অভ স্টাফ অ্যান্ড্রি সিবিহা। এতে বলা হয়েছে, চুক্তিতে সম্মতিদানকারী পক্ষগুলি খাদ্য রপ্তানিতে নিয়োজিত বাণিজ্যিক জাহাজ বা বন্দর স্থাপনায় কোনো প্রকার হামলা চালাবে না।
যুদ্ধ মানে না কোনো নিয়ম। ওডেসায় হামলা কি তারই ইঙ্গিত! নাকি এর মাধ্যমে পশ্চিমা দুনিয়াকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিজ ক্ষমতার বার্তাই দিল রাশিয়া?
মস্কোর উদ্দেশ্য যাই হোক, খাদ্য বাজারে তার কালোছায়াই পড়েছে। শিকাগোর বাজারে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রথমবারের মতো বেড়েছে ভুট্টার মূল্য, দর বেড়েছে সয়াবিনেরও।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ