কীভাবে আফ্রিকা থেকে চিতা নেওয়া হবে ভারতে?
ভারতে চিতা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার অর্ধশতকেরও বেশি সময় পর আফ্রিকা থেকে চিতা আনা হচ্ছে দেশটিতে। খবর বিবিসির।
আফ্রিকা থেকে ভারতের এক জাতীয় উদ্যানে চিতাগুলো অবমুক্ত করা হবে। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বৃহদাকার কোনো মাংসাশী প্রাণীকে এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে নিয়ে অবমুক্ত করা হবে।
কোথা থেকে আনা হবে চিতাগুলোকে?
দক্ষিণ আফ্রিকা ও নামিবিয়া থেকে অন্তত ১৬টি চিতা ভারতে নেওয়া হবে। এই দেশ দুটি ও বোতসোয়ানাতেই বিশ্বের মোট চিতার অর্ধেকেরও বেশির বাস।
দক্ষিণ আফ্রিকায় মুক্তভাবে বনাঞ্চলে থাকে অল্প কিছু সংখ্যক চিতা, বেশ কিছু সংখ্যক চিতা থাকে দেশটির জাতীয় উদ্যানগুলোতে, আর বাকি অল্প কিছু থাকে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সংরক্ষিত রিজার্ভে।
ভারতে যে চিতাগুলো পাঠানো হবে এরমধ্যে বেশিরভাগই রিজার্ভ থেকে। দেশটির ৫০টির মতো রিজার্ভে ৫০০টির মতো প্রাপ্তবয়স্ক চিতা আছে।
হেলিকপ্টার থেকে ট্রাঙ্কুলাইজার ছুড়ে চিতাগুলোকে অজ্ঞান করা হয়। এরপর মাইক্রোচিপ ঢোকানো হয় শরীরে, সংক্রমণ ঠেকাতে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, রক্তের নমুনা দিয়ে তাদেরকে ক্রেনে করে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়।
এই চিতাগুলোর মধ্যে ছয়টির বেশি নারী চিতা, প্রজনন উপযুক্ত বয়সী তারা।
বেশ কিছু শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে, র্যাবিসসহ ৬টি রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। কোয়ারেন্টিনে তাদের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে।
কতোটা চ্যালেঞ্জিং হবে দীর্ঘ এ যাত্রা?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের কাছাকাছি সংস্পর্শ ও ক্রেনে আবদ্ধ অবস্থায় স্ট্রেসে আক্রান্ত হয় চিতারা, তাই এ যাত্রা বেশ কঠিনই হতে পারে।
কারগো প্লেনে করে জোহানেসবার্গ থেক দিল্লি পর্যন্ত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে তাদের। মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যান হবে তাদের নতুন আবাসস্থল।
ট্রাঙ্কুলাইজার দিয়ে চিতাগুলোকে লোহার ক্রেইনে রাখা হবে, থাকবে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও পশু চিকিৎসক।
ক্রেনে ওঠানোর পর অ্যানেস্থেশিয়ার প্রভাব দূর করতে অ্যান্টিডোট দেওয়া হবে, তবে সেই সাথে জাগ্রত অবস্থাতেই যেন তারা শান্ত থাকে সেজন্য মৃদু ট্রাঙ্কুলাইজার দেওয়া হবে।
যাত্রাপথে কি চিতাগুলোকে খাওয়ানো হবে?
না। সাধারণত চিতাগুলো প্রতি তিন দিনে একবার ১৫ কেজি করে মাংস খায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় চিতাদের সাধারণ 'কমন ওয়ার্থগস' খাওয়ানো হয়। যদিও তাদে পছন্দ মাঝারি আকারের অ্যান্টেলপস।
দীর্ঘ যাত্রার আগে চিতাকে খাওয়ালে তা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। একারণে যাত্রা শুরু দুদিন আগে থেকে তাদের খাবার দেওয়া হবে না।
ভারত পৌঁছানোর পর কী করবে চিতাগুলো?
প্রথমে অন্তত এক মাস চিতাগুলোকে বেড়া দেওয়া ক্যাম্পে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। বিড়াল প্রজাতির সব প্রাণীর নিজস্ব আবাসে ফিরে যাওয়ার চেষ্টার প্রবণতা থাকেই, একারণে তাদের ১/২ মাস এভাবে কিছুটা আবদ্ধ জায়গায় রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এরপর, চিতাগুলোকে ১১৫,০০০ হেক্টরের জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করে দেওয়া হবে।
কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে চিতাগুলো?
যে উদ্যানে অবমুক্ত করা হবে সেখানে লেপার্ড আছে। লেপার্ড চিতাশাবককে আক্রমণ করে মেরে ফেলতে পারে।
তবে চিতা সাধারণ সংঘাত এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে, তবে প্রতিপক্ষের আক্রমণের লক্ষ্যস্তুও হয়।
এই চিতাগুলো তাদের আগের বাসস্থানে সিংহ, লেপার্ড, হায়েনা ও বন্যকুকুরের সাথে এক অঞ্চলে থেকেছে। ভারতের কুনোতে শ্লথ ভালুক, স্ট্রাইপড হায়েনা ও নেকড়ের সাথে তাদের প্রথম দেখা হতে পারে।
ভারতে তাদের প্রধান শিকার হবে বড় হরিণ, ইন্ডিয়ান গ্যাজেল ও ফুল-হর্নড অ্যান্টেলপ।
কুনোর মতো কোনো বেড়াহীন রিজার্ভে চিতাগুলো ছড়িয়ে পড়ে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কাও আছে। তবে স্যাটেলাইট আর ভিএইচএফ ট্র্যাকিং কলারের মাধ্যমে এ বিষয়টি নজরদারি করা হবে।
বন্যপ্রাণীর পুনর্বাসনে সবসময়ই ঝুঁকি থাকে। পরিচিত পরিবেশ থেকে নতুন বাসস্থানে গিয়ে স্থির হতে অনেক সময় লাগে। এমনিতেও পুনর্বাসনের পর অন্যান্য মাংসাশী প্রাণীর মধ্যে চিতার টিকে থাকার হার কম।
নতুন চিতা এনে এদের জনসংখ্যার ব্যাপারে করবে ভারত?
ভারতীয় অনেক সংরক্ষণবাদী এ ব্যাপারটি নিয়ে সন্দিহান। তারা বলছেন, ভারতে আগে চিতার যে আবাসস্থল ছিল, মানুষের ভূমি দখলের কারণে তা কমে গেছে।
অনেকে বলছেন, কুনো উদ্যানে পর্যাপ্ত জায়গা, শিকার করার মতো প্রাণী ও মানুষের চাপ না থাকায় সেখানে চিতার বেঁচে থাকা সহজ হবে।
উদ্যানটিতে চিতার জনসংখ্যা ২০-এর মধ্যে রাখার পরিকল্পনা ভারতের।
পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে দেশটির ৬টি রিজার্ভ ও উদ্যানে ৫০-৬০টি চিতা আমদানি করে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করছে ভারত।