আর্কটিক সম্পদের অধিকার নিয়ে জমে উঠতে পারে নতুন স্নায়ুযুদ্ধ
নয়া-স্নায়ুযুদ্ধের দুটি পক্ষ হতে পারে পশ্চিমা বিশ্ব ও রাশিয়া-চীন অক্ষ। আর এ যুদ্ধের সবচেয়ে শীতল কেন্দ্রটি আর্কটিক বা উত্তর মেরু ঘিরে। ভূ-কৌশলগত প্রতিযোগিতার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে ক্রমশ আবির্ভূত হচ্ছে আর্কটিক।
গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের আগে চীন ও রাশিয়া একটি যৌথ বিবৃতি প্রদান করেছে। সেখানে দেশ দুটি আর্কটিক অঞ্চলে উন্নয়ন জোরদারকরণের বিষয়ে অঙ্গীকারের কথা জানান দিয়েছে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে এ অঞ্চল এখন দ্রুতই নতুন অর্থনৈতিক শোষণক্ষেত্র হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে। চীন-রাশিয়ার আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে 'আর্কটিক রুটের উন্নয়ন ও ব্যবহার'।
রাশিয়ার সঙ্গে উত্তর মেরু উপকূলের অর্ধেকের বেশি সংযোগ রয়েছে। গত কয়েকবছর ধরে দেশটি এ অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতিও বাড়িয়েছে। আর্কটিকের তেল, গ্যাস, ও বিরল খনিজপদার্থগুলোকে ভবিষ্যতের আয়ের উৎস হিসেবে দেখে রাশিয়া।
তবে আর্কটিক থেকে আয় করার জন্য চীনের আর্থিক সহায়তার দরকার রাশিয়ার। আর চীন এ অঞ্চলকে 'নতুন কৌশলগত ফ্রন্টিয়ার' হিসেবে অভিহিত করছে। আর্কটিককে ইউরোপমুখী 'পোলার সিল্ক রুট' হিসেবেও দেখে শি জিনপিংয়ের দেশ।
দুই অক্ষশক্তির এসব কর্মকাণ্ডে সাড়া দিচ্ছে পশ্চিমও। ন্যাটো'র মহাসচিব জেনারেল জেন্স স্টলটেনবার্গ গত মাসের শেষের দিকে কানাডার উত্তরাঞ্চল (হাই নর্থ) ভ্রমণ করেছেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া-চীন জুটির আর্কটিক নিয়ে পদক্ষেপ ন্যাটোজোটের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।
ফিনল্যান্ড ও সুইডেন বর্তমানে ন্যাটোতে যোগদানের আবেদন করেছে। এ দুটি দেশ নিয়ে ন্যাটোর সঙ্গে রয়েছে আর্কটিক অঞ্চলের আটটি দেশের মধ্যে সাতটি। পাশাপাশি আর্কটিক অঞ্চলে অধিকতর মনোযোগ দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একজন অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জের পরিকল্পনা করছে।
এর আগে বছরের শুরুতে ডেনমার্ক আর্কটিক অঞ্চলে চীন ও রাশিয়ার গোয়েন্দা ও প্রভাববিস্তারী কার্যক্রম বিষয়ে মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে। গ্রিনল্যান্ডের মালিক হওয়ায় ডেনমার্ক একটি শক্তিশালী আর্কটিক রাষ্ট্র। ডেনমার্ক সেখানে সামরিক সম্পদ বাড়াচ্ছে, আর সেটার প্রতিবাদ জানাচ্ছে গ্রিনল্যান্ড।
চীন ও রাশিয়ার আর্কটিকে প্রবেশের এ চেষ্টার বিপরীতে পশ্চিমাশক্তি কীভাবে এগোবে তা দেখার জন্য আপাতত অপেক্ষা করতে হবে। বাইডেন প্রশাসন আর্কটিকে খননকাজ শুরু করেছে। অনেক ইউরোপীয় দেশ নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর আলোকপাত করছে। তাই এখনো এটা স্পষ্ট নয়, গণতান্ত্রিক এ দেশগুলো আর্কটিক অঞ্চলে কী ধরনের অর্থনৈতিক সুবিধা খুঁজবে।
অন্যদিকে, আর্কটিক নিয়ে চীনের পরিকল্পনা স্পষ্ট।
আর্কটিকের বরফ গলার মাত্রার ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের মধ্য দিয়ে ইউরোপে একটি জাহাজ চলাচলের পথ তৈরি হতে পারে। এর ফলে অনেকগুলো বিকল্প নৌপথ এড়িয়ে যেতে পারবে চীন।
গত মাসে স্টলটেনবার্গ বলেছেন, হাই নর্থ অঞ্চলে এনার্জি, অবকাঠামো, ও গবেষণা পরিকল্পনায় চীন কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে।
শিল্পায়নের ভ্যালু-চেইনে চীনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ও অগ্রসরমান প্রযুক্তির বিকাশের জন্য শি জিনপিংয়ের যে প্রচেষ্টা, তার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে আর্কটিক, অ্যান্টার্কটিক, গভীরসমুদ্র, ও মহাশূন্যে বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনা।
তবে আর্কটিকের কঠোর পরিবেশ চীনের গবেষক ও প্রকৌশলীদের কাজকে আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে।
আর্কটিক অ্যাম্বাসেডরের পদ চালু হওয়ার পর হয়তো আর্কটিক নিয়ে সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ ও প্রকাশ করবে ওয়াশিংটন।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ