লিজ ট্রাসের পর কে হতে পারেন পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী?
লিজ ট্রাসের পদত্যাগ ঘোষণার পর ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তাই নিয়ে চলছে জোর আলোচনা।
আগামী সপ্তাহের শেষ নাগাদ নতুন নেতৃত্ব বাছাই নির্বাচন শেষে জানা যাবে ফলাফল।
ব্যালটে অংশ নেওয়ার জন্য ৩৫৭ জন টোরি এমপির কাছ থেকে প্রার্থীদের কমপক্ষে ১০০টি মনোনয়নের প্রয়োজন হবে, যার অর্থ তিনজনের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে দাঁড়াতে পারবেন না।
সাধারণত শেষ ধাপে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকেন যাদের মধ্যে দলের সদস্যদের ভোটাভুটির মাধ্যমে একজন নির্বাচিত হন। তবে টোরি এমপিদের ভোটে একজনই শর্ত পূরণ করলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনিই হবেন পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
প্রার্থী পদে কারা থাকছেন তা এখনও নিশ্চিত না হলেও বিবিসি থেকে সম্ভাব্য যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা দেখে নেওয়া যাক।
ঋষি সুনাক
বরিস জনসনকে হটিয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক। কনজারভেটিভ এমপিদের থেকে সর্বোচ্চ সমর্থন পেয়ে ট্রাসের সঙ্গে চূড়ান্ত দুই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচিত হন।
প্রচারণার সময় তিনি সতর্ক করেন, ট্রাসের ট্যাক্স পরিকল্পনা অর্থনীতির ক্ষতি করবে। কিন্তু দলের সদস্যদের কাছে তিনি গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি এবং শেষ পর্যন্ত ২১ হাজার ভোটে হেরে যান।
২০১৫ সালে রিচমন্ডের নর্থ ইয়র্কশায়ার থেকে এমপি নির্বাচিত হন ঋষি সু্নাক। ওয়েস্টমিনস্টারের বাইরে খুব কম মানুষই তাঁর কথা জানতেন। কিন্তু ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্বল্পসময়েই সুনাক চ্যান্সেলর অব দ্য এক্সচেকার হন।
লকডাউন চলাকালে অর্থনীতি সচল রাখার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে তাঁকে করোনভাইরাস মহামারির সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল।
কম ট্যাক্স ও কম ব্যয়ের পক্ষপাতী ঋষি সুনাকের জন্য বিষয়টি কঠিন হলেও রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।
তবে স্ত্রীর ট্যাক্স কাণ্ড নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন সুনাক। এর কিছুদিন পরেই লকডাউন বিধি লঙ্ঘনের জন্য জরিমানাও দেন।
কনজারভেটিভ এমপি অ্যাঞ্জেলা রিচার্ডসন ইতোমধ্যেই ঋষি সুনাকের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন: 'শুরু থেকেই ঋষি সুনাকের প্রতি নেতৃত্ব সমর্থন জানিয়ে আসছি। এখনও আমার কাছে তাঁকেই উপযুক্ত মনে হচ্ছে।গত ছয় সপ্তাহে সেটা আরও পরিষ্কার হয়েছে'।
পেনি মর্ডান্ট
চলতি সপ্তাহের শুরুতেই পার্লামেন্টে লিজ ট্রাসের পক্ষে কথা বলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হন পেনি মর্ডান্ট। ডিসপ্যাচ বক্সে তাঁর আত্মবিশ্বাসী পারফরম্যান্স মর্ডান্টের নেতৃত্ব গুণকেই আবারও সামনে এনেছে।
গতবার তিনি প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ালেও টোরি এমপিদের থেকে জোরালো সমর্থন না পাওয়ায় ট্রাস ও সুনাকের থেকে ছিটকে যান।
ট্রাসকে সমর্থন করে মর্ডান্ট হাউজ অব কমন্সের লিডার এবং নতুন রাজার অ্যাকসেসন কাউন্সিলের সভাপতিত্ব করতে প্রিভি কাউন্সিলের লর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত হন।
২০১৯ সালে মর্ডান্ট যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী ডিফেন্স সেক্রেটারি হয়ে ইতিহাস তৈরি করেন। এর আগে ডেভিড ক্যামেরনের অধীনেও তিনি সশস্ত্র বাহিনীর মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মর্ডান্টকে সমর্থন দেওয়া এমপিদের মধ্যে রয়েছেন জন ল্যামন্ট, মারিয়া মিলার, বব সিলি এবং ড্যামিয়ান কলিন্স।
বরিস জনসন
মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগ পর্যন্ত যিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সেই বরিস জনসনের নামও আবার শোনা যাচ্ছে।
মন্ত্রী ও এমপিদের বিরোধিতার মুখে গত জুলাইয়ে বরিস জনসন পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য হন। ডাউনিং স্ট্রিটে লকডাউন পার্টি আয়োজন থেকে শুরু করে ক্রিস পিঞ্চারের বিরুদ্ধে অশোভন আচরণের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে ডেপুটি চিফ হুইপ হিসেবে নিয়োগ করার মতো একের পর এক বিতর্কের মুখে শেষ পর্যন্ত বরিস সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন।
আক্সব্রিজের এই এমপি প্রিভিলেজ কমিটির তদন্তের মুখোমুখি হন এবং লকডাউন বিধি লঙ্ঘনের জন্য জরিমানা দেন।
তবে পার্লামেন্টে এখনও তাঁর পুরোনো মিত্ররা রয়েছেন। নাডাইন ডরিসের মতে বরিসেরই ফেরা উচিত কেননা ২০১৯ সালে জনগণই তাঁকে নির্বাচিত করে।
অন্যান্য এমপিদের মধ্যে পল ব্রিস্টো, ব্রেন্ডন ক্লার্ক-স্মিথ, আন্দ্রেয়া জেনকিন্স এবং মাইকেল ফ্যাব্রিক্যান্ট বরিসকে সমর্থন করছেন।
বেন ওয়ালেস
টোরি এমপিদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও ডিফেন্স সেক্রেটারি বেন ওয়ালেসের ওপর তাদের অধিকাংশই ভরসা রাখেন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর দ্রুততার সঙ্গে কিয়েভকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়ে ওয়ালেস মনোযোগ আকর্ষণ করেন।
ব্রেক্সিট বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও ওয়ালেস বরিস জনসনের একজন প্রধান সমর্থক ছিলেন এবং ২০১৯ সালে মন্ত্রিসভায় জায়গা পান।
রাজনীতিবিদ হওয়ার আগে তিনি জার্মানি, সাইপ্রাস, বেলিজ এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে সেনা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেসময় তিনি বীরত্বের সঙ্গে ব্রিটিশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে আইআরএ-র বোমা হামলার চেষ্টা বানচাল করেন।
কেমি ব্যাডেনক
সাম্প্রতিক লড়াইয়ে সবচেয়ে বিস্ময়করভাবে আবির্ভূত প্রার্থী হলেন কেমি ব্যাডেনক। জিততে না পারলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিয়ে নিজের প্রোফাইল সমৃদ্ধ করেছেন ব্যাডেনক।
অপেক্ষাকৃত জুনিয়র মন্ত্রী হলেও তিনি সিনিয়র কনজারভেটিভ মাইকেল গভের সমর্থন লাভ করেন। তথাকথিত পশ্চিমা 'বর্ণবাদ বিরোধী' সংস্কৃতিরও অন্যতম সমালোচক তিনি।
দক্ষিণ লন্ডনের উইম্বলডনে বেড়ে ওঠা কেমি ব্যাডেনক যুক্তরাষ্ট্র ও নাইজেরিয়ায় বেড়ে ওঠেন যেখানে তাঁর মা মনোবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যাপনা করতেন।
পার্লামেন্টে আসার আগে ব্যাডেনক বেসরকারি ব্যাংক এবং স্পেক্টেটর ম্যাগাজিনে কাজ করেছেন।
এখন পর্যন্ত পার্লামেন্টে তাঁর সর্বোচ্চ দায়িত্ব ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগে নেতৃত্ব প্রদান।
সুয়েলা ব্রেভারম্যান
সাবেক এই হোম সেক্রেটারির পদত্যাগ লিজ ট্রাসের ওপর বড় চাপ সৃষ্টি করে এবং ২৪ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে ট্রাস প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তথ্য নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্রেভারম্যান পদত্যাগ করলেও তাঁর পদত্যাগ পত্রে অভিবাসন নীতি নিয়ে ক্ষোভ থাকার ইঙ্গিত মিলে।
অভিবাসীদের রুয়ান্ডায় পাঠানো তাঁর 'স্বপ্ন' উল্লেখ করে সমাজকর্মীদের সমালোচনাও করেন তিনি।
ব্রেক্সিট সমর্থনকারী সাবেক এই ব্যারিস্টার বরিস জনসনের সরকারে অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন।
১৯৬০-এর দশকে সুয়েলার বাবা-মা কেনিয়া ও মরিশাস থেকে যুক্তরাজ্যে আসেন। দুজনেই স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। দীর্ঘ ১৬ বছর কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁর মা।
ব্রেভারম্যান ছিলেন মাতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়া প্রথম ক্যাবিনেট মন্ত্রী। এরপরই আইন পরিবর্তন করে ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির বিধান ঘোষিত হয়।