ভারত থেকে আমদানি বাড়াতে আগ্রহী রাশিয়া, পাঠালো ৫০০ পণ্যের তালিকা
বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহী রাশিয়া সম্প্রতি আমদানির লক্ষ্যে ভারতে ৫০০ পণ্যের একটি তালিকা পাঠিয়েছে। এর মধ্যে গাড়ি, বিমান এবং ট্রেনের যন্ত্রাংশের মতো পণ্যও রয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চারটি সূত্র থেকে এই খবর মিলেছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষিতে রাশিয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। এমন পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লির দিকে বাণিজ্যের জন্য হাত বাড়াচ্ছে মস্কো।
তবে, উক্ত তালিকাটিকে 'প্রাথমিক' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া, ভারত থেকে মোট কতগুলো পণ্য রপ্তানি করা হবে, এবং ঠিক কী পরিমাণে রপ্তানি করা হবে তা এখনো স্পষ্ট করা হয়নি।
তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এক সূত্রের ভাষ্যমতে, রাশিয়ার এমন পদক্ষেপ বেশ অভিনব একটি বিষয়।
ভারত আপাতত যে কোনো পন্থায় এই বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহী। এর অন্যতম কারণ হলো, দুই দেশের মধ্যে বাড়তে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি। রাশিয়া থেকে যত পণ্য ভারত আনে, তার তুলনায় ভারত থেকে রাশিয়ায় কম পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি-২০ নভেম্বর সময়ের তুলনায় এ বছর একই সময়ে রাশিয়া থেকে ভারতের আমদানি পাঁচ গুণ বেড়ে ২৯ বিলিয়ন ডলারে যেয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর এই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ৬ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে একই সময়ে ভারত থেকে রাশিয়ার রপ্তানি গত বছরের ১.৯ বিলিয়ন ডলার থেকে নেমে ২.৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
ভারতের সরকারি সূত্র অনুসারে, রাশিয়ার এ পণ্য তালিকার প্রেক্ষিতে আগামী মাসগুলোতে রপ্তানি আয় ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার আশা করছে ভারত।
যদিও বিশেষজ্ঞরা এই সুযোগ নিয়ে একটি আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন। তাদের মতে রাশিয়ার সঙ্গে বেশি বেশি বাণিজ্য করতে গেলে, বিষয়টি পশ্চিমা বিশ্ব ভাল চোখে না-ও দেখতে পারে। সেক্ষেত্রে এক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে গিয়ে বাকি দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে।
মস্কোর একটি বাণিজ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, রাশিয়ার শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বড় বড় সংস্থাগুলোকে তাদের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও সরঞ্জাম সরবরাহ করতে অনুরোধ করেছে।
তবে, রাশিয়ার শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভারতের পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আপাতত এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
এর আগে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য প্রকাশ্যে মস্কোর সমালোচনা করেছেন। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর মতো তাদের সঙ্গে রাশিয়ার আর্থিক বয়কটে যোগ দেননি।
তাছাড়া, বিশ্ববাজারে তেলের ঘাটতির কারণে ক্রুড অয়েলের দাম যখন বেড়ে যায়, তখন সস্তায় রাশিয়া থেকে বিপুল হারে তেল আমদানি করেছে ভারত।
ভারতের পররাষ্টমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর গত ৭ নভেম্বর মস্কো সফরে যান। তার কয়েক সপ্তাহ আগেই রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই বিশেষ অনুরোধ করা হয়।
তবে, জয়শঙ্করের সেই বিদেশ সফরের সময় নয়াদিল্লি রাশিয়াকে ঠিক কী জানিয়েছিল তা এখনও স্পষ্ট করা হয়নি।
উল্লেখ্য, মস্কো সফরের সময় এস জয়শঙ্কর বলেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে আপাতত রাশিয়ায় রপ্তানি বাড়ানো প্রয়োজন ভারতের।
তার সেই বিদেশ সফরে কৃষি, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস, বন্দর ও নৌপরিবহন, অর্থ, রাসায়নিক ও সার এবং বাণিজ্যের দায়িত্বে থাকা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও গিয়েছিলেন। ফলে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কের গুরুত্ব তা থেকে বেশ স্পষ্ট।
রাশিয়ায় বর্তমানে এয়ারলাইন্স ক্ষেত্রে চাপ রয়েছে। তাদের প্রায় সব বিমানই অন্য দেশ থেকে কেনা। ফলে এই বয়কটের জেরে তাদের যন্ত্রাংশের তীব্র ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
বিমান এবং হেলিকপ্টারের জন্য রাশিয়া ল্যান্ডিং গিয়ার, ফুয়েল সিস্টেম, কমিউনিকেশন সিস্টেম, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা, লাইফ জ্যাকেট এবং বিমানের টায়ার-সহ মোট ৪১টি পণ্যের অনুরোধ করেছে।
তাছাড়া, বেশিরভাগ বিদেশি গাড়ি নির্মাতাই রাশিয়ার বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় গাড়ির যন্ত্রাংশের চাহিদাও তুঙ্গে।
রাশিয়ার পাঠানো আলোচ্য তালিকাটি প্রায় ১৪ পৃষ্ঠা লম্বা। তাতে পিস্টন, তেলের পাম্প এবং ইগনিশন কয়েলের মতো গাড়ির ইঞ্জিনের অংশের উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও বাম্পার, সিটবেল্ট এবং ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেমের চাহিদা রয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই তালিকায় কাগজ, কাগজের ব্যাগ এবং প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়াল, সুতা-সহ টেক্সটাইল উৎপাদন করার উপকরণ এবং সরঞ্জামের কথাও উল্লেখ করেছে রাশিয়া।
তাছাড়া রাশিয়া গত কয়েক দশক ধরেই ভারতের সামরিক সরঞ্জামের বৃহত্তম সরবরাহকারী। এটি ভারতীয় ওষুধ পণ্যেরও চতুর্থ বৃহত্তম বাজার।
রুশ তেলের আমদানি বৃদ্ধি এবং কয়লা ও সারের আমদানি বাড়ায় আপাতত ভারত বাণিজ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার উপায় খুঁজছে। এমন প্রেক্ষিতে মস্কোর এই ১৪ পাতার চিঠি নিয়ে মোদী সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা-ই দেখার বিষয়।