২০৭৫ সাল নাগাদ বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিগুলোর একটি হবে পাকিস্তানের: গোল্ডম্যান স্যাকস
'কার্যকর নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সহায়ক নীতি' থাকলে বদলে যাবে আজকের অর্থনৈতিক সংকটের শিকার পাকিস্তানের ভাগ্য। এর মাধ্যমে, ২০২৩ সালে দক্ষিণ এশীয় দেশটি বিশ্বের ৬ষ্ঠ বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারবে বলে প্রক্ষেপণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক বিশ্বের শীর্ষ সারির বিনিয়োগ ব্যাংক- গোল্ডম্যান স্যাকস। খবর দ্য ডনের
গত মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত স্যাকসের এক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়।
'দ্য পাথ টু ২০৭৫' শীর্ষক প্রতিবেদনটির লেখক হলেন অর্থনীতিবিদ কেভিন ডেলি এবং টেডাস গেডমিনাস। এর পূর্বাভাস অনুসারে, ২০৭৫ সালে বিশ্বের শীর্ষ ৫ অর্থনীতি হবে– চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া ও নাইজেরিয়া। অনুকূল নীতি ও কার্যকর সরকারি সংস্থা থাকলে তারপরের স্থানটি লাভ করবে পাকিস্তান।
প্রায় দুই দশক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণমূলক পূর্বাভাস প্রকাশ করে আসছে গোল্ডম্যান স্যাকস। প্রাথমিকভাবে তারা ব্রিকস জোটভুক্ত দেশগুলোর আভাস দিত, পরে ধীরে ধীরে তার আওতায় আনা হয় উদীয়মান ও উন্নত অর্থনীতিগুলোকে।
সংস্থাটির সাম্প্রতিকতম দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস পাকিস্তানসহ ১০৪টি দেশের অর্থনীতির ২০৭৫ সাল পর্যন্ত পরিস্থিতি প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।
পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উজ্জ্বলতা অনুমান করা হয়েছে দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে। একারণে, মিশর ও নাইজেরিয়াও আগামী ৫০ বছরে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিগুলোর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বলে মনে করছেন গোল্ডম্যানের বিশেষজ্ঞরা।
বিনিয়োগ ব্যাংকটির গবেষণায় প্রক্ষেপণ করা হয়েছে যে, ওই সময়ে পাকিস্তানের প্রকৃত জিডিপি হতে পারে ১২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। আর মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াবে ২৭ হাজার ১০০ ডলার।
তবে চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় মাথাপিছু জিডিপি এক-তৃতীয়াংশের কম হবে। ২০৭৫ সাল নাগাদ ভারতের প্রকৃত জিডিপি ৫২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার হওয়ার অনুমান করা হয়েছে। আর মাথাপিছু জিডিপি হবে ৩১ হাজার ৩০০ ডলার।
অবশ্য এ পূর্বাভাসের ব্যতিক্রম হতে পারে বেশকিছু ঝুঁকির কারণে। সবচেয়ে বড় বিপদের সূচনা করতে পারে 'পরিবেশ বিপর্যয়' এবং 'লোকরঞ্জনবাদী জাতীয়তাবাদ' (পপুলিস্ট ন্যাশনালিজম)।
গোল্ডম্যান জানিয়েছে, বিশ্ব সম্প্রদায়ের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন এই পূর্বাভাস বাস্তব রূপ নেওয়াকে গভীরভাবে ব্যাহত করছে। বিশেষত, পাকিস্তানের মতো ঝুঁকিপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থানের দেশগুলোর ক্ষেত্রে তা হবে মারাত্মক।
এদিকে বিশ্বের অনেক দেশেই ক্ষমতায় আসছে লোকরঞ্জনবাদী জাতীয়তাবাদীরা। এতে সুরক্ষাবাদী নীতি (বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা, স্থানীয় শিল্পকে অধিকা সুরক্ষা দানসহ অন্যান্য বিষয়) সম্প্রসারণ ঘটবে, আর তাতে অর্থনীতির বৈশ্বিক রূপ উল্টোমুখী ধারার শিকার হবে বলে জানায় গোল্ডম্যান। এতে করে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে আয় বৈষম্যও প্রকট হতে পারে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাভাস
পতনের পথে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি
গোল্ডম্যানের গবেষণাপত্র অনুসারে, গত ১০ বছরে গড় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩.৬ শতাংশ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৩.২ শতাংশে। এই গতি হারানোর ঘটনা ছিল বিস্তৃত, বা বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রেই তা ঘটেছে বলা যেতে পারে।
এই বাস্তবতায়, ২০২৪ সালে গড় বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ২.৮ শতাংশ হওয়ার প্রক্ষেপণ করেছে ব্যাংকটি। আর ২০২৯ সাল থেকে এটি আরও পতনের দিকে যাবে।
উদীয়মান বাজার অর্থনীতির উত্থান
বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমতে থাকলেও, উন্নত দেশের তুলনায় দ্রুত গতিতে বিকশিত হচ্ছে উদীয়মান অর্থনীতিগুলো। ধীরে ধীরে তারা উন্নত অর্থনীতিগুলোর আরও কাছাকাছি অবস্থানে চলে আসবে।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, "বৈশ্বিক জিডিপির ভার আরও বেশি করে এশিয়ার দিকে ঝুঁকে যাবে। বিশেষত আগামী ৩০ বছরে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির কাতারে উঠে আসবে, আর ইতোমধ্যেই উন্নত দেশের মধ্যে এই অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিরও থাকবে। নাইজেরিয়া, পাকিস্তানের ও মিশরেরও বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে"।