পাকিস্তানে গমের জন্য হাহাকার! ভর্তুকির ময়দা কিনতে গিয়ে পদদলিত মানুষ
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তানে গম সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সর্বশেষ মৌসুমে কম উৎপাদন এবং সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতির কারণে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় গমের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে দেশটিতে। খবর ডনের।
আর্থিক সংকটে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তানে খাবারের সংকট এখন তুঙ্গে। দেশের খাইবার পাখতুনখোয়া, সিন্ধু এবং বেলুচিস্তান প্রদেশে চলছে গমের জন্য তীব্র হাহাকার। এমনকি বিভিন্ন স্থানে ভর্তুকির আটা/ময়দার জন্য মারামারি, লুটপাট হচ্ছে বলেও খবর গণমাধ্যমের।
ডনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেলুচিস্তানে গম সংকট তীব্র আকার ধারণ করায় শনিবার (৭ জানুয়ারি) প্রদেশের খাদ্য মন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জরুরি সহায়তার জন্য আর্জি জানিয়েছেন। দেশের অন্যান্য প্রদেশের অবস্থাও প্রায় একইরকম।
সম্প্রতি সিন্ধুর মিরপুরখাস জেলায় কম দামে ভর্তুকির ময়দা কিনতে গিয়ে এক ব্যক্তির পদদলিত হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানে এখন ভর্তুকির ময়দার বস্তা নিয়ে চলছে কাড়াকাড়ি। যে যে রকম পারছেন, লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন। সারি সারি মানুষ হামলে পড়ছেন ময়দার জন্য। আর তাতেই পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, পাঞ্জাব এবং সিন্ধু প্রদেশ থেকে অন্যান্য জায়গায় গম সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়া। বিশেষ করে পাঞ্জাবকে এই সংকটের জন্য দায়ী করছে অন্যান্য প্রদেশের সরকার। তাদের অভিযোগ, পাকিস্তানের মোট গমের প্রায় ৭০ ভাগই উৎপাদিত হয় পাঞ্জাবে; অথচ তারা নিজেদের খাদ্য সরবরাহ ঠিক রাখতে অন্যদের কাছে সরবরাহ কমিয়ে বা বন্ধ করে দিয়েছে। ফেডারেল সরকারও এই সংকটের জন্য প্রদেশ সরকারগুলোকে, বিশেষ করে পাঞ্জাবকে দায়ী করছে।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে করাচিতে এক কেজি ময়দা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ রুপিতে। ইসলামাবাদ এবং পেশোয়ারে ১০ কেজি ময়দার বস্তা বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার রুপিতে। একদিকে ময়দার আকাল, অন্য দিকে আকাশছোঁয়া দামে দিশাহারা হয়ে ভর্তুকির ময়দা পাওয়ার জন্য মারামারি করছে পাকিস্তানের মানুষ। গত দুই সপ্তাহে ১৫ কেজি ময়দার দাম ৩০০ রুপি বেড়েছে বলে অ্যারি নিউজের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
বেলুচিস্তানের খাদ্যমন্ত্রী জামারাক আচাকজাই ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই সংকট আগামী দিনে আরও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে। তার দাবি, অনেক এলাকায় গমের মজুদ ফুরিয়ে গেছে।
চলমান সংকট মোকাবেলায় রাশিয়া থেকে ইতোমধ্যে দুই জাহাজ এসে পৌঁছেছে পাকিস্তানে। সে দেশের খাদ্যমন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই গদর বন্দরে সাড়ে ৪ লাখ টন গম পাঠাবে রাশিয়া। এতে দেশটির গম সংকট সাময়িকভাবে কিছুটা কমে আসতে পারে।