নেপালে বিমান দুর্ঘটনা: জীবিত কাউকে উদ্ধারের সম্ভাবনা নেই, জানালো পুলিশ
রোববার (১৫ জানুয়ারি) সকালে ৭২ জন যাত্রী নিয়ে কাঠমান্ডু থেকে পোখারা যাওয়ার পথে বিধ্বস্ত হয় নেপালের ইয়েতি এয়ারলাইন্সের একটি বিমান। এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনাস্থল থেকে ৬৮টি মৃতদেহ উদ্ধার করা গিয়েছে।
নেপালের পুলিশ প্রশাসন বলছে, দেশটির স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ এই বিমান দুর্ঘটনায় জীবিত কাউকে উদ্ধারের আশা ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে।
মুখপাত্র টেক প্রসাদ রাই বিবিসিকে বলেন, "কারও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।"
কী কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হলো তা এখনও স্পষ্ট নয়। নিখোঁজ চারজনের জন্য আজ উদ্ধারকারীরা আবারও অনুসন্ধান শুরু করেছে।
তবে বিমানটির ককপিট ভয়েস রেকর্ডার এবং ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার উভয়ই খুঁজে পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের কর্মকর্তা টেকনাথ সিতৌলা বলেছেন, ব্ল্যাক বক্সগুলো ভাল অবস্থায় রয়েছে। বাইরে থেকে সেগুলো অক্ষত রয়েছে।
কাঠমান্ডু পোস্টের তথ্য থেকে জানা যায়, বিমানের মোট ৭২ আরোহীর মধ্যে দুই শিশু, চারজন ক্রু সদস্য, পাঁচজন ভারতীয়, চারজন রাশিয়ান, একজন আইরিশ, দুইজন দক্ষিণ কোরিয়ার, একজন অস্ট্রেলিয়ান, একজন ফরাসি এবং একজন আর্জেন্টিনার নাগরিক ছিলেন।
এদিকে সোমবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে নেপাল; দুর্ঘটনার তদন্তের জন্য একটি সরকারি প্যানেল গঠন করা হয়েছে।
নিহতদের মরদেহগুলো শনাক্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে স্থানীয় বাসিন্দা অরুণ তমু বলেন, বিমানের অর্ধেক পাহাড়ের ধারে এবং বাকি অর্ধেক গিয়ে পড়ে সেতি নদীর ঘাটে।
বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিমানটিতে আগুন ধরে যায়।
বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায়, স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে সেতি অঞ্চল থেকে বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বিমানটি। এর পরপরই এটি বিধ্বস্ত হয়। উড্ডয়নের (টেক-অফ) প্রায় ২০ মিনিটের মাথায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, বিমানটি তখন অবতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কাঠমান্ডু থেকে পোখারা, দুই শহরের মধ্যে ফ্লাইটের সময় দূরত্ব মাত্র ২৫ মিনিট।
এভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্কের তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালের মার্চে ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনার পর এটিই নেপালের সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী বিমান দুর্ঘটনা। ঢাকা থেকে উড়ে যাওয়া ফ্লাইটটি কাঠমান্ডুতে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়; সেই দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ৭১ জনের মধ্যে ৫১ জনই নিহত হয়েছিলেন।
২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত নেপালে বিমান বা হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ৩০৯ জন মারা গেছেন। হিমালয়ের দেশ নেপালে বিমান দুর্ঘটনার ঝুঁকি অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি; এখানে হঠাৎই আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।নিরাপত্তা উদ্বেগজনিত কারণ দেখিয়ে তাই, ২০১৩ সাল থেকে নেপালি এয়ারলাইন্সকে নিজেদের আকাশসীমায় নিষিদ্ধ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।