আমাজন কর্মীদের ধর্মঘটে দাবি; ‘রোবটদেরও কর্মীদের চেয়ে ভালোভাবে দেখা হয়’
যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো ধর্মঘট পালন করেছে আমেরিকান ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজনের কর্মীরা। বুধবার প্রায় ৩০০ কর্মী আমাজনের কভেন্ট্রি ওয়্যারহাউজ থেকে কাজ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন এবং বিক্ষোভ করেন।
জিএমবি ইউনিয়নের ভাষ্যে, কর্মীদের সর্বনিম্ন পারিশ্রমিক ঘণ্টায় মাত্র ১০.৫০ পাউন্ড করাকে তারা এক ধরনের 'বিদ্রুপ' মনে করছেন এবং এর প্রতিবাদেই তারা ধর্মঘট পালন করছেন।
আমাজনের কর্মীরা সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানান, কর্মক্ষেত্রে অত্যন্ত 'শোচনীয়' পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা। তাদের দাবি, প্রতিনিয়ত তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয় এবং মাত্র কয়েক মিনিট 'অলস সময়' কাটালেও তাদের ভৎর্সনা করা হয়।
কিন্তু আমাজনের দাবি, কর্মীদের ভালো পারফরম্যান্স নজরে রাখার জন্য তাদের একটি নিজস্ব প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্র বলেন, কর্মীরা যদি আশানুরূপ পারফরম্যান্স দেখাতে না পারেন, তাহলে তাদেরকে কোচিং এর মাধ্যমে আরও উন্নতি করতে সাহায্য করা হয়।
এদিকে আমাজনের দুই কর্মী, যারা জিএমনি ইউনিয়নেরও সদস্য; তাদের দাবি- প্রতিষ্ঠানে থাকা রোবটদের সাথেও তাদের চেয়ে ভালো আচরণ করা হয়!
ড্যারেন ওয়েস্টউড এবং গারফিল্ড হিলটন নামের দুই কর্মী সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এও জানিয়েছেন যে, কর্মীরা টয়লেটে যেতে হলেও তাদেরকে ম্যানেজারের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। হিলটন বলেন, "কাজ থামালেই তারা জানতে চায় কেন কাজ থামিয়েছি। তাই কয়েক মিনিট সময় পার হলেই তা তাদের সিস্টেমে ধরা পড়ে।"
জবাবদিহি করা
আমাজনের কর্মী হিলটন জানান তার ডায়াবেটিস রয়েছে এবং ভবনের ভেতরে সবসময় কাছাকাছি টয়লেট খুঁজে পাওয়া যায় না। টয়লেট খুঁজে বের করা এবং প্রাকৃতিক কাজ সেরে ফিরে আসতে প্রায় ১৫ মিনিট সময় লেগে যায়।
তখনই ম্যানেজাররা প্রশ্ন করতে শুরু করেন- "এতক্ষণ কোথায় ছিলেন? কি করছিলেন?
ম্যানেজাররা কর্মীদের পারফরম্যান্স নজরে রাখেন এবং পণ্য স্ক্যানিং এর কাজ বাদে যতটুকু সময়য় ব্যয় করেন তাও একত্রে হিসাব রাখা হয়। কভেন্ট্রি ওয়্যারহাউজে কর্মীরা তাদের স্টকে থাকা পণ্য স্ক্যান করেন, তারপর সেগুলো আমাজন ফুলফিলমেন্ট সেন্টারে পাঠানো হয় ভোক্তাদের দ্বারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
কিন্তু স্ক্যানিং এর কাজ বাদেও কখনো কখনো কর্মীদের প্যালেট সামলানোর কাজও দেওয়া হতে পারে। "কিন্তু প্যালেট বা বক্স নিয়ে সমস্যা হলে যখন কাজ করতে হয়, ওই সময়টুকু কাজের হিসাবে ধরা হয় না", বলেন ওয়েস্টউড।
"এই কাজগুলো করতে অন্তত ৩০ মিনিট সময় লেগে যায়। কিন্তু তখন ম্যানেজাররা নিচে এসে বলবে, "আজকে সারাদিনে আপনি ৩৪ মিনিট অলস সময় পার করেছেন, কী করছিলেন তখন?"
আমাজনের একজন মুখপাত্র বলেন, "একজন কর্মী যখন তার ওয়ার্ক স্টেশনে থাকেন এবং কাজে নামার জন্য লগ ইন করেন, তখন থেকে তার পারফরম্যান্স পরিমাপ করা হয়। যখন তিনি লগ আউট করেন- যা তিনি যেকোনো সময়ই করতে পারেন, তখন পারফরম্যান্স ম্যানেজমেন্ট টুলও কাজ করা থামিয়ে দেয়।"
কিন্তু ওয়েস্টউড ও হিলটনের দাবি, তিনি ও তার সহকর্মীরা জীবনযাপনের ব্যয় বহন করতে জন্য সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টা কাজ করেন। এমনকি হিলটন আরও জানান, আমাজনের ওয়্যারহাউজে যাওয়ার পথে ওই সংক্ষিপ্ত সময়টুকুতেও বাসের মধ্যে কর্মীদের ঘুমিয়ে পড়তে দেখেছেন। তার ভাষ্যে, "আমাজন চায় ওয়্যারহাউজে ঢোকার পর প্রতিটি মিনিটে কর্মীদের কাজ থেকে সর্বোচ্চ লাভ করতে।"
গত বছরের আগস্টে আমাজন যুক্তরাজ্যে তাদের কর্মীদের পারিশ্রমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মীরা তা দের বর্তমান আয় দিয়ে জীবনধারণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন।
২০১৫ সাল থেকে আমাজনে চাকরি করছেন বোগদান। তিনি বলেন, মহামারিতে কর্মীরা নিজেদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করলেও, এর বিনিময়ে তাদেরকে এত কম পারিশ্রমিকের প্রস্তাব দিয়ে রীতিমতো 'অপমান' করেছে আমাজন।
তিনি আরও বলেন, এই ধর্মঘটের একটি উদ্দেশ্য হলো সাধারণ জনগণকে বোঝানো যে তাদের প্রতিটি অর্ডারের আড়ালে আসলে কত সংগ্রাম লুকিয়ে আছে।
কিন্তু আমাজনের একজন মুখপাত্র বলেন, তারা তাদের কর্মীদের পারিশ্রমিক দেওয়ার নিয়ম নিয়ে গর্বিত। তিনি জানান, লন্ডন ও সাউথ ইস্টে ঘণ্টায় ১১.৪৫ পাউন্ড থেকে; আর যুক্তরাজ্যের বাকি অংশে ঘণ্টায় ১০.৫০ পাউন্ড থেকে কর্মীদের পারিশ্রমিক শুরু হয়েছে।
কিন্তু ইউনিয়নের সদস্যরা চান তাদের পারিশ্রমিক ঘণ্টায় ১৫ পাউন্ড হোক। জিএমবি ইউনিয়নের অর্গানাইজার আমান্ডা গিয়ারিং এর মতে, "বুধবারের ধর্মঘট কভেন্ট্রি ওয়্যারহাউজের কর্মকাণ্ডের ওপর বড় রকম প্রভাব ফেলবে।"