আলাস্কায় গাড়ির আকারের বস্তু বিধ্বস্ত করলো যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী, গত শুক্রবার আলাস্কার আকাশে থাকা একটি অজ্ঞাত বস্তুকে বিধ্বস্ত করেছে একটি মার্কিন এফ-২২ ফাইটার জেট। এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার কোনো বস্তু বিধ্বস্ত করলো যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে বেশ কয়েক দিন ধরে মার্কিন আকাশ চরে বেড়ায় একটি চীনা বেলুন, যেটিকে একটি স্পাই বেলুন হিসেবে সন্দেহ করা হয়েছিল।
পেন্টাগনের প্রধান মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার একটি বিবৃতিতে জানান, বস্তুটি বিধ্বস্ত করতে একটি সাইডউইন্ডার মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জন কিরবি জানান, "আমরা এটার মালিক সম্পর্কে জানতে পারিনি।" এছাড়াও এর উৎপত্তি কোথা থেকে সেটাও জানা যায়নি।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বস্তুটিকে বিধ্বস্ত করার নির্দেশ দেন, পরে যেটিকে হোয়াইট হাউজ থেকে ঘোষণা করা হয়।
ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখে, একটি মার্কিন এফ-২২ ফাইটার দক্ষিণ ক্যারোলিনার উপকূলের কাছে চীনা বেলুনটিকে মিসাইল ছুঁড়ে ধ্বংস করে। মার্কিন সরকার একে চীনাদের স্পাই বেলুন হিসেবে দাবি করার পর চীনা সরকার একে বেসামরিক গবেষণা কাজে ব্যবহৃত বেলুন হিসেবে দাবি করে।
অনেক মার্কিন আইনপ্রণেতাই প্রথমেই চীনা বেলুনটিকে ধ্বংস না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করেন। মার্কিন সামরিক বাহিনীও বেসামরিক ক্ষতির ভয়ে বেলুনটিকে সমুদ্র পর্যন্ত যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন।
পেন্টাগন এবং হোয়াইট হাউজ দুই পক্ষই সাম্প্রতিক উড়ন্ত বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা কেবল জানিয়েছে এটি চীনা বেলুনটির তুলনায় আকারে ছোট। একদিন ধরে পর্যবেক্ষণের পরও প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও এ ব্যাপারে কিছু জানাননি। ফলে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, এটি কী এমন বস্তু যেটি অভিজ্ঞ পাইলট এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাদেরও শণাক্ত করতে কষ্ট হচ্ছে।
পেন্টাগন জানিয়েছে যে, গত বৃহস্পতিবার রাডারের মাধ্যমে তারা প্রথম বস্তুটির উপস্থিতি ধরতে পারে। এরপর বিষয়টি তদন্ত করার জন্য একটি এফ-৩৫ পাঠানো হয় সেখানে। ইউএফওটি ৪০ হাজার ফুট উঁচুতে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আসছিলো, যেটি বেসামরিক বিমান চলাচলের পথে একটি ঝুঁকি ছিল।
আলাস্কার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় অঞ্চলের কাছে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সীমান্তে বস্তুটিকে বিধ্বস্ত করা হয়। কর্মকর্তাদের মতে, চীনা বেলুনটির তুলনায় এটিকে উদ্ধার করা আরও সহজ হবে, কারণ এটি বরফের ওপর পড়েছে, সমুদ্রের পানিতে নয়।
মানুষবিহীন উড়ন্ত বস্তু
রাইডার বিবৃতিতে জানান, যে মার্কিন পাইলটরা সেটিকে বিধ্বস্ত করার দায়িত্বে ছিলেন, তারা মিসাইল ছোঁড়ার আগে নিশ্চিত হয়েছেন যে সেটিতে কোনো মানুষ ছিল না। তিনি জানান যে, এটিকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো কোনোকিছু নেই, এবং মোটেই এয়ারপ্লেনের মতো কিছু নয়। রাইডার এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা অবশ্য এটি আবহাওয়া বেলুন নাকি অন্য কোনো ধরনের বেলুন তা সম্পর্কে কিছু জানাননি।
রাইডার বলেন, "এটা কোনো ধরনের এয়ারক্র্যাফট নয়।"
এটিকে বিধ্বস্ত করার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সম্মতি প্রয়োজন ছিল কিনা জানতে চাইলে রাইডার উত্তর দেন, আমেরিকার উত্তরাঞ্চলের আকাশের দায়িত্বে থাকা সামরিক কমান্ডার যেকোনো সামরিক বা বেসামরিক ঝুঁকিস্বরূপ বস্তুকে বিধ্বস্ত করার অধিকার রাখেন।
"এই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে, এটা নিশ্চিত যে বস্তুটি এয়ারট্রাফিকের জন্য যথেষ্ট ঝুঁকি তৈরি করেছিল," বলে জানান তিনি।
২০০ ফুট উঁচু চীনা হাই-অলটিচিউড সার্ভেইল্যান্স বেলুনটিকে বিধ্বস্ত করার পর মার্কিন কর্মকর্তারা সাগর চষে বেলুনটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এর নিচে কোনো ইলেকট্রনিক গ্যাজেট লুকিয়ে ছিল কিনা তা নিয়ে নিশ্চিত হতে চাইছেন তারা।
রাইডার চীনা বেলুন সম্পর্কে বলেন, ইতিমধ্যেই চীনা বেলুনের 'বেশ বড়' অংশ তারা খুঁজে পেয়েছেন অথবা অবস্থান শনাক্ত করেছেন। তারা খুব শীঘ্রই বেলুনটিতে সার্ভেইল্যান্স ইকুইপমেন্ট ছিল কিনা তা জানাতে পারবেন।
শুক্রবার উড়ন্ত বস্তুটিকে বিধ্বস্ত করার পর অনেকেই বাইডেনের প্রশংসা করেছেন। সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারপারসন সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার জানান, "আমরা অনেক খুশি যে প্রেসিডেন্ট আমাদের এয়ারস্পেসে নতুন ঝুঁকি নিয়ে খুব দ্রুত কাজ করছেন।" তবে সিনেটের বৃহস্পতিবারের অধিবেশনে সিনেটররা পেন্টাগনকে চীনা বেলুনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করার ব্যাপারে সমালোচনা করেন।
সূত্র: রয়টার্স