যুদ্ধ বন্ধে চীন সফরে ‘পিস ক্লাব’ গঠনের প্রস্তাব দেবেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর সাথে সাক্ষাৎ করতে শীঘ্রই চীন সফরে যাবেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা। এই সফরে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চীনকে সাথে নিয়ে 'পিস ক্লাব' গঠনের উদ্যোগ নেবে ব্রাজিল।
পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর শাসনামলে ব্রাজিল বৈশ্বিক কূটনীতি থেকে অনেকটা আড়ালেই থেকেছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশটিতে নির্বাচিত বামপন্থী প্রেসিডেন্ট লুলা বৈশ্বিক কূটনীতিতে ব্রাজিলের কার্যকরী অংশগ্রহণ আবারও নিশ্চিত করতে চায়।
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টির বিরোধিতা করেছে ব্রাজিলে লুলার নেতৃত্বাধীন সরকার।
প্রেসিডেন্ট লুলা বলেন, "যুদ্ধ নিয়েই বেশিরভাগ সময় কথা বলতে দেখি। কিন্তু কীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা যায়, তা নিয়ে খুব কম কথা হচ্ছে। আমি শান্তি প্রতিষ্ঠার আলোচনায় আগ্রহী।"
অন্যদিকে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা বলেন, "চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমরা এমন একটা বৈঠকের সহযোগী হতে চাই, যেটি শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।"
চলতি বছরের শুরুর দিকে যুদ্ধ বন্ধে লুলা শান্তি প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, "অন্তত এখন চীনের চুপচাপ বসে থাকা উচিত হবে না। আমার পরামর্শ হচ্ছে, চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কয়েকটি দেশ নিয়ে এমন একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেখানে রাশিয়া-ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিলে এনে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হবে।"
এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো রায়ান বার্গ বলেন, "বৈশ্বিক কূটনীতিতে ব্রাজিল একটি উদীয়মান শক্তি। তাই স্বাভাবিকভাবেই দেশটি বৈশ্বিক সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুক্ত হতে চায়।"
তবে প্রেসিডেন্ট লুলার এ উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ হবে সে সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
রায়ান আরও বলেন, "সমস্যা হচ্ছে চলমান যুদ্ধে দেশ হিসেবে ব্রাজিলের তেমন কোনো প্রভাব নেই। একইসাথে দেশটিকে অনেকেই নিরপেক্ষ বলে মনে করে না। কেননা রাশিয়া, চীন ও ভারতের সমন্বয়ে গঠিত অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসের অন্যতম সদস্য ব্রাজিল।"
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে শান্তির প্রস্তাব নতুন নয়। বরং গত বছরে মেক্সিকোর পক্ষ থেকেও শান্তি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে প্রস্তাবকে 'রাশিয়ান পরিকল্পনা' বলে নাকচ করে দিয়েছিল ইউক্রেন।
আজ (রবিবার) প্রেসিডেন্ট লুলার চীন সফরের কথা থাকলেও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে সাময়িকভাবে এ সফর স্থগিত করা হয়েছে। আর এমন এক সময় ব্রাজিল শান্তি আলোচনার কথা বলছে যখন চীনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই ১২ দফা শান্তি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চীনের ১২ দফা শান্তি প্রস্তাবকে রাশিয়া অনেকটা ইতিবাচকভাবে দেখলেও ইউক্রেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবকে একপাক্ষিক বলে কড়া সমালোচনা করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট লুলা ল্যাটিন আমেরিকার বেশিরভাগ নেতাদের মতোই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে চাইছেন। গত মাসে বামপন্থী এই নেতা জার্মানির কাছে কামানের অস্ত্র বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কেননা সেগুলো চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে বলে তিনি আন্দাজ করেন।
তবে ইউক্রেনের সাথে ব্রাজিলের লুলা সরকারের একেবারেই যে সম্পর্ক নেই বিষয়টি এমন নয়। বরং চলতি মাসে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে ফোনালাপ করেছেন ব্রাজিলের বামপন্থী এই প্রেসিডেন্ট। আলোচনায় দুই রাষ্ট্রপ্রধান একমতে পৌঁছাতে পারেননি, তবুও সুবিধাজনক সময়ে ইউক্রেন সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট লুলা।
দুই নেতার আলাপচারিতায় জেলেনস্কি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিষয়টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। অন্যদিকে যুদ্ধ বন্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যেকোনো আলোচনায় মধ্যস্থতার জন্য ব্রাজিল প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান লুলা।
ব্রাজিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিয়েরা বলেন, "সকল দেশের সাথে সম্পর্ক রক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করা হচ্ছে। আমরা আবার আগের মতো অবস্থায় ফিরে যেতে চাই।"
বাণিজ্যিক দিক দিয়ে ব্রাজিলের কাছে চীন ও রাশিয়া উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর কিছুদিন পূর্বে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বলসোনারো রাশিয়া সফর করেছিলেন।
ব্রাজিলের সম্ভাবনাময়ী কৃষিখাতের জন্য প্রয়োজনীয় সার রাশিয়া থেকে আমদানি করা হয়। আর রাশিয়া সয়াবিনের মতো পণ্যসামগ্রী ব্রাজিল থেকে আমদানি করে থাকে।