১০ এর মধ্যে ৯ জনেরই নারীর প্রতি মনোভাব পক্ষপাতদুষ্ট: জাতিসংঘ
প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন ব্যক্তিই নারীর প্রতি মৌলিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব ধারণ করেন। গতকাল (সোমবার) ইউনাইটেড ন্যাশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইএনডিপি) প্রকাশিত রিপোর্টে বিশ্বজুড়ে নারীর প্রতি চলমান এমনই নানা বৈষম্যের তথ্য তুলে ধরা হয়।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, বৈশ্বিকভাবে অর্ধেক মানুষ এখনো মনে করেন, নারী অপেক্ষা পুরুষেরা ভালো রাজনৈতিক নেতা হতে পারেন। শতকরা ৪০ ভাগ মানুষ মনে করেন, নারী অপেক্ষা পুরুষেরা ভালোভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।
এমনকি শতকরা ২৫ ভাগ মানুষ মনে করেন, স্ত্রীকে স্বামীর মারধর করা 'ন্যায়সঙ্গত'।
রিপোর্টের লেখকদের মতে, পক্ষপাতদুষ্ট লিঙ্গবৈষম্য ভিত্তিক সামাজিক কিছু নীতি সমতা অর্জনের পথে বড় অন্তরায়। একইসাথে সমাজে নারীর ক্ষমতা ও অধিকারের প্রতি অবমূল্যায়ন নারীর পছন্দ ও সম্ভবনাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
রিপোর্টে বলা হয়, নারীর প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট এ আচরণ ধর্ম, আয় ও সংস্কৃতিভেদে দৃশ্যমান। এমনকি ২০১৯ সাল থেকে ইউএনডিপির লিঙ্গ বৈষম্য সূচকেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
জরিপটি পৃথিবীর নানা অঞ্চলের মোট ৮০টি দেশের মানুষদের ওপর পরিচালনা করা হয়েছে; যা বৈশ্বিক মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮৫ ভাগ।
গবেষণা প্রতিবেদনে ইউএনডিপি 'জেন্ডার সোশ্যাল নর্মস ইনডেক্স' সূচক অনুসরণ করেছে। যার তথ্য নেয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রোগ্রাম ওয়ার্ল্ড ভ্যালুস সার্ভের (ডব্লিউভিএস) কাছ থেকে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, এমনভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ জেন্ডার সমতা নিশ্চিতের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তা পূরণ সম্ভব নয়।
নারীর প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ বিভিন্ন পন্থায় হয়ে থাকে। যার অন্যতম ক্ষেত্র- শ্রম বাজারে নারী নেতৃত্বের অপেক্ষাকৃত কম সুযোগ।
রিপোর্টে বলা হয়, শ্রম বাজারের ম্যানেজারিয়াল পজিশনে নারীদের অবস্থান এক-তৃতীয়াংশেরও কম। এছাড়া, ১৯৯৫ সাল থেকে বিশ্বের নারী রাষ্ট্রপ্রধানদের সংখ্যা শতকরা ১০ ভাগের নিচেই অবস্থান করছে।
যদিও শিক্ষাক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে দূরত্ব অনেকটা কমে এসেছে। বর্তমানে ৫৯টি দেশে পুরুষ অপেক্ষা নারীরা বেশি উচ্চশিক্ষিত। তা সত্ত্বেও সেসব দেশে পুরুষ ও নারীর বেতনের ব্যবধান ৩৯ শতাংশ।
তবে চলমান এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে রিপোর্টে আশাব্যক্ত করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে সন্তানের যত্নে পিতামাতার ছুটির নীতির পরিবর্তন, শ্রম বাজারের সংস্কার ও লিঙ্গবৈষম্য ভিত্তিক সামাজিক রীতি পরিবর্তনে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউএনডিপির জেন্ডার টিমের ডিরেক্টর রাকেল লাগুনাস বলেন, "নারীদের তত্ত্বাবধান সম্পর্কিত অবৈতনিক কাজগুলোকে অর্থনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে এ অবৈতনিক কাজগুলো সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসবে এবং বিদ্যমান সামাজিক রীতিগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব হবে।"
লাগুনাস আরও বলেন, "ধারণা করা হয়, নারীদের প্রতি সবচেয়ে বেশি বৈষম্য থাকা দেশগুলোতেও তত্ত্বাবধান সম্পর্কিত অবৈতনিক কাজে পুরুষদের তুলনায় নারীরা ৬ গুণ বেশি সময় কাজ করে থাকে।"
অন্যদিকে গত মার্চে জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তোনিও গুতেরেসও লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে বর্তমানে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলোর কথা উল্লেখ করেন। ইউএন উইমেনের একটি অনুমানের ভিত্তিতে তিনিও বলেন, "জেন্ডার সমতা অর্জনে ৩০০ বছর লেগে যাবে।"
আফগানিস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশের উদাহরণ দিয়ে গুতেরেস বলেন, "বিশ্বজুড়ে নারীদের অধিকার খর্ব হচ্ছে, তারা হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে। নারী ও শিশুদের সামাজিক জীবন থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।
জেন্ডার সমতা অর্জনে গুতেরেস সমন্বিত ও জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে বিশেষ করে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে নারীদের শিক্ষা, আয় ও চাকরির সুযোগ বৃদ্ধির কথা বলেছেন। একইসাথে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের প্রতিও গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।