কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়: প্লেজিয়ারিজম করেও স্বপদে বহাল আছেন শিক্ষক
যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক স্নাতক শিক্ষার্থীর লেখার অংশবিশেষ নকল করে নিজের নামে প্রকাশ করার পরেও পদ হারাচ্ছেন না। এমনকি অভ্যন্তরীণ তদন্তে তার এ প্লেজিয়ারিজমের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেলেও চাকরি যাচ্ছে না তার।
অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম ড. উইলিয়াম ও'রাইলি। তিনি প্রাক-প্রাথমিক ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক। ২০১৮ সালে তিনি জার্নাল অভ অস্ট্রিয়ান-আমেরিকান হিস্টোরিতে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তবে নিজের একজন স্নাতক শিক্ষার্থীর নিবন্ধ থেকে তিনি বড় একটি অংশ নকল করেছিলেন।
তারপরও ও'রাইলিকে পদে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে কেমব্রিজের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
২০২১ সালে ও'রাইলির প্লেজিয়ারিজমের কথা প্রকাশ পায়। তৎকালীন ওই সাবেক শিক্ষার্থী ও'রাইলির গবেষণাপত্রটি খুঁজে পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানান। তিনি প্রমাণ দেখান, তার অধ্যাপক তার লেখা দুটো প্রবন্ধ থেকে নিজের গবেষণাপত্রের প্রায় পুরোটাই হুবহু নকল করেছেন।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্লেজিয়ারিজমকে 'মারাত্মক ও নীচ অসদাচরণ' হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু দুই বছর তদন্তের পরও বিশ্ববিদ্যালয়টির ডিসিপ্লিনারি ট্রাইব্যুনাল ও'রাইলির প্লেজিয়ারিজমকে 'অসাবধানতার ফল, কিন্তু ইচ্ছাকৃত নয়' হিসেবে রায় দিয়েছে।
গত মে মাসে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জানানো হয়।
এর আগে ও'রাইলি এমন একটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল এবং ঘটনার জেরে একজন জ্যেষ্ঠ প্রাতিষ্ঠানিক প্রশাসক পদত্যাগ করেছিলেন।
টর্টয়েজ নামক একটি স্বাধীন গণমাধ্যম ২০২০ সালে জানিয়েছিল, এক শিক্ষার্থী ও'রাইলির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন। কিন্তু তারপরও ও'রাইলিকে কেমব্রিজ কলেজ ট্রিনিটি হলের একটি যৌন হয়রানি অভিযোগের ডিসিপ্লিনারি প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
ও'রাইলি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন, ফলে তার বিরুদ্ধে তখন আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্লেজিয়ারিজম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির অভ্যন্তরীণ নিয়মগুলো অনুসরণ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও 'এ নিয়ে বেশ অসন্তুষ্টি রয়েছে,' বলেন তিনি।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, 'একজন স্টাফ সদস্যের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করা অনুচিত হবে।' ও'রাইলির ওই গবেষণাপত্রটি জার্নালটি থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে জানায় এটি।
ও'রাইলির প্লেজিয়ারিজম ইচ্ছাকৃত ছিল না — এ সিদ্ধান্তে ট্রাইব্যুনাল কীভাবে পৌঁছেছে, তা নিয়েও কিছু জানায়নি বিশ্ববিদ্যালয়টি।
ও'রাইলি ওই গবেষণাপত্রটির শিরোনাম 'ফ্রেডরিক জ্যাকসন টার্নার'স ফ্রন্টিয়ার থিসিস, অরিয়েন্টালিজ, অ্যান্ড দ্য অস্ট্রিয়ান মিলিটেয়াগরেনসা'। দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর দুটি প্রবন্ধ এবং ও'রাইলির গবেষণাপত্র পরখ করে দেখে প্লেজিয়ারিজমের প্রমাণ পেয়েছে।
সেখানে দেখা গেছে, ও'রাইলি তার শিক্ষার্থীর প্রশংসাও করেছেন। হাতে লেখা মন্তব্যে তিনি লিখেছেন, 'দারুণ কাজ! আপনি মৌলিক একটি ন্যারেটিভ দাঁড় করিয়েছেন… আপনি নতুন একটি গবেষণা তৈরি করেছেন।'
বিষয়টি নিয়ে মন্তব্যের অনুরোধ জানালেও সাড়া দেননি ও'রাইলি।