জাপানে ১৮ বছর বয়সি ৪২% নারী জীবনে কখনও সন্তান নিতে চান না!
২০০৫ সালে জন্ম নেওয়া, অর্থাৎ ১৮ বছর বয়সি বহু জাপানি নারী কখনও সন্তানের জন্ম না-ও দিতে পারেন। জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই-এর এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
জাপানের সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অভ পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি রিসার্চ-এর সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় অনুসারে, ২০০৫ সালে জন্ম নিয়েছেন অথচ কোনোদিন 'মা' ডাক শুনতে চান না, এমন তরুণীর সংখ্যা প্রায় ৪২ শতাংশ। একই বছরে জন্ম নেওয়া পুরুষদের মধ্যে কোনোদিন 'বাবা' ডাক শুনতে চান না, এমন তরুণের সংখ্যা আরও বেশি—শতকরা ৫০ ভাগ।
এর ফলে জাপানের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে চলে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
দীর্ঘ তিন দশক ধরে আর্থ-সামাজিকসহ নানা কারণে জন্মহার কেবলই কমছে জাপানে। গত বছর দেশটিতে ৮ লাখেরও কমসংখ্যক শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। জাপানের বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এর আগে কখনও এত কমে যায়নি।
উন্নত জীবনযাত্রার কারণে জাপানে সন্তান জন্মদান ও লালনপালন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সন্তান জন্মদান ও বড় করে তোলার ব্যয়ের ক্ষেত্রে শীর্ষ ৩ দেশের মধ্যে আছে জাপান। মূলত এ কারণেই দেশটিতে প্রতি বছর জন্মহার কমছে।
জন্মহার আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন জাপান সরকার। তাই জন্মহার বাড়াতে দেশটির সরকার অবশ্য দম্পতিদের জন্য সন্তান জন্ম ও লালন বাবদ আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে। তবে সেই প্রণোদনা যথেষ্ট নয়।
বর্তমানে জাপান সরকার প্রণোদনা বাবদ যে অর্থ দেয়, সন্তান জন্মের পর হাসপাতালের বিল মেটাতেই তা শেষ হয়ে যায়। এর ফলে সীমিত আয়ের দম্পতিরা স্বাভাকিভাবেই এই প্রণোদনার ওপর নির্ভর করে সন্তান জন্মদানের ঝুঁকি নিতে চান না।
জাপানে হাসপাতাল ও নার্সিং কেয়ার সুবিধার জন্য পরিবারের একজন সদস্যকে জামিনদার হতে হয়। যাদের আত্মীয় নেই, তাদের জন্য এটি কঠিন হতে পারে।
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর স্থবির মজুর নিয়ে বিয়ে ও সন্তান নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ কমছে তরুণ জাপানিদের মধ্যে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের এ সংকট যদি আরও কয়েক বছর চলে, তাহলে জাপানের সমাজে ভয়াবহ বিপর্যয় শুরু হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাপানের সমাজবিজ্ঞানীরা।
হিতোৎসুবাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অভ ইকোনমিক রিসার্চের অধ্যাপক তাকাশি ওশিও 'নিক্কেই এশিয়া'কে বলেন, পেনশন তোলা থেকে চিকিৎসা করানো, জীবনযাপনের ব্যয়—অনেক ক্ষেত্রেই অবিবাহিতদের সমস্যায় পড়তে হয়। কাজেই সব ক্ষেত্রেই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলতে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা প্রয়োজন।