বিদ্রোহের পর প্রিগোজিনের প্রথম ভিডিও বার্তা; আফ্রিকা মহাদেশ ‘আরও মুক্ত’ হচ্ছে
পুতিনের বিরুদ্ধে ব্যর্থ বিদ্রোহের পর প্রথমবারের মতো ভিডিও বার্তায় উপস্থিত হয়েছেন ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। প্রকাশিত ভিডিওটিতে ওয়াগনার বস দাবি করেছেন, তিনি বর্তমানে আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থান করছেন। খবর বিবিসির।
মূলত ওয়াগনার গ্রুপের সাথে সংশ্লিষ্ট টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে ভিডিওতে পোস্ট করা হয়। তবে ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষেই আফ্রিকায় রেকর্ড করা হয়েছে কি-না, সেটি বিবিসির পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
ভিডিওতে প্রিগোজিনকে চিরচেনা যুদ্ধের সাজে সজ্জিত অবস্থায় দেখা যায়। ওয়াগনার বস বলেন, তার নেতৃত্বাধীন মার্সেনারি গ্রুপটি আফ্রিকাকে 'আরও মুক্ত' করছে।
ওয়াগনার গ্রুপের দাবি অনুযায়ী, আফ্রিকা মহাদেশে মার্সেনারি বাহিনীটির হাজার হাজার যোদ্ধা রয়েছে। সেখানে বাহিনীটির লাভজনক ব্যবসায়িক স্বার্থও রয়েছে।
ওয়াগনার সৈন্যরা মালি এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকসহ বেশ কয়েকটি আফ্রিকান দেশে নিযুক্ত রয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সেইসব দেশে মার্সেনারি গ্রুপটির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত মাসে যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে অপারেশনের দায়িত্বে থাকা দুই ওয়াগনার প্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একইসাথে তাদের বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে আফ্রিকা মহাদেশে থাকা ওয়াগনার যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অবৈধ স্বর্ণের ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিডিওতে প্রিগোজিন জানান, ওয়াগনার গ্রুপ আফ্রিকা মহাদেশে খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান করছে। একইসাথে তারা এই অঞ্চলে ইসলামপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠী ও অন্যান্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
ভিডিওতে প্রিগোজিনকে বলতে শোনা যায়, "আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এখানে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ওয়াগনার গ্রুপ পুনরুদ্ধার এবং অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছে; বিশ্বে রাশিয়াকে আরও বিস্তৃত করছে। একইসাথে আফ্রিকাকে আরও মুক্ত করছে।"
প্রিগোজিন আরও বলেন, "আফ্রিকান মানুষের জন্য ন্যায়বিচার ও সুখ নিশ্চিতে কাজ করছি। অন্যদিকে আইএস, আল-কায়দা ও অন্য দস্যুদলের জীবনকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করছি।"
প্রিগোজিন জানান, ওয়াগনার গ্রুপে নতুন করে যোদ্ধা নেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার যে প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছিলেন, সেটিতে সফল হতে তারা বদ্ধপরিকর।
গত মাসে সেন্ট পিটার্সবার্গে আফ্রিকা-রাশিয়া সামিটে প্রিগোজিনকে দেখা গিয়েছিল। সেখানে সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিকের প্রেসিডেন্সিয়াল উপদেষ্টা ও অ্যাম্বাসেডর ফ্রেডি মাপুকার সাথে ওয়াগনার বসের হ্যান্ডশেক করা ছবিও প্রকাশিত হয়।
জুলাই মাসে বিদ্রোহের পর থেকে নিজেকে অনেকটা আড়ালেই রাখছেন প্রিগোজিন। মাত্র ২৪ ঘণ্টা টিকে থাকা বিদ্রোহে গ্রুপটি দক্ষিণ রাশিয়ার শহর রোস্তভে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল। যদিও পরবর্তীতে বেলারুশের নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় বিদ্রোহ থেকে সরে আসে ওয়াগনার গ্রুপ।
ধারণা করা হয় যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পূর্বে ওয়াগনার গ্রুপের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ হাজার। এদের মধ্যে বেশিরভাগই এসেছিলেন রাশিয়ার এলিট রেজিমেন্ট কিংবা স্পেশাল ফোর্স থেকে।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ওয়াগনার গ্রুপের সদস্য সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত জুনে প্রিগোজিন জানান, বর্তমানে মার্সেনারি গ্রুপটির সৈন্য সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার।