ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে: যুক্তরাষ্ট্র
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মার্কিন শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে। একইসাথে গাজা সীমান্তে লড়াইয়ের পাশাপাশি নেতানিয়াহু সরকারকে উত্তরে লেবানন সীমান্তে সৃষ্ট ঝুঁকির কথাও ভাবতে হচ্ছে।
কারণ লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর সঙ্গে যদি লড়াইয়ে নতুন ফ্রন্ট সৃষ্টি হয়, তাহলে তা ইসরায়েলের সেনাবাহিনীকে জটিল পরিস্থিতিতে ফেলবে। মধ্যপ্রাচ্যে বাড়বে সংঘাতের পরিসরও।
এমতাবস্থায় ইসরায়েলের সমর্থনে বিমানবাহী দ্বিতীয় রণতরি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন গতকাল (রবিবার) এই তথ্য জানিয়েছেন।
অস্টিন বলেন, "ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকানো বা হামাসের হামলার পর এই যুদ্ধকে আরও প্রসারিত করার যেকোনো প্রচেষ্টা রুখতে যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব ভূমধ্যসাগরে বিমানবাহী দ্বিতীয় রণতরি বহর পাঠাচ্ছে।"
ইউএসএস আইজেনহাওয়ার এবং এর অধিভুক্ত যুদ্ধজাহাজের বহর এক সপ্তাহে আগেই যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো আরেক রণতরির সঙ্গে যোগ দেবে। অস্টিন বলেন, "এই পদক্ষেপ ইসরায়েলের নিরাপত্তার ব্যাপারে ওয়াশিংটনের দৃঢ় অঙ্গীকারের ইঙ্গিত বহন করে।"
অন্যদিকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ বাড়লে তাতে ইরান সরাসরি জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সিবিএস নিউজে কথা বলার সময় হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান লেবাননের সাথে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে একটি নতুন ফ্রন্ট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে ইরানের কথা বলেন।
সুলিভান বলেন, "আমরা ইরানের সরাসরি যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিতে পারি না। আমাদের সম্ভাব্য সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।"
গত ১৩ অক্টোবর লেবাননে অবস্থানকারী ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমিরাবদুল্লাহিয়ান বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের অবরোধ চলতে থাকলে লেবানন সীমান্তে যুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট তৈরি হওয়ার 'সব ধরনের সম্ভাবনা' রয়েছে। ইরানের মদতপুষ্ট শিয়া সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা এখন যুদ্ধোদ্যমে রয়েছে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
ইসরায়েল-লেবানন সীমান্ত ঘুরে আসা এক হিজবুল্লাহ কমান্ডার বলেন, "একবার ভাবুন আমরা কী কী করতে পারব।"
কমান্ডারের ভাষায়, ইসরায়েল সীমান্ত অতিক্রমের জন্য হিজবুল্লাহর কাছে 'খেলা বদলে দেওয়া' পরিকল্পনা রয়েছে। হিজবুল্লাহর ওপর ইসরায়েলের হামলার জবাবে গোষ্ঠীটি তেল আবিব ধ্বংস করতে পারবে, বলেন ওই কমান্ডার। এছাড়া তার মতে, পশ্চিমাদের জন্য ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার তুলনায় হিজবুল্লাহর জন্য ইসরায়েলের পারমাণবিক রিয়্যাক্টর আরও সহজ লক্ষ্যবস্তু।
এদিকে গত শুক্রবার গাজা শহরের ১০ লাখের বেশি বাসিন্দাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে সরে যেতে বলে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। এতে করে বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এরপর গত শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০ টা থেকে বেলা ৪ টা পর্যন্ত মাত্র ছয় ঘণ্টা সময়ের ব্যবধানে দুটি রাস্তা ব্যবহার করে গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের দক্ষিণাঞ্চলে সরে যাওয়ার ফের নির্দেশনা দিয়েছে আইডিএফ।
আইডিএফের নির্দেশকৃত রাস্তাগুলো ব্যবহার করে যাতায়াত করলে বেসামরিক নাগরিকদের কোন ধরনের ক্ষতি হবে না বলেও আশ্বস্ত করেছেন মুখপাত্র আদরাই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার সময় বিমান হামলায় বহু হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলের হামলায় গত শনিবার পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ৭০০-এর বেশি শিশু নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত ফিলিস্তিনি শিশুর সংখ্যা প্রায় ২,৪৫০ জন।
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে ইউনিসেফের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়াও ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় স্থল আক্রমণ করলে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে।