ইউক্রেনের সাথে গোপনে শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্ররা
রাশিয়ার সাথে শান্তি স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে ইউক্রেনের সাথে গোপনে বৈঠক করেছে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা মিত্ররা। বৈঠকে জি-৭ ভুক্ত উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি, উন্নয়নশীল বিশ্বের কয়েকটি দেশও যোগ দেয়। জানা গেছে, শান্তি আলোচনার জন্য রাশিয়াকে ইউক্রেন যেসব শর্ত প্রস্তাব করতে পারে, সেগুলোর স্বপক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যেই অনুষ্ঠিত হয় এ বৈঠক।
বৈঠকে উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলো জি-৭ সদস্যদের রাশিয়ার সাথে সরাসরি আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু, এ দাবি মানতে রাজি হয়নি জি-৭ সদস্যরা। ফলে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এর আগে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে আলোচিত দেশগুলোর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা অংশ নেন।
রাশিয়ার দীর্ঘদিনের অভিযোগ, পশ্চিমাদের উস্কানি ও চাপের কারণেই ইউক্রেন শান্তি আলোচনায় বসতে পারছে না। এনিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে রাশিয়া ইউক্রেনের সমর্থক পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে চাইছে– এমন আশঙ্কা মোকাবিলা ছিল সৌদিতে বৈঠকের অন্যতম লক্ষ্য।
সবশেষ বৈঠকটিও হয়েছে সৌদিতে, দেশটির রাজধানী রিয়াদে; তবে আরও ছোট পরিসরে ও সঙ্গোপনে। যাতে রাজনৈতিকভাবে বিব্রত হওয়া এড়িয়ে পশ্চিমা দেশগুলো এতে অংশ নিতে পারে। পাশাপাশি ইউক্রেনের কথিত শান্তি প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি ও পরিকল্পনার বিষয়ে আরও স্বাধীনভাবে তাঁদের মতামত, পরামর্শ দিতে পারে। ভবিষ্যতে রাশিয়ার সাথে ইউক্রেন ও পশ্চিমা দুনিয়ার কূটনৈতিক যোগাযোগের একটি রূপরেখা তৈরিতেও এ ধরনের আলোচনা ভূমিকা রাখবে বলে ব্লুমবার্গকে জানান বৈঠক সংশ্লিষ্টরা।
এমন সময়ে এই বৈঠকের কথা জানা গেল– যখন বিগত কয়েক মাসে রাশিয়ার হামলা শক্তিশালী হয়েছে। একইসময়ে ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা মিত্রদের সামরিক ও আর্থিক সহায়তায় অনেকটাই ভাটা পড়েছে। ব্রাসেলস ও ওয়াশিংটনে অনুমোদন প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক বাধার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১০০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্রদান আটকে রয়েছে। ইউক্রেন যা পেলে লড়াইয়ে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারতো বলে মনে করেন পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা।
পশ্চিমা দুনিয়ায় রাজনৈতিক অনৈক্যের এই সময়ে, যুদ্ধের ময়দানে এগিয়ে গেছে রাশিয়া। সাম্প্রতিক সময়ে, ইউক্রেনে ব্যাপকভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। একের পর এক হামলায় পর্যদুস্ত হচ্ছে কিয়েভ।
তাছাড়া, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গণহত্যায় যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা বিশ্বের অন্ধ সমর্থন উন্নয়নশীল ও মুসলিম বিশ্বকে ক্ষুদ্ধ করেছে। ইউক্রেনের বেলায় স্বাধীনতার লড়াই আর ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য সংগ্রাম সন্ত্রাস– পশ্চিমাদের এমন দ্বিমুখী অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে অনেক দেশ। এনিয়ে বৈশ্বিক দক্ষিণের সাথে পশ্চিমাদের দূরত্বও বেড়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মতোন পশ্চিমাদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত দেশও ইসরায়েলি গণহত্যা ও বর্ণবাদের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে, এবং 'দ্য হেগ'-এর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।