এই বাঙালি বিজ্ঞানী বহুবার নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেও কখনও জিতেননি
মেঘনাদ সাহা যিনি 'জ্যোতির্বিদ্যার ডারউইন' নামেও পরিচিত, ১৮৯৩ সালে একটি 'নিম্ন' বর্ণের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সামাজিক নিয়মনীতিকে তিনি সবসময়ই অস্বীকার করতেন এবং ভারতের প্রথম জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী হয়েছিলেন।
১৯০০-এর দশকের গোড়ার দিকে একবার তিনি খালি পায়ে দাঁড়িয়ে থেকে ধর্মের ভিত্তিতে বাংলাকে ভাগ করার ব্রিটিশ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। এ জন্য তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এই বাধা সত্ত্বেও মেঘনাদ সাহার যাত্রা অসাধারণ বৈজ্ঞানিক কৃতিত্ব এবং সামাজিক প্রভাবের মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হয়েছিল।
পদার্থবিজ্ঞানে মেঘনাদের যুগান্তকারী কাজ মহাজগত সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়ার বদলে দিয়েছিল। ১৯২০ সালে প্রণীত তাঁর 'সাহা আয়নিকরণ সমীকরণ' জ্যোতির্পদার্থবিদ্যায় একটি ভিত্তিপ্রস্তর হিসাবে রয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা আজও এই সমীকরণ নক্ষত্র থেকে আসা আলোর বর্ণালি ব্যাখ্যা করতে এবং তাদের তাপমাত্রা এবং গঠন সম্পর্কে গোপনীয়তা উন্মোচন করতে ব্যবহার করছেন।
তবু একাধিকবার মনোনীত হওয়া সত্ত্বেও তার কখনোই নোবেল পুরস্কার পাওয়া হয়নি।
একসময় যখন বৈষম্য তীব্র ছিল তখন তিনি ঢাকা এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে জাতিগত কুসংস্কার এবং ক্রমাগত বাধার সম্মুখীন হন। এরপরেও তিনি জ্যোতির্বিদ্যা, রসায়ন এবং বিদেশি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। তিনি আইনস্টাইনের কাজ ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন।
তার অবদান হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির স্টেলার ক্লাসিফিকেশন ডাটাবেসের পুনর্গঠনে অবদান রাখে যা নক্ষত্রের গঠন সম্পর্কে প্রচলিত বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করে।
বিজ্ঞানের বাইরে সাহার ভারতে বৈজ্ঞানিক সাক্ষরতার বৃদ্ধির ব্যাপারে আগ্রহ ছিল। ১৯৩০ এবং ৪০-এর দশকে তিনি বৈজ্ঞানিক সমাজ এবং জার্নাল প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন যা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।
মেঘনাদ সাহার চেতনা তাকে রাজনীতিতেও নিয়ে গেছে। ১৯৫১ সালে লোকসভায় নির্বাচিত হয়ে তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং জল ব্যবস্থাপনার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। তাকে দামোদর উপত্যকা প্রকল্পের প্রধান স্থপতিও মনে করা হয়।
১৯৫৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনের অফিসে যাওয়ার পথে তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি এমন দৃষ্টান্ত রেখেছেন যা পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে।