অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের করে আনতে পাকিস্তানের বৃহত্তম ব্যাংকের সিইওকে অর্থমন্ত্রী করা হলো
পাকিস্তানের ব্যাংকিং খাতে যে কয়েকজন নির্বাহী সর্বোচ্চ বেতন পান, তাদের একজন মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব। এই অভিজ্ঞ ব্যাংকারকেই দেশটির অর্থমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। তবে আওরঙ্গজেব এর আগে কোনো সরকারি দপ্তরের দায়িত্ব সামলাননি।
আরও কয়েকজন অভিজ্ঞ ব্যাংকারকে বাদ দিয়ে পাকিস্তানের বৃহত্তম ব্যাংক এইচবিএল-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও চেয়ারম্যান আওরঙ্গজেবকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।
আওরঙ্গজেব অর্থমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই এইচবিএল ব্যাংক থেকে তার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এইচবিএল চেয়ারম্যান সুলতান আলী আল্লানা বলেন, 'আওরঙ্গজেব এখন দেশকে সেবা দেওয়ার নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছেন।'
আওরঙ্গজেব বার্ষিক ৩৫২ মিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি (১.২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বেতনের চাকরি ছেড়ে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি ছিলেন দেশটির সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া সিইওদের একজন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি এর দশ ভাগের এক ভাগ বেতন পাবেন।
এমন এক সময়ে আওরঙ্গজেব অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন, যখন জরুরি ভিত্তিতে আইএমএফের নতুন সহায়তা প্রয়োজন অর্থনৈতিক সংকটে জেরবার পাকিস্তানের। দেশটি এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি, স্বল্প রিজার্ভ সমস্যায় জর্জরিত।
পাকিস্তানকে দেওয়া আইএমএফের বর্তমান ৩ বিলিয়ন ডলার বেইলআউট প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী মাসে। তাই এর পরপরই একটি দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির জন্য আলোচনা করা জরুরি দেশটির জন্য।
বর্তমানে আওরঙ্গজেব পার্লামেন্টে কোনো আসনের সংসদ সদস্য নন। তবে আইনপ্রণেতা হওয়ার জন্য তার হাতে ছয় মাস সময় আছে। পাকিস্তানের মন্ত্রিসভার সব মন্ত্রীকে পার্লামেন্টের সদস্য হতে হয়।
আওরঙ্গজেবের নেতৃত্বে ২০২৩ সালে এইচবিএল রেকর্ড ১১৩.৬ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি (৪০৭ মিলিয়ন ডলার) মুনাফা করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৪৭ শতাংশ বেশি। এছাড়া ব্যাংকটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
ব্যাংকটির ব্যালান্স শিট ৫.৫ ট্রিলিয়ন পাকিস্তানি রুপির। ব্যাংক অনুপাতে অন্যতম কম জনসংখ্যার এক দেশে ভালো ব্যবসা করেছে এইচবিএল।
এইচবিএলের ৫০ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিকানা রয়েছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আগা খান ফান্ড ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্টের (একেএফইডি) হাতে।
এইচবিএলের সিইও হিসেবে আওরঙ্গজেব সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন উদ্যোগে কাজ করেছে। এসবের মধ্যে আছে করোনা মহামারিকালে ৭.৫ মিলিয়ন সুবিধাভোগীর মধ্যে ৯০ বিলিয়ন রুপি বিতরণ করা।
আওরঙ্গজেব জেপ মরগানের এশিয়াভিত্তিক গ্লোবাল কর্পোরেট ব্যাংকের সিইও হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করার বিপুল অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
আওরঙ্গজেব এর আগে প্রবৃদ্ধির জন্য প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেন, এইচবিএলের তার লক্ষ্য হচ্ছে ব্যাংকটিকে ব্যাংকিং লাইসেন্সধারী প্রযুক্তি কোম্পানি হিসেবে পরিচিত করে তোলা।
তবে পাকিস্তানকে চলমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের করে আনা অন্যরকম চ্যালেঞ্জ হবে। স্বাধীনতার পর থেকে গত ৭৬ বছরে দেশটিকে ২০ বার আইএমএফের সহায়তা প্যাকেজের দ্বারস্থ হতে হয়েছে।
নতুন আইএমএফ কর্মসূচির জন্য আলোচনা ছাড়াও নতুন অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট প্রস্তুতের জন্য প্রায় তিন মাস সময় পাবেন। কাজটি বেশ কঠিন হবে।
নিম্নমুখী রিজার্ভ বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগও আকর্ষণ করতে হবে পাকিস্তানকে।
এছাড়া প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর সঙ্গেও কাজ করতে হবে আওরঙ্গজেবকে। গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা বেড়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থন লাগবে পাকিস্তানের জোট সরকারের নেতৃত্বে থাকা পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এনের (পিএমএল-এন)।
পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি এখন ৩০ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। ফলে ক্রমেই বাড়ছে জনরোষ। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরাও নতুন অর্থমন্ত্রীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।