একটা সময়ে জাপানের সবার নাম হবে ‘সাতো, তবে আগে তাদের বিবাহিত হতে হবে
নতুন একটি গবেষণা অনুসারে, জাপানে বিয়ের কঠোর আইনের পরিবর্তন না আনা হলে– একদিন দেশটির প্রায় সবারই একই পদবি/নাম হবে। তবে দেশটির বিবাহ হারের পতন এই প্রবণতাকে ঠেকাতে পারে। একইসঙ্গে জনসংখ্যার দ্রুত পতনও এটিকে পুরোপুরি অসম্ভব করে তুলতে পারে।
উন্নত অর্থনীতির বেশিরভাগ দেশেই এখন স্বামী-স্ত্রীর একই পদবি ব্যবহারের আইনসিদ্ধ কোনো বাধ্যবাধকতা আর নেই, তবে সেটা আছে জাপানে। ১৮ শতকের শেষদিক থেকে কার্যকর রয়েছে এ আইন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্ত্রীরা নেন স্বামীর পদবি। নামের শেষ অংশ বা এই পদবিকেই ডাকনাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
এই অবস্থায়, গবেষণাটি বলছে, দম্পতিদের পৃথক পদবি ব্যবহারের আইনি অধিকার না দিলে– মাত্র ৫০০ বছর পরেই সবার ক্ষেত্রে নাম এক হয়ে যাবে।
তোহাকু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক হিরোশি ইয়োশিদা এ গবেষণায় নেতৃত্ব দেন। এতে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে যে, আইন অনুযায়ী, জাপান যদি একটি পদবি ব্যবহারের এই চল অব্যাহত রাখে; তবে ২৫৩১ সাল নাগাদ সকল (বিবাহিত) জাপানি 'সাতো-সান' নামে পরিচিত হবেন সমাজে।
এই অবস্থায়, এই পদবি বিষয়ক আইন বদলের দাবি জোরালো হচ্ছে জাপানে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারী অধিকার কর্মীরা। জাপানে যারা পদবির বৈচিত্র্য চান তাঁরাও একই দাবি নিয়ে সোচ্চার হচ্ছেন, কারণ বিবাহিতদের মধ্যে হাতেগোণা কিছু উপাধির প্রচলন এখন দেশটিতে দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।
জাপানের প্রায় ৩ লাখ মানুষের পদবির রেকর্ড রাখে মিউজি ইউরাই নামের একটি কোম্পানি। সংস্থাটির মতে, সাতো নামই এখন সবচেয়ে প্রচলিত। এরপরেই আছে সুজুকি, আর তৃতীয় বহুল প্রচলিত হলো তাকাহাশি। সাড়ে ১২ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে বর্তমানে ১৮ লাখ জাপানির পদবিই হলো সাতো।
অধ্যাপক হিরোশি ইয়োশিদার পারিবারিক ইয়োশিদা পদবি হচ্ছে ১১তম বহুল প্রচলিত। বিবাহিত দম্পতির উভয়েই তাদের নিজস্ব পদবি ব্যবহার করার অধিকার পাক– এমনটা চাইছে 'থিংক নেম প্রজেক্ট' নামের একটি অধিকার গোষ্ঠী। তারাই এ গবেষণার ভার তাঁকে অর্পণ করে।
গত সোমবার গবেষণাটি প্রকাশ করেন ইয়োশিদা। সেখানে তিনি অবশ্য স্পষ্ট করেই বলেন, জাপানে অন্যতম বড় সংকট এখন দ্রুত বিবাহ হার কমে যাওয়া। যদি এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটে, কেবল তাহলেই তাঁর গবেষণার প্রক্ষেপণটি বাস্তবে রূপ নিবে।
সরকারি তথ্যমতে, ২০২৩ সালে জাপানিদের বিয়ের হার আগের বছরের চেয়ে ৬ শতাংশ কমেছে। ফলে ৯০ বছরের মধ্যে তা প্রথমবারের মতো পাঁচ লাখের নিচে নেমে আসে। একইসময়ে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা বেড়েছে ২.৬ শতাংশ হারে।
ইয়োশিদা সিএনএনকে বলেন, "প্রত্যাশার চেয়ে আরো কম মানুষ যদি বিয়ে করে, তাহলে আমার এই হিসাব-নিকেশ যে পুরোপুরি উলটে যাবে– সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না।"
গবেষণায় ইয়োশিদা আরো প্রক্ষেপণ করেছেন যে, জন্মহারের পতনের কারণে আগামী একশ বছরে জাপানের জনসংখ্যা বিপুল হারে কমবে। "ফলে জাতি হিসেবে জাপানিদের বিলুপ্তির সম্ভাবনা খুবই বেশি"- গবেষণা নিবন্ধে লিখেছেন তিনি।
বর্তমানে জাপানে মোট প্রজনন হার ১.৩, যা খুবই নিম্ন। কোনো দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ধরে রাখতে হলে ন্যূনতম ২.১ শতাংশ মোট প্রজনন হার (টিএফআর)থাকা দরকার। একজন নারী তাঁর প্রজনন বয়সে গড়ে যতটি সন্তানের জন্ম দেন, সেটাই টিএফআর। অর্থাৎ দেশের দম্পতিরা গড়ে কতটি সন্তান নিচ্ছেন, তার ধারণা পাওয়া যায় টিএফআর থেকে।
এক দশকের বেশি সময় ধরে জাপানে জন্মহারকে পেছনে ফেলেছে মৃত্যুহার। অভিবাসনের মাধ্যমেও এই শূন্যতা কিছুটা পূরণ করা হয়তো যেত, কিন্তু অভিবাসী নেওয়ার ক্ষেত্রেও জাপানের রয়েছে কড়াকড়ি। ফলে বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ অর্থনীতির দেশের নেতাদের বড় উদ্বেগ এখন জনসংখ্যা নিয়ে।
গত বছরের জানুয়ারিতে এই বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারিও দেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। তিনি বলেন, জন্মহারের এই ব্যাপক পতনের ফলে সামাজিক কার্যক্রমই ভেঙে পড়ার মুখে রয়েছে।