‘শিগগিরই’ ইসরায়েলে আক্রমণ চালাতে পারে ইরান, আশঙ্কা বাইডেনের
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইরান 'শিগগিরই' ইসরায়েলে আক্রমণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
চলতি মাসের শুরুতে বিমান হামলায় কয়েকজন শীর্ষ ইরানি কমান্ডার নিহত হন। ইরান এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে পারে, এমন আশঙ্কা যখন চড়ছে তখনই এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাইডেন।
ইসরায়েল সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলার কথা স্বীকার করেনি। তবে এ হামলার পেছনে ইসরায়েলের হাত রয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজকে বলেছেন, ইসরায়েলের ওপর বড় ধরনের হামলা হতে পারে।
ইসরায়েল বলেছে, তারা আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুত। অন্যদিকে বাইডেন ইরানকে ইসরায়েলে হামলা করতে নিষেধ করে বলেছেন: 'ডোন্ট'।
ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, 'ইসরায়েলকে রক্ষা করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইসরায়েলকে আমরা সমর্থন দিয়ে যাব। আমরা ইসরায়েলকে রক্ষা করতে সহযোগিতা করব; ইরান সফল হবে না।'
গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইরত হামাসকে সমর্থন করে ইরান। এছাড়া এই সমগ্র অঞ্চলজুড়ে লেবয়াননের হিজবুল্লাহর মতো বিভিন্ন ইসরায়েলবিরোধী প্রক্সি গ্রুপকেও সমর্থন দেয় তেহরান।
শুক্রবার হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা লেবানন থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে 'কয়েক ডজন' রকেট নিক্ষেপ করেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) একজন মুখপাত্র বলেছেন, প্রায় ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও দুটি বিস্ফোরক ড্রোন নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ হামলায় অবশ্য কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা সিবিএসকে বলেন, এবারের হামলার আশঙ্কা ইসরায়েলের ওপর ইরানের প্রত্যাশিত অন্য যেকোনো হামলার আশঙ্কার চেয়ে আলাদা।
বিবিসির নিরাপত্তা প্রতিবেদক ফ্রাঙ্ক গার্ডনার বলেন, ইরান ইচ্ছা করেই মধ্যপ্রাচ্য ও ওয়াশিংটনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখছে।
গত ১ এপ্রিল দামেস্কের কনস্যুলেট ভবনে প্রাণঘাতী হামলার পর থেকেই ইরানের নিরাপত্তা সংস্থা কড়া প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। ইসরায়েল বলে আসছে, দামেস্কের কনস্যুলেট থেকে ইরান লেবানন ও সিরিয়ায় ইরানি প্রক্সিদের কাছে গোপন অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়তে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও অস্ট্রেলিয়াসহ আরও কিছু দেশ তাদের নাগরিকদের ইসরায়েল ভ্রমণের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। জার্মানি তার নাগরিকদের ইরান ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ইসরায়েলে কূটনৈতিক কর্মী ও তাদের পরিবারকে তেল আবিব, জেরুজালেম ও বেরশেবা শহরের বাইরে ভ্রমণ করতে নিষেধ করেছে।
সতর্কবার্তার মধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
ইসরায়েলি সরকার নাগরিকদের পানি, তিন দিনের খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
ইসরায়েলি রেডিও অবশ্য জানিয়েছে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে আক্রমণের সম্ভাবনার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী কমব্যাট ট্রুপের বাতিল করার পাশাপাশি বিমান প্রতিরক্ষা জোরদার করেছে।
গত ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১৩ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে ইরানের সিনিয়র সামরিক নেতারা ছিলেন। সিরিয়া ও লেবাননে ইরানের এলিট কুদস ফোর্সের সিনিয়র কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিও ছিলেন নিহতদের মধ্যে।
ইসরায়েল কোনো মন্তব্য না করলেও তারাই এই হামলা চালিয়েছে বলে মনে করছে প্রায় সবাই।
ইসরায়েলে আক্রমণ চালালে ব্যাপক পরিসরে আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে, এই আশঙ্কায় বেশ কয়েকটি দেশের কর্মকর্তারা ইরানকে নিরস্ত করার চেষ্টা করছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন চীন, সৌদি আরব ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন ইরানের ওপর প্রভাব ব্যবহার করে তেহরানকে বোঝানোর জন্য।
তবে পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে জড়াতে চায় না ইরান। উপসাগরের আরব প্রান্তে ইরানের প্রতিবেশীও তা চায় না। ইরান এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের প্রতি মিত্রভাবাপন্ন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে চাপে রাখতে চায় বলে মনে করেন পশ্চিমা বিশ্লেষকরা।