আফ্রিকায় ক্রমবর্ধমান রুশ প্রভাবের মাঝেই চাদ সরকারের মার্কিন সেনাদের বের করে দেয়ার হুমকি
আফ্রিকার দেশ চাদে সামরিক অবস্থান হারাতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কারণ দেশটির সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা চুক্তি শেষ করার হুমকি দিয়ে মার্কিন সামরিক বাহিনীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। চারটি মার্কিন সূত্র থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর ফলে এ অঞ্চলে রাশিয়ার প্রভাব আরো বৃদ্ধি পাবে।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনীকে পাঠানো একটি চিঠিতে চাদের কর্মকর্তারা স্ট্যাটাস অফ ফোর্সেস চুক্তি (এসওএফএ) বাতিল করার হুমকি দিয়েছিল। এ চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন সামরিক কর্মীরা কোন দেশে কাজ করার সময় যে সকল নিয়ম ও শর্তাবলি মেনে চলবে তা নির্ধারণ করা হয়। চিঠিতে মার্কিন সেনাবাহিনীকে সরাসরি চাদ ছাড়ার নির্দেশ না দিলেও কর্মকর্তারা সিএনএনকে বলেছেন, মার্কিন বাহিনীর সকল সদস্যকে এন'জামেনায় অবস্থিত ফরাসি ঘাঁটি ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে বিশেষভাবে ইউএস স্পেশাল অপারেশনস টাস্ক ফোর্স (এসওটিএফ) সম্পর্কে বলা হয়েছে। দুটো মার্কিন সূত্র নিশ্চিত করেছে, এটি এ অঞ্চলের মার্কিন স্পেশাল অপারেশনস ফোর্সের একটি প্রধান কেন্দ্র। কিন্তু টাস্ক ফোর্সটি বাদেও চাদে মার্কিন সামরিক বাহিনীর আরো কয়েকটি দল নিয়োজিত আছে। চাদে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সব পরিষেবা এন'জামেনা থেকে পরিচালিত হয়।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, চিঠিটি চাদের বিমান বাহিনী প্রধান ইদ্রিস আমিনের কাছ থেকে এসেছে যা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠানোর জন্য একটি অস্বাভাবিক পন্থা। চিঠিটি ফরাসি ভাষায় টাইপ করা হয়েছে (চাদের সরকারি ভাষাগুলোর মধ্যে একটি) এবং এতে ইদ্রিস আমিনের নামের সিল দেয়া ছিল।
একজন মার্কিন কর্মকর্তার মতে, চিঠিটি স্বীকৃত কূটনৈতিক মাধ্যম থেকে পাঠানো হয়নি। সাধারণ এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলায় স্বীকৃত কূটনৈতিক মাধ্যম থেকেই চিঠি পাঠানোই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হয়। দুটো মার্কিন সূত্র থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, চিঠিটি চাদ সরকারের নতুন একটি চুক্তি সুরক্ষিত করার জন্য আলোচনা চালানোর কৌশল হতে পারে যা দেশটির সরকারকে আরো সুবিধা দিবে।
চাদে কতজন মার্কিন সৈন্য অবস্থান করছেন তার সঠিক সংখ্যা জানা না থাকলেও একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, সেখানে একশরও কম সেনা অবস্থান করছে।
সিএনএন চাদ সরকারের কাছ থেকে এ সম্পর্কে মন্তব্য চেয়েছে।
প্রতিবেশী দেশ নাইজারের সামরিক সরকার মার্কিন সেনাবাহিনীর সাথে চুক্তি শেষ করার (যা আমেরিকান কর্মীদের দেশটিতে কাজ করার অনুমতি দিয়ে এসেছিল) মাত্র এক মাস পরেই চাদ এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, চাদের নেতৃত্ব নাইজারকে অনুসরণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরো ছাড় পাওয়ার চেষ্টা করছে।
চাদে সামরিক অবস্থান হারানোর সম্ভাবনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চিন্তার বিষয় যেহেতু আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে রুশ প্রভাব বৃদ্ধির দাবি করে আসছে মার্কিনিরা।
নাইজারে একজন মার্কিন বিমানকর্মী গোপন তথ্য ফাঁস করে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, নাইজারে মার্কিন কর্মকর্তারা একটি ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন তথ্য গোপন করেছে। অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, নাইজারে প্রায় ১১শ মার্কিন সৈন্য 'বন্দি' আছে যেহেতু তাদের বদলে অন্য মার্কিন সৈন্য নাইজারে প্রবেশ করতে পারছে না। এটি থেকে বোঝা যায়, নাইজার চায় মার্কিন সৈন্যরা দ্রুত দেশটি ত্যাগ করুক।
মার্কিন সামরিক বাহিনী নাইজারে ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্স এবং মোতায়েন নিয়ে বিভিন্ন সম্মুখীন হচ্ছে। অন্যদিকে রাশিয়া সম্প্রতি নাইজারকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা শুরু করেছে।
সিএনএনকে দেওয়া এক বিবৃতিতে মার্কিন আফ্রিকা কমান্ডের প্রধান ও মার্কিন মেরিন কর্পস জেনারেল মাইকেল ল্যাংলি মধ্য আফ্রিকা ও সাহেল অঞ্চলে প্রভাব বাড়ানোর রুশ প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বিদেশি শক্তির মোকাবিলায় এই অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব বজায় রাখার গুরুত্বের ওপরও জোর দিয়েছে।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়