জাপানে কেন ৯০ লাখ ‘আকিয়া’ বাড়ি খালি পড়ে আছে?
জাপানে অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত বাড়ির সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যার কারণে বর্তমানে দেশটিতে প্রায় ৯০ লাখ বাড়ি খালি পড়ে আছে। খালি পড়ে থাকা বাড়িগুলোকে জাপানি ভাষায় 'আকিয়া' বলা হয়।
মঙ্গলবার প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সাল থেকে খালি বাড়ির সংখ্যা অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি বেড়েছে।
জাপানের সব বাড়ির প্রায় ১৪ শতাংশ খালি পড়ে আছে, তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
বাড়িগুলো খালি পড়ে থাকার মূল কারণ, বেশিরভাগ বাড়ির উত্তরাধিকাররা গ্রাম থেকে শহরে পাড়ি জমাচ্ছেন। এটা শুধু গ্রামীণ সমস্যাও নয়; শহরেও অনেক খালি ঘর রয়েছে।
নমুরা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী দশ বছরের মধ্যে জাপানের প্রায় এক তৃতীয়াংশ বাড়ি খালি হয়ে যেতে পারে।
সমীক্ষা অনুযায়ী, ৪.৪ মিলিয়নেরও বেশি বাড়ি, ভাড়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে আছে, বিশেষত বড় শহরগুলোর দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতে। ৩.৮ মিলিয়নেরও বেশি বাড়ির অবস্থা এখনও অজানা এবং ৯০ লাখ বাড়ির মধ্যে কেবল তিন লাখ ৩০ হাজার বাড়ি বর্তমানে বিক্রয়ের জন্য তালিকাভুক্ত রয়েছে।
জাপানে, বাড়ি সহ জমির তুলনায় খালি জমির করের পরিমাণ বেশি, এজন্য অনেকেই পুরোনো বাড়ি ভেঙে না ফেলে পরিত্যক্ত রেখে দেন। অনেকে তো করের বোঝা মাথায় না নিতে, বাড়ির উত্তরাধিকারও দাবি করেন না।
তবে এসব খালি বাড়ি এখন অনেক পর্যটন ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের নিকট আকর্ষণীয় হয়ে ধরা দিয়েছে। জাপানের ঐতিহ্যবাহী কোমিনকা বাড়িগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে কিনতে পাওয়া যায়। এগুলোকে সংস্কার করে অনেকেই পর্যটকদের ছুটি কাটানোর জন্য ভাড়া দিচ্ছেন।
হানা সাকাতা এবং তার স্বামী তাদের নিউ হেরিটেজ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রায় এক দশক ধরে এসব খালি বাড়ি সংস্কার ও ভাড়া দিচ্ছেন। ইজু উপদ্বীপে তারা একটি হোলিডে হোম দিয়ে শুরু করেছিলেন যা খালি এবং সম্পূর্ণ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল। পরে তারা পাহাড়ি নাগানো গ্রামে একটি ঐতিহ্যবাহী কোমিনকা বাড়ি অধিগ্রহণ করেন। বাড়িটির বৃদ্ধ মালিক যখন পরিচর্যা কেন্দ্রে ছিলেন, তখন এর কিছু অংশ পরিষ্কার না করা তুষারের ভারে ধসে পড়েছিল। পড়ে এ দম্পতি বাড়িটির সংস্কার করে পর্যটকদের ভাড়া দেন।
তবে সাকাতা জানিয়েছেন, এসব বাড়ি সংস্কার করাটা অনেকটা ব্যয়বহুল।
সাকাতা বলেন, 'অনেক বিদেশি খুব কম দামে বা এমনকি বিনামূল্যে জাপানে বড় খামারবাড়ি কেনার বা অধিগ্রহণের সুযোগ নিয়ে উচ্ছ্বসিত। তবে এই ঐতিহ্যবাহী ঘরগুলো সংস্কার করা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং, কারণ দক্ষ ঠিকাদার খুঁজে পাওয়া যায় না, যারা সুনিপুণ ভাবে এসব পুরোনো বাড়ির কাজ করতে পারেন। দক্ষ শ্রমিকের এই ঘাটতির কারণে, আগামী দশকে আমরা জাপানে বিদেশিদের মালিকানাধীন অনেক বাড়িও খালি পড়ে থাকতে দেখতে পাব।'
তবে সাকাতার মতে, বিদেশি পর্যটকদের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী জাপানি আবাসনে থাকার অভিজ্ঞতা অর্জনের আগ্রহ বেশি।
জাপান একমাত্র দেশ নয় যারা জনসংখ্যাতাত্ত্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় গত বছর জন্মহার রেকর্ড সর্বনিম্ন ০.৭২ এ পৌঁছেছে, যা জাপানের ২০২২ সালের পরিসংখ্যানের ১.২৬ এর চেয়ে কম। সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানেও গড়ে প্রতি নারী একজন সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রজনন হারও এক শতাব্দীর মধ্যে সর্বনিম্ন।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন