মোদির সহযোগীদের ভুয়া ভিডিও ভারতের নির্বাচনকে যেভাবে প্রভাবিত করছে
ভারতের জাতীয় নির্বাচনে প্রচারণা বৃদ্ধির সাথে সাথে ভুয়া ভিডিও প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দুই শীর্ষ সহযোগীকে যুক্ত করে তৈরিকৃত জাল ক্লিপগুলি পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। একইসাথে এর সূত্র ধরে প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের কিছু কর্মীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে৷
এআই ব্যাপকভাবে সহজলভ্য হওয়ার পর এটিই ভারতের প্রথম জাতীয় নির্বাচন। এই সম্পর্কে মোদি বলেন, "ভুয়া ভয়েস ব্যবহার করা হচ্ছে; সেখানে নেতাদের এমনভাবে দেখানো হচ্ছে যে 'বিবৃতি তারা কখনও দেয়নি'। এটিকে তিনি 'সমাজে উত্তেজনা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র' বলে অভিহিত করেছেন।
ভারতীয় পুলিশ ইতোমধ্যেই বলিউড অভিনেতাদের মোদির সমালোচনা করে প্রকাশিত ভুয়া ভিডিও প্রকাশের বিষয়ে তদন্ত করছে। একইসাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে দেখিয়ে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি সংখ্যালঘুদের জন্য কিছু সোশ্যাল সুরক্ষা বন্ধ করবে বলে একটি সংবেদনশীল ভিডিও লাখ লাখ ভোটারদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে।
অমিত শাহ মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স-এ নিজের 'অরিজিনাল' এবং এডিটেড 'ভুয়া' বক্তৃতা পোস্ট করে এর প্রতিবাদ করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি অবশ্য কোনো প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ করেছেন যে, ভিডিওটি জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল এবং এর পিছনে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস যুক্ত। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ বলেন, "সমস্যাটি সমাধানে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।"
এই ঘটনার সূত্র ধরে ভিডিওটি প্রচারের জন্য ভারতীয় পুলিশ গত সপ্তাহে আসাম, গুজরাট, তেলেঙ্গানা ও নয়া দিল্লি রাজ্যে কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া টিমের ছয় সদস্যসহ অন্তত নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
যদিও কংগ্রেসের পাঁচ কর্মীকে পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত শুক্রবার নয়াদিল্লি পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট ঘটনার সূত্র ধরে সবচেয়ে হাই-প্রোফাইল গ্রেপ্তারটি করেন। তারা ঐ ভুয়া ভিডিওটি শেয়ার করার জন্য কংগ্রেসের ন্যাশনাল সোশ্যাল মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর অরুণ রেড্ডিকে গ্রেফতার করেছিল। এক্ষেত্রে রেড্ডিকে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে কংগ্রেস কর্মীরা সোচ্চার হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই #রিলিজ_অরুন_রেড্ডি ট্যাগ ব্যবহার করে এক্স-এ পোস্ট করেছে। কংগ্রেসের আইনপ্রণেতা মানিকম ঠাকুর বলেছেন যে, "গ্রেপ্তারটি বর্তমান সরকারের 'শাসনের কর্তৃত্ববাদী অপব্যবহারের' উদাহরণ।"
এই বিষয়ে কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়ার প্রধান সুপ্রিয়া শ্রীনাতের কাছে মন্তব্য চেয়ে মেসেজ ও ই-মেইল করা হলেও তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
ভারতের জাতীয় নির্বাচনে রয়েছে প্রায় ১ বিলিয়ন ভোটার এবং ৮০০ মিলিয়নেরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। এক্ষেত্রে ভুল তথ্যের বিস্তার মোকাবেলা করা একটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এক্ষেত্রে পুলিশ ও নির্বাচনী কর্মকর্তারা সোশ্যাল মিডিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করে থাকে।
পুলিশ প্রধান প্রশান্ত কুমার গতকাল (শনিবার) রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে ৫০০ জনেরও বেশি লোক অনলাইনে নজরদারি রাখে। সেক্ষেত্রে তারা বিতর্কিত পোস্টগুলিকে চিহ্নিত করে এবং প্রয়োজনে সেগুলো অপসারণের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলির সাথে সমন্বয় করে।
এদিকে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে নিয়ে প্রকাশিত আরেকটি ভুয়া ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে। তাতে দেখা যায়, ২০১৯ সালের জঙ্গি হামলায় নিহতদের পরিবারের জন্য যথেষ্ট না করার জন্য তিনি মোদীর সমালোচনা করেছেন। যদিও ফ্যাক্ট চেকাররা বলেছেন যে, ভিডিওটি একটি আসল ক্লিপের বিভিন্ন অংশ কেটে তৈরি করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশ এটিকে 'এআই জেনারেটেড, ডিপফেক' বলে অভিহিত করেছে।
এদিকে ইন্টারনেট অ্যাড্রেস ট্র্যাকিং ব্যবহার করে রাজ্য পুলিশ গত ২ মে শ্যাম গুপ্তা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। যিনি তার এক দিন আগে এক্স-এ ঐ জাল ভিডিও পোস্টটি শেয়ার করেছিলেন; যেটি ৩ হাজারেরও বেশি ভিউ এবং ১১ টি লাইক পেয়েছে।
পুলিশ গুপ্তার বিরুদ্ধে ভারতীয় আইনের অধীনে জালিয়াতি ও শত্রুতা প্রচারের অভিযোগ করেছে। যাতে দোষী সাব্যস্ত হলে তার সাত বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। এই বিষয়ে রয়টার্স অভিযুক্তের কাছে পৌঁছাতে পারেনি; কারণ তিনি বর্তমানে ১৪ দিনের হেফাজতে রয়েছেন।
এই বিষয়ে পুলিশ অফিসার কুমার বলেন, "এই ব্যক্তি প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট লোক নন। তিনি প্রযুক্তি সম্পর্কে অভিযুক্ত হলে তাকে এত দ্রুত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হতো না।"
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান