দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ছেড়ে নতুন কাজে যোগ দিতে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়
ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় আপনি যেখানে চাকরি করেছেন সেখান থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়াটা অনেকটা অম্লমধুর অনুভূতি। এক্ষেত্রে জীবনের একটি পর্ব সফলভাবে সমাপ্ত করার সাথে সাথে নতুন পর্বে পদার্পণ করা হয়।
কয়েক দশক ধরে চাকরি ছেড়ে নিজের কোনো উদ্যোগে যুক্ত হওয়া কিংবা অন্য কোম্পানিতে যাওয়া সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন এক মানসিক ও বাস্তব অভিজ্ঞতা। এটি হয়ত আপনার জীবন ও কর্মজীবনের জন্য সঠিক পদক্ষেপ হতে পারে। তবে আপনার এই যাত্রা সহজ নয়। এমনকি অনেক সময় আপনাকে অকৃতজ্ঞ বলেও মনে হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার পেশাগত জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটানো কোম্পানি থেকে সরে যেতে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
১. সিদ্ধান্ত যাচাই করা
এক্ষেত্রে প্রথম চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে 'আমি থাকবো না-কি চলে যাবো' এই সম্পর্কিত দ্বিধা। অনেক পেশাজীবী তার দীর্ঘদিনের কোম্পানি ছেড়ে যাবেন কি-না সেটি ভাবতে ভাবতে বছরের পর বছর অতিবাহিত করে ফেলেন। এক্ষেত্রে তারা শুধু তখনই চলে যান যখন তারা নিজেকে অসহনীয় মাত্রায় অসুখী বা অসন্তুষ্ট বলে মনে করেন।
এই অবস্থায় আপনি নতুন যে কাজটি করতে চান সেক্ষেত্রে ঐ সম্পর্কিত ছোট ছোট বিষয়গুলো যাচাই করুন। যেমন, ধরা যাক আপনি একজন পেশাদার ফটোগ্রাফার হতে চান। সেক্ষেত্রে আপনি পরখ করে দেখুন লোকেরা কী আসলেই এই কাজের জন্য আপনাকে অর্থ দেবে কি-না? এক্ষেত্রে আবেগের দ্বারা চালিত হয়ে বাধাগ্রস্ত হওয়ার পরিবর্তে সাহসী ও বাস্তববাদী হতে হবে।
২. নিজেকে দোষী মনে করা
দীর্ঘদিন একই জায়গায় কাজ করার ফলে সহকর্মীদের সাথে বিশ্বাস ও পারস্পরিক সুসম্পর্ক তৈরি হয়। এতে করে তারা আপনার উপর নির্ভরশীল হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের মাঝে চাকরি ছেড়ে দিলে সম্ভবত তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
অনেক পেশাদারের জন্যই নিজের টিমকে বিদায় জানাতে অপরাধবোধ করাটা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে আপনি যদি কয়েক বছরের জন্য কোম্পানিতে থাকতেন, তবে খুব কম লোকই আপনার প্রস্থানে অবাক হতো। আজকাল লোকেরা এমনটাই করে থাকেন। কিন্তু আপনি যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে বহুদিন ধরে থাকেন তবে মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আপনাকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা শুরু করে।
৩. স্ট্যাটাস হারানোর ভয়
দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ছেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে স্ট্যাটাস হারানোর শঙ্কা। এক্ষেত্রে বহুদিন ধরে কষ্ট করে একটা পদে আসীন হয়। এই পদ ছেড়ে নতুন কোথাও গেলে একটা ঝুঁকি রয়েই যায়।
ধরা যাক, আপনি একজন শিক্ষক। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অধ্যাপনার মাধ্যমে আপনি অধ্যাপক পদে আসীন হয়েছেন। সেক্ষেত্রে এই পেশা ছেড়ে আপনি যদি উদ্যোক্তা হতে চান তবে পূর্বের সব অর্জন ঝুঁকিতে পরতে পারে বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, নতুন নতুন সুযোগও সৃষ্টি হতে পারে।
৪. মানিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা
দীর্ঘদিনের কর্মজীবন ছেড়ে নতুন কাজে যুক্ত হলে মানিয়ে নিতে অনেকের সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে নিজের দুর্বলতা থেকে শুরু করে বাজে অভ্যাসগুলি হঠাৎ করে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য একটি বৃহৎ কর্পোরেট পরিবেশে কাজ করে থাকেন তাহলে আপনি কাজগুলি সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে অনেক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাহায্য পাবেন। কিন্তু আপনি যদি সেটি ছেড়ে একটি ছোট অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন কিংবা নিজে ব্যবসা শুরু করেন তাহলে বেশ বেগ পেতে হতে পারে। এক্ষেত্রে মাল্টি-টাস্কিং করার ক্ষমতা এবং সৃজনশীল হওয়া অপরিহার্য।
অন্যদিকে আপনি যদি একটি বড় প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন তাহলে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করার ও কোম্পানির কালচার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কোম্পানির বড় কর্তা-ব্যক্তিদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
৫. নতুন সহকর্মীদের মানসিকতা বোঝা
নতুন কর্মস্থলে সহকর্মীরা আপনার দক্ষতাকে ছোট করে দেখতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে নতুন নতুন প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে হতে পারে। একইসাথে নিজের পূর্বের গৌরবময় দিনগুলির কথা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
৬. বিপরীতধর্মী আবেগের মধ্যে ভারসাম্য
দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ছেড়ে নতুন কাজে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে পারস্পরিক বিপরীতধর্মী আবেগ কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে, একদিকে নতুন কাজ নিয়ে একদিকে যেমন উত্তেজনা, নতুনত্ব ও ভয় কাজ করতে পারে। ঠিক তেমনিভাবে পুরোনো কর্মস্থল নিয়ে শোক, আক্ষেপ ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এমতাবস্থায় উভয় দিকের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান