বাল্টিক সাগরের সীমানা পরিবর্তন করতে চায় রাশিয়া, ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর নতুন দুশ্চিন্তা
বাল্টিক সাগরের সীমানা পরিবর্তনের খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া, এ নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ ও উত্তেজনার। খবর বিবিসি'র।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের খসড়া প্রস্তাবে ফিনল্যান্ড উপসাগরে রুশ দ্বীপপুঞ্জ এবং কালিনিনগ্রাদের আশপাশের সমুদ্রসীমা পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাশিয়ার তাস নিউজ এজেন্সি এবং অন্যান্য গণমাধ্যম ১৯৮৫ সালের জানুয়ারিতে সোভিয়েত আমলের পুরানো সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাবের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে এই প্রস্তাবটি আলোচনায় আসে।
ফিনল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো (লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও এস্তোনিয়া) তাদের জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
লাটভিয়া এ পরিস্থিতি সম্পর্কে রাশিয়ার কাছে ব্যাখ্যা চাইছে, অন্যদিকে লিথুয়ানিয়ার মতে রাশিয়ার এই পদক্ষেপ তার প্রতিবেশী দেশগুলোকে উস্কে দেওয়া এবং ভয় দেখানোর একটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা।
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব বলেছেন, 'রাজনৈতিক নেতারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং তার সরকার বরাবরের মতোই শান্তভাবে এবং সত্যের ভিত্তিতে এ নিয়ে কাজ করছে।'
খসড়ায় বাল্টিক সাগরে রাশিয়ার অধিকৃত সীমানা কালিনিনগ্রাদের কাছে লিথুয়ানিয়ার জলসীমায় প্রসারিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কিনা তা পরিষ্কার করে উল্লেখ করা হয়নি।
তবে এর মধ্যে ফিনল্যান্ডের পূর্ব উপসাগরের অঞ্চল, ফিনিশ উপকূলের নিকটবর্তী বেশ কয়েকটি দ্বীপ এবং কালিনিনগ্রাদের বাল্টিস্ক এবং জেলেনোগ্রাদস্ক শহরগুলির নিকটবর্তী অঞ্চলগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফিনল্যান্ড এবং বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো ইইউ এবং ন্যাটোর সদস্য, যারা তাদের সীমান্ত রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ফিনল্যান্ডের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র কমিটি এ নিয়ে বুধবার জরুরি বৈঠক করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী পেত্তেরি অর্পো বলেছেন যে তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি বলেন, 'এই মুহূর্তে আমি উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না।'
তবে বুধবারের মধ্যে রাশিয়ার সরকারি পোর্টাল থেকে প্রস্তাবগুলো সরিয়ে ফেলা হয়, পৃষ্ঠায় কেবল 'খসড়া মুছে ফেলা' বার্তাটি রয়ে গেছে। পরে রাশিয়ার একটি সূত্র তাস ও অন্যান্য বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছে, বাল্টিক অঞ্চলে রাশিয়ার জলসীমা পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা নেই।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সব প্রশ্নের উত্তরের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করতে বলেছেন। তিনি বলেন, 'এখানে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।'
বাল্টিক অঞ্চলে বর্ধিত উত্তেজনার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ১৯৮০ এর দশক থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি অতীতের চেয়ে আরও সংঘাতপূর্ণ এবং জটিল।
ফিনিশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের চার্লি স্যালোনিয়াস-পাস্তেরনাক বলেন, 'এটি আদতে কোনো সাধারণ আমলাতান্ত্রিক নয় বরং এক ধরনের কৌশলগত পদক্ষেপ ছিল, সীমানা বৃদ্ধির জন্য কতদূর যেতে পারে তা পরীক্ষা করার জন্যই এমন পরিকল্পনা করেছে রাশিয়া। যদি তারা প্রতিরোধের মুখোমুখি হয় তবে তারা পিছু হটবে এবং দাবি করবে যে এটি কোনো বড় বিষয় নয়।'
লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েলিয়াস ল্যান্ডসবার্গিস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ বলেছেন যে এটি 'ন্যাটো এবং ইইউকে উস্কে দেওয়ার একটি সুস্পষ্ট প্রচেষ্টা' এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানো প্রয়োজন।
সুইডেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল মাইকেল বাইডেন সতর্ক করে বলেছেন, পুতিনের লক্ষ্য বাল্টিক সাগরের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি আরও বলেন, বাল্টিক সাগরকে পুতিনের খেলার মাঠ হতে দেওয়া উচিত নয়, যেখানে তিনি ন্যাটো সদস্যদের ভয় দেখাতে পারেন।
৩২তম সদস্য হিসেবে মার্চে ন্যাটোতে যোগ দেয় সুইডেন এবং গত দুই বছরে দেশটি বাল্টিক গোটল্যান্ডে তার সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছে।
জেনারেল বাইডেন বলেছেন তিনি নিশ্চিত যে রাশিয়ার নজর গোটল্যান্ডের দিকে রয়েছে, কারণ সুইডেন যদি দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ হারায় তবে এর অর্থ নর্ডিক এবং বাল্টিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার অবসান হবে।
গত বছর ন্যাটোতে যোগ দেওয়া ফিনল্যান্ড রাশিয়ার সঙ্গে তাদের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত অতিক্রম করতে চাওয়া বিপুল সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীকে ঠেকাতে পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দেশটি উদ্বিগ্ন যে মস্কো তার নিজস্ব উদ্দেশ্যে অভিবাসীদের কাজে লাগাতে পারে।
তবে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে যে, প্রস্তাবিত আইনটির ফলে আশ্রয় চাওয়ার বৈধ অধিকার রয়েছে এমন শরনার্থীরা বঞ্চিত হতে পারেন।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন