অযোধ্যায় পিছিয়ে বিজেপি, উপকারে এল না রাম মন্দির
২০১৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে উত্তর প্রদেশের (ইউপি) সিংহভাগ আসনই ধরে রেখেছিল ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। তবে ২০২৪ সালের নির্বাচনে সেই উত্তর প্রদেশই দলটির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতে সাত দফায় লোকসভা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর আজ মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল থেকে ভোট গণনা শুরু হয়। এর আট ঘণ্টা পর দেখা যায়, রাজ্যের ৮০ আসনের মধ্যে ৪৪ আসনেই এগিয়ে রাহুল গান্ধীর কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইনডিয়া জোট। ৩৫ আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট।
২০১৪ সালের নির্বাচনে ৭১ ও ২০১৯ সালে রাজ্যের ৬২ আসন জিতেছিল বিজেপি।
যদিও বিভিন্ন জরিপে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়ে যে এবারও রাজ্যটিতে ২০১৪ ও ২০১৯ সালেরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে। তবে এখনও যেহেতু বেশ কয়েকটি আসনের ভোট গণনা শেষ হয়নি, তাই ফলাফল কি হতে যাচ্ছে, সেটি এখনই নিশ্চিত করে বলা অসম্ভব।
এবারের নির্বাচনে উত্তর প্রদেশে বিজেপির এমন ধাক্কার নেপথ্যে কী কারণ থাকতে পারে, চলুন জেনে নেওয়া যাক:
রাম মন্দির কী বিজেপির উপকারে এসেছে?
এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল অযোধ্যায় গ্র্যান্ড রাম মন্দির নির্মাণ। এটি ১৯৮০ এর দশক থেকে বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। বিজেপি সমর্থকরা দাবি করেছিল যে এ মন্দির লোকসভা নির্বাচনের বিজেপির জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কিন্তু আদতে তেমনটা হয়নি।
রাজ্যের ফৈজাবাদ আসনে বিজেপির প্রার্থী লাল্লু সিংয়ের বিরুদ্ধে এগিয়ে রয়েছেন সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী অবধেশ প্রসাদ। ফৈজাবাদের আশেপাশের সাতটি আসনের মধ্যে মাত্র দুটিতে (গোন্ডা ও কায়সারগঞ্জ) এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। আর দুটিতে (আমেঠি ও বারাবাঙ্কি) কংগ্রেস ও তিনটিতে (সুলতানপুর, আমবেদনগর ও বাস্তি) এগিয়ে সমাজবাদী পার্টি।
উল্লেখ্য, উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদে রামমন্দির অবস্থিত। ২০১৮ সালে ফৈজাবাদ জেলার নতুন নামকরণ করা হয় অযোধ্যা। তবে লোকসভার এই আসনটিকে এখনো ফৈজাবাদ বলা হয়।
একসঙ্গে রাহুল গান্ধী ও অখিলেশ যাদব
২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশের নির্বাচনে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী ও সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদবকে শেষবার একসঙ্গে প্রচার কার্যক্রম চালাতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফলে বিজেপি মোট ৩০২টি আসন পেয়েছিল। আর কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির জোট পেয়েছিল মাত্র ৪৭ আসন। এর সাত বছর পর আবারও ওই দুই নেতা একসঙ্গে জোটের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেন। বর্তমানে যা বোঝা যাচ্ছে তা যদি সঠিক হয়, তাহলে হয় এবার নির্বাচনের ফলাফল অন্যরকম হবে। কারণ এরই মধ্যে বিজেপির চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ইনডিয়া জোট।
মায়াবতী ফ্যাক্টর
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মায়াবতীর নেতৃত্বাধীন বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) উত্তর প্রদেশে কোনো আসনেই জয় পায়নি। কিন্তু ২০১৯ সালে দলটি ১০ আসনে জয় পেয়ে সবাইকে চমকে দেয়। গত নির্বাচনে দলটি সমাজবাদী পার্টির সাথে জোট গড়েছিল। তবে এবার সমাজবাদী পার্টি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ায় বিএসপি একাই নির্বাচন করে। এখন পর্যন্ত যা বোঝা যাচ্ছে তাতে বিএসপির পরাজয় হতে চলেছে বলেই মনে হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গণনার চার ঘণ্টা হয়ে গেলেও বিএসপিকে কোনো আসনে এগিয়ে থাকতে দেখা যায়নি।
এদিকে বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ৯টার দিকে আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে দেখা গেছে, নাগিনা আসনে জয় পেয়েছে দলিত নেতা চন্দ্রশেখর আজাদ। তার বিজয় এটাই ইঙ্গিতই দেয় যে মায়াবতীর অনুগত দলিত সম্প্রদায়ের ভোটাররা তাদের জন্য নতুন নেতৃত্ব খুঁজে নিলেন।
চন্দ্রশেখর আজাদের গড়া সামাজিক সংগঠন ভীম আর্মি গত এক দশক ধরে বিভিন্ন রাজ্যে দলিত ও অনগ্রসরদের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করছে। উত্তর ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিরোধী আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন চন্দ্রশেখর আজাদ।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক