নীতিশ, নাইড়ুকে জোট সরকারে রাখতে বিজেপিকে কী মূল্য দিতে হবে
গতকাল মঙ্গলবার (৪ জুন) ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। বুথফেরত জরিপগুলো বিজেপি ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করবে এমন পূর্বাভাস দিলেও– তেমনটা হয়নি, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অধরা থেকে গেছে দলটির। গত ১০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ভোটের ফল নিয়ে এমন তিক্ততার সম্মুখীন নরেন্দ্র মোদির দল। ফলে সরকার গঠনে তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স– এনডিএ জোটের দুই শরীক দলের সমর্থনের ওপর।
এ দুটি দল হচ্ছে – অন্ধ্র প্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডুর নেতৃত্বাধীন তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিএম), এবং বিহারের নীতিশ কুমারের জনতা দল-ইউনাইটেড (জেডি–ইউ)।
নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলে, টিডিএম ১৬টি আসনে জিতেছে, আর জেডি-ইউ জয় পেয়েছে ১২টি আসনে। ২৪০ আসনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। ৯৯টি আসনে জয় পেয়েছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। সরকার গঠনের জন্য দরকার ছিল লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে ২৭২টি। কিন্তু, এককভাবে তা না পাওয়ায় সরকার গঠনে গত দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো এনডিএ জোট শরীকদের সমর্থন নিতে হয়েছে বিজেপিকে।
জোটের প্রধান শরীকদের সমর্থন পাওয়ায়– আবারও প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন মোদি।
সমর্থনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরে আজ বুধবারে এনডিএ জোটের বৈঠক হচ্ছে দিল্লিতে। আজ সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া এ বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতিশ কুমার। বৈঠকের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হতে চলেছে নতুন সরকারের রূপরেখা, আর খুব সম্ভবত ক্ষমতার ভাগবন্টনও।
লোকসভা নির্বাচনে ভারতের বিরোধী দলগুলোর 'ইন্ডিয়া' জোট প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফল করেছে। তাদের মোট আসন ২৩২টি। ইন্ডিয়া জোটের পক্ষ থেকে নীতিশ ও নাইড়ুর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে– এমন গুঞ্জনের মধ্যেই টিডিপি এবং জেডি-ইউ জোর দিয়ে বলেছে, তারা এনডিএ জোটেই থাকবে।
এ দুই দলের হাতে আছে মোট ২৮টি আসন, এরসঙ্গে বিজেপির ২৪০ এবং অন্যান্য মিত্রদের আসন মিলিয়ে সরকার গঠনে দরকারি ২৭২টির চেয়ে বেশি আসন থাকছে এনডিএ জোটের।
এনডিএ জোট সরকারে আগেও ছিলেন নীতিশ ও নাইড়ু, বর্ষীয়ান ও ঝানু এ দুই রাজনৈতিক দর কষাকষির কলাকৌশল ভালোই জাননে, আর এটাও বোঝেন এই মুহূর্তে তাদের সমর্থন কতোটা গুরুত্বপূর্ণ বিজেপির কাছে।
বিজেপি যদি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেত– তাহলে জোট মিত্রদের যা পাওয়া যায়, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হতো। কিন্তু, নতুন সরকার গঠনে আসনের যে সংখ্যার খেলা– তা এই শরীকদের সামনে নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে।
বিজেপির কাছে জেডি-ইউ কী চায়, সেটি স্পষ্ট করেই জানিয়েছে, তবু মুখে কুলূপ এঁটে রয়েছে টিডিপি।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিকে জেডি-ইউ এর সিনিয়র নেতা কেসি ত্যাগী বলেছেন, আমন্ত্রণ জানানো হলে আমাদের দল সরকারে যোগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে। "নতুন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা বিহারকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা প্রদান এবং শেষজুড়ে একটি জাতপাতের জরিপ পরিচালনা।"
তবে এগুলো এনডিএ জোটে যোগদানের শর্ত নয় বলেও জানান তিনি।
"আমাদের সমর্থন শর্তহীন। কিন্তু, বিশেষ মর্যাদা না পেলে– বিহারের বেকারত্ব দূর হবে না। তাই বিহার থেকে এনডিএ যে সমর্থন পাচ্ছে সেটি বিবেচনায় নিয়ে এ রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আমরা আশা করছি।"
নির্বাচনের আগে বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোট যেসব বিষয়ে সরব হয়েছিল– তারমধ্যে অন্যতম ছিল এই জরিপের দাবি। নীতিশ কুমারের সাম্প্রতিক ভোল পাল্টানোর আগে – বিহারে আরজেডি ও কংগ্রেসের সাথে তিনি যে জোট সরকার গঠন করেছিলেন, তারা বিহারে একটি জাতপাত জরিপ পরিচালনাও করে।
অন্যদিকে টিডিপি নেতা চন্দ্রবাবু নাইড়ু হলেন আরো গভীর জলের। বিজেপির কাছে দাবিদাওয়ার বিষয়ে তিনি স্পষ্টভাবে কিছু বলেননি। তবে দলটির সূত্রগুলো জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্ত্রণালয় চাইতে পারে টিডিপি। অন্ধ্র প্রদেশের জন্য অগ্রাধিকারমূলক মর্যাদাও তাদের অন্যতম আরেক চাওয়া। এসব নিয়েই এনডিএ জোটের বৈঠকে আলোচনা করা হবে।
অনুবাদ: নূর মাজিদ