ভবিষ্যতের আপনার সঙ্গে কথা বলতে, উপদেশ নিতে চান? সুযোগ করে দেবে এআই
কখনও ভেবেছেন বর্তমানে বসে ভবিষ্যতের আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন? ২০ বছর বয়সি আপনি কথা বলতে পারবেন ৬০ বছর বয়সি আপনার কাছ থেকে—তার কাছ থেকেই জীবন নিয়ে নানা পরামর্শ নিতে পারবেন?
কী ভাবছেন, এ কাজের জন্য টাইম মেশিন প্রয়োজন? না, টাইম মেশিন ছাড়াই ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অভ টেকনোলজির (এমআইটি) একদল গবেষক এ কাজ অনেকটাই সম্ভব করেছেন।
এমআইটির গবেষকদের বানানো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত (এআই) একটি চ্যাটবট এ সুযোগ করে দেবে। এ চ্যাটবট ব্যবহারকারীর বেশি বয়সের প্রতিকৃতি তৈরি করবে এবং জীবন নিয়ে নানা জ্ঞানমূলক সদুপদেশও দেবে। এ চ্যাটবট তৈরির উদ্দেশ্য, একজন মানুষ আগামী দিনে কেমন হতে চায়, তা নিয়ে বর্তমানে আরও বেশি ভাবা।
ব্যবহারকারীর যুবক বয়সের চেহারার ওপর ভিত্তি করে ওই এআই তার বেশি বয়সের পাকা চুলভর্তি মাথা আর বলিরেখা পড়া চেহারার একটি প্রোফাইল ছবি বানাবে। এ চ্যাটবট বিশ্বাসযোগ্য 'সিনথেটিক' স্মৃতিও তৈরি করবে। ব্যবহারকারীর সফল জীবনের কাল্পনিক গল্প শোনাবে বানিয়ে বানিয়ে।
এ চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলার পর ব্যবহারকারীদের উদ্বেগ অনেকটা কমতে দেখা গেছে; সেইসঙ্গে তাদের মধ্যে উদ্যম হারানোর হারও কিছুটা কমতে দেখা গেছে।
ফিউচার ইউ নামক এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত প্যাট পাতারানুতাপর্ন বলেন, 'এর উদ্দেশ্য, দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা এবং আচরণের পরিবর্তন আনা। এটি মানুষকে বর্তমান সময়ে আরও বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নিতে উদ্দীপিত করতে পারে।'
এক আলোচনায় জীববিজ্ঞানের শিক্ষক হতে চাওয়া একজন শিক্ষার্থী তার ৬০ বছর বয়সরূপী চ্যাটবটকে প্রশ্ন করেছিলেন, তার পেশাজীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত কোনটি? চ্যাটবট উত্তর দিয়েছে, সে একজন অবসরপ্রাপ্ত জীববিজ্ঞানের শিক্ষক এবং খারাপ ফল করতে থাকার শিক্ষার্থীদের ভালো করতে সাহায্য করার সুন্দর স্মৃতিচারণ করে সে। চ্যাটবট বলে, 'ছাত্রছাত্রীদের চেহারা গর্ব আর অর্জনের আনন্দে ঝলমলিয়ে উঠতে দেখাটা দারুণ তৃপ্তিদায়ক ছিল।'
এ চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলার জন্য ব্যবহারকারীকে প্রথমে নিজে এবং তার পরিবার-পরিজন সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সেইসঙ্গে তার জীবন গড়ে দেওয়া অতীত অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যতে কেমন জীবন চান—এসব প্রশ্নেরও উত্তর দিতে হবে। এরপর নিজের একটি পোরট্রেট ছবি আপলোড করতে হয়। প্রোগ্রামটি ওই ছবি ব্যবহার করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ব্যবহারকারীর ৬০ বছর বয়সি একটি প্রতিরূপ তৈরি করে।
এরপর প্রোগ্রামটি ব্যবহারকারীর দেওয়া উত্তর বৃহৎ এক ল্যাংগুয়েজ মডেলে প্রবেশ করিয়ে তার বয়স্ক প্রতিরূপের জন্য সমৃদ্ধ 'সিনথেটিক' স্মৃতি তৈরি করে। এসবের ভিত্তিতেই ব্যবহারকারীর নানা প্রশ্নের উত্তর দেয় চ্যাটবটটি।
সবশেষে ওপেনএআইয়ের জিপিটি৩.৫ দিয়ে চালিত এ চ্যাটবট ব্যবহারকারীর বয়স্ক সংস্করণ হিসেবে তার জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলে।
পাতারানুতাপর্ন বেশ কয়েকবার তার 'ভবিষ্যৎ' সংস্করণের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানান, যে আলোচনা তার মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটে গেছে সেটি হচ্ছে, এ চ্যাটবট তাকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে তার বাবা-মা চিরকাল তার সঙ্গে থাকবেন না। তাই তিনি যেন তাদের সঙ্গে যতটা সম্ভব বেশি সময় কাটান।
এ প্রকল্পের ওপর লেখা গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, প্রকল্পটিতে পরীক্ষামূলকভাবে ৩৪৪ জন স্বেচ্ছাসেবক অংশ নিয়েছিলেন। তাদের সবাই-ই এ চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলার পর অনেকটা কম উদ্বিগ্ন বোধ করেছেন। সেইসঙ্গে নিজেদের ভবিষ্যৎ সত্তাকে আরও আপন ভাবছেন। যদিও নিবন্ধটি এখনও রিভিউ ও প্রকাশিত হয়নি।