ক্ষমতায় এসেই ধাক্কা খেলেন জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী, সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাল ক্ষমতাসীন দল
জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) নেতৃত্বাধীন জোট পার্লামেন্টে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। এটি এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল। খবর বিবিসির।
এলডিপি ও তাদের জোটের ছোট অংশীদার কোমেইতো মিলে মাত্র ২১৫টি আসন পেয়েছে। সেখানে সরকার গঠন করতে হলে কমপক্ষে ২৩৩ টি আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে হতো।
নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার নেতৃত্বে এলডিপি মাত্র কয়েকদিন আগেই এ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর ফলে ইশিবার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
গত সোমবার এক ভাষণে ইশিবা বলেন, এলডিপি 'কঠোর বিচার' পেয়েছে এবং তারা এ ফল শ্রদ্ধার সঙ্গেই মেনে নিবে।
নির্বাচনের আগে জাপানি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, পার্লামেন্টে এলডিপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালে ইশিবা দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। তিনি পদত্যাগ করলে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি সবচেয়ে স্বল্পমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিবেচিত হবেন।
২০০৯ সালের পর প্রথমবারের মতো এলডিপি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। ১৯৫৫ সালে দলটি গঠনের পর বেশিরভাগ সময়ই দেশের ক্ষমতা তাদের হাতেই ছিল।
তাদের এমন পতনের কারণ হিসেবে একাধিক কেলেঙ্কারি, ভোটারদের প্রতি উদাসীনতা ও কম জনপ্রিয়তাকে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে এ বছরের শুরুতের রাজনৈতিক তহবিল কেলেঙ্কারির পর দলটির জনপ্রিয়তা ২০ শতাংশের নিচে নেমে আসে।
এদিকে, প্রধান বিরোধী দল কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (সিডিপি) স্থানীয় সময় রাত ২টার দিকে মাত্র ১৪৮টি আসন পেয়েছে। বিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোটারদের বিশ্বাস অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার আগে সিডিপি'র জনপ্রিয়তা ছিল মাত্র ৬.৬ শতাংশ। সিডিপি নেতা ইয়োশিহিকো নোডা সোমবার বলেন, তিনি বর্তমান সরকারকে অপসারণ করতে অন্যান্য দলগুলোর সাথে কাজ করতে চান।
এলডিপির দীর্ঘদিনের সমর্থক মিউকি ফুজিসাকি ভোট গ্রহণ শুরুর আগে বিবিসিকে বলেন, "এবার দলগুলোকে বেছে নেওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে। আমি মনে করি মানুষ আগ্রহ হারাচ্ছে। তাছাড়া এলডিপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে কিন্তু বিরোধীরা পুরোপুরি স্পষ্ট নয় যে তারা আসলে কী করতে চায়।"
আত্মসমালোচনার অভাব সত্ত্বেও, জাপানের রাজনীতিতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দ্রুত পরিবর্তন এসেছে।
২০২১ সাল থেকে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনে করে এসেছেন ফুমিও কিশিদা। এ আগস্টে তিনি অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে ইশিবা প্রধানমন্ত্রী হন।
নির্বাচনটি এলডিপির জন্য একটি উদ্যোগ হিসেবে নেওয়া হয়েছিল। দলটি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে তাদের কলঙ্কিত ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছিল। একসময় প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা শিগেরু ইশিবা এ নির্বাচনকে 'জনগণের রায়' হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন।