গুরুত্বপূর্ণ ৭ অবস্থানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে রুশ বাহিনী: এই সংঘাতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে
গত মাসে রুশ সেনারা ডনবাস এবং কুরস্ক অঞ্চলে সাতটি দিক থেকে অগ্রসর হয়েছে। এর ফলে রুশ বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। দোনেৎসক পিপলস রিপাবলিক (ডিপিআর) এর পশ্চিম অংশে কুরাখোভো অপারেশন শেষের দিকে। রুশ বাহিনী আরও উত্তরে পোক্রোভস্ক নগর এলাকায় ঘেরাও শুরু করেছে।
কুরস্ক অঞ্চল: কিয়েভের ব্যর্থ আক্রমণ
২০২৪ সালের শেষের দিকে মস্কোর বাহিনী কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনাদের অবস্থান উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছে। অঞ্চলটি 'পুরোনো রাশিয়া'র অংশ। এতে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীকে (এএফইউ) এলগভ এবং রিলস্কের মতো কৌশলগত স্থানগুলোতে অগ্রসর হওয়া থেকে বাধা দিয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির কৌশল এই অংশের যুদ্ধে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করেছে।
৫ থেকে ৬ জানুয়ারি প্রায় তিনটি ইউক্রেনীয় ব্যাটালিয়ন বর্দিনের বসতবাড়ির ওপরে আক্রমণ চালায়। তবে রুশ বাহিনী তাদের দ্রুত শনাক্ত করে এবং রুশকয়ে ও চেরকাস্কয়ের দিক থেকে পাল্টা আক্রমণ চালায়। রুশকয়ে পোর্চনোয়েকে মুক্ত করে তারা। আরেকটি পালটা আক্রমণের লক্ষ্যবসতু ছিল মালায়া লোকনায় অঞ্চল।
ফটোগ্রাফিক প্রমাণ থেকে দেখা যায়, বর্দিনের কাছে একটি ইউক্রেনীয় ব্যাটালিয়ন ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি ২০২৩ সালের বিপর্যয়কর প্রতিরক্ষা আক্রমণের পর থেকে এএফইউ-এর সবচেয়ে বড় অভিযানগুলোর একটি। তাদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ইউক্রেনীয় সেনারা রুশ মাইনফিল্ডে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়।
এই সংঘর্ষের পর সামনের লাইন স্থিতিশীল রয়েছে এবং বড় আক্রমণের কোনো চিহ্ন নেই। তার পরিবর্তে ক্ষয়ক্ষতির কৌশল চালু থাকতে পারে, যতক্ষণ না ইউক্রেনের সম্পদ শেষ হয় অথবা পিছু হটবার নির্দেশনা না দেওয়া হয়।
তোরেৎস্ক এবং চাসভ ইয়ার: কনস্টানতিনোভকার দিকে প্রথম পদক্ষেপ
দোনেৎস্কের তোরেৎস্ক এবং চাসভ ইয়ারে মাসব্যাপী তীব্র লড়াইয়ের পর ফলাফল পাওয়া শুরু হয়েছে। জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি রুশ বাহিনী চাসভ ইয়ারে একটি আগুন প্রতিরোধক কারখানা দখল করে। ২০ জানুয়ারির মধ্যে শহরের কেন্দ্র, শহর কাউন্সিল ভবনসহ পুরো কেন্দ্রটি দখল করে নেয়। শহরের পশ্চিম অংশ এখনও ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এই অগ্রগতি রুশ বাহিনীকে কনস্টানতিনোভকা-এর [একটি প্রধান লক্ষ্য] কাছাকাছি অবস্থান তৈরি করতে সাহায্য করেছে। তবে এই দিকে অগ্রসর হতে রুশ সৈন্যদের সেভার্সকি দোনেতস-ডনবাস খাল বরাবর নিয়ন্ত্রিত এলাকা বিস্তার করতে হবে।
তোরেৎস্ক-তে রুশ বাহিনী সেন্ট্রালনয়া খনি, শহরের কেন্দ্র এবং একাধিক আবাসিক এলাকা দখল করেছে। ইউক্রেনীয় বাহিনী তোরেতস্কায় খনি এবং উত্তর-পূর্বের কিছু অংশ, যেমন ক্রাইমস্কয়ের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তোরেৎস্ককে সুরক্ষিত করা রুশ সেনাদের কনস্টানতিনোভকার দিকে আরও ১০ থেকে ১১ কিলোমিটার এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়। এটি রেলপথের পাশে অবস্থিত।
তবে, এই এলাকায় অপারেশনগুলোর কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চাসভ ইয়ারে সেভার্সকি দোনেতস-ডনবাস খাল দিয়ে সরবরাহ রুটগুলো সমস্যা তৈরি করছে, কারণ খালের গভীরতা কিছু জায়গায় দশ মিটার পর্যন্ত পৌঁছায়। অন্যদিকে, তোরেৎস্ক-এর ঘন শহুরে উন্নয়ন এবং চ্যালেঞ্জিং ভূখণ্ড রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রা জটিল করে তুলেছে। এই বাধাগুলোর পরেও, এই সেক্টরে অগ্রগতি ধীরে হলেও ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পোকরভস্ক-মিরনোগ্রাদ: ঘেরাও প্রক্রিয়াধীন
কুরাখোভো অপারেশনের পর রাশিয়ার পরবর্তী প্রধান আক্রমণের জন্য পোকরভস্ক একটি কেন্দ্রীয় স্থান। কৌশলটি একটি পরিচিত প্যাটার্ন অনুসরণ করছে: শহরটিকে ঘেরাও করা, সরবরাহ রুটগুলোর ওপর আগুনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এবং ইউক্রেনীয় সেনাদের সম্পদ শেষ করা।
পোকরভস্কের দক্ষিণ দিকটি ২০২৪ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে সেলিদোভো দখলের পর গঠিত হয়। এই এলাকা কুরাখোভোর উত্তরের দিক হিসেবেও কাজ করে। সূচকগুলো ইঙ্গিত করছে, পোকরভস্ক এবং মিরনোগ্রাদ মিলিয়ে একক একটি লক্ষ্যবস্তু হিসেবে হামলা করা হতে পারে।
জানুয়ারিতে রুশ ইউনিটগুলো দক্ষিণে পোকরভস্ক-মেজেভায়া হাইওয়ে এবং উত্তরে ভোজদভিজেনকার দিকে অগ্রসর হয়েছে। পোকরভস্ক-কনস্টানতিনোভকা হাইওয়ে কেটে ফেলা হয়েছে।
এই পদক্ষেপগুলো পোকরভস্ক এবং মিরনোগ্রাদকে ঘেরাও করার প্রথম পদক্ষেপ এবং একটি বৃহত্তর আক্রমণের সম্ভাবনা প্রদর্শন করছে। ২০২২ সালের পর প্রথমবারের মতো এটি দনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলে বিস্তৃত হতে পারে।
কুরাখোভো: অপারেশনের চূড়ান্ত পর্যায়
উগলেদার দখলের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর কুরাখোভো অপারেশন শুরু হয়। ৬ জানুয়ারি রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় কুরাখোভো এবং এর ব্যাপক শিল্প অঞ্চল মুক্তির ঘোষণা দেয়। রুশ বাহিনী নতুন বছরের শুরুতে শিল্প অঞ্চলের পশ্চিম অংশে প্রবেশ করে। সেখানে অল্প প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়, কারণ দুর্বল ইউক্রেনীয় গ্যারিসন তাদের অবস্থান ত্যাগ করে।
তিন মাসের মধ্যে রুশ বাহিনী শহরটি তিন দিক থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ঘেরাও করে, সরবরাহ রুটগুলোর ওপর আগুনের নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীকে পিছু হটাতে বাধ্য করে। তাদের আক্রমণ পশ্চিমে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বিস্তৃত হয়ে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে শক্তিশালী শহর এবং শিল্প অঞ্চলের বাইরে ঘেরাও করে।
তবে, অপারেশনটি এখনো শেষ হয়নি। আন্দ্রেভকা এবং কনস্টানতিনোভকা দখল করা জরুরি, যাতে সামনের লাইন স্থিতিশীল করা যায় এবং এই কৌশলগত অঞ্চলটি পুরোপুরি সুরক্ষিত হয়।
বৃহত্তর কৌশলগত পর্যবেক্ষণ
গত এক মাসের রুশ অগ্রগতি একটি সুশৃঙ্খল পদ্ধতির পরিচয় দেয়, যা ঘেরাও, সম্পদ শেষ করা এবং ধীরগতির ভূখণ্ডের অগ্রগতির দিয়ে চিহ্নিত হয়। তোরেৎস্ক এবং চাসভ ইয়ারে শহুরে লড়াই এবং সরবরাহ সংকটের চ্যালেঞ্জগুলো উঠে আসলেও, পোকরভস্ক এবং কুরাখোভোতে অগ্রগতি রাশিয়ার আক্রমণাত্মক কৌশলের কার্যকারিতা প্রদর্শন করে।
কুরাখোভো দখল এবং পোকরভস্ক ও মিরনোগ্রাদে অগ্রগতি ২০২২ সালের পর প্রথমবারের মতো দনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলে অপারেশনের পথ প্রশস্ত করতে পারে, যা কৌশলগত পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে সক্ষম।
যেহেতু যুদ্ধ চলছে, রাশিয়ার কৌশলের কার্যকারিতা এবং এর লজিস্টিক ও অপারেশনাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা একটি নির্ধারক ভূমিকা পালন করবে। আপাতত রুশ অগ্রগতি সংহত করা, সরবরাহ রুট সুরক্ষিত করা এবং পরবর্তী অপারেশনের প্রস্তুতির ওপর মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।