ইউক্রেন যুদ্ধের আলোচনা শুরু হয়েছে, পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর জানালেন ট্রাম্প
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/13/d._trump.jpg)
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি বুধবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক 'দীর্ঘ এবং অত্যন্ত ফলপ্রসূ' ফোনালাপে অংশ নিয়েছেন। উভয় নেতা ইউক্রেনের যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনা শুরু করার বিষয়ে সম্মত হন। খবর বিবিসি'র।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে উল্লেখ করেন, তিনি এবং রুশ প্রেসিডেন্ট তাদের নিজ দলকে অবিলম্বে আলোচনা শুরু করার নির্দেশ দিতে সম্মত হয়েছেন এবং একে অপরকে নিজ নিজ রাজধানীতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
এর পর, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে 'দীর্ঘস্থায়ী এবং নির্ভরযোগ্য শান্তি' প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলোচনা করেছেন।
যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে এই ফোনালাপ এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন ট্রাম্প এবং তার প্রতিরক্ষা সচিব উভয়েই বলেছেন, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এটি কিয়েভের জন্য একটি বড় হতাশার কারণ হতে পারে।
জেলেনস্কি জানান, তিনি শুক্রবার মিউনিখে ইউক্রেন বিষয়ক প্রতিরক্ষা সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, 'এখন এই হাস্যকর যুদ্ধ বন্ধ করার সময়, যেখানে ব্যাপক ও সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু ও ধ্বংস ঘটেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের জনগণের জন্য ঈশ্বরের আশীর্বাদ বর্ষিত হোক!'
যদিও তিনি পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের কোনো তারিখ নির্ধারণ করেননি, তবে হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, 'আমরা সৌদি আরবে সাক্ষাৎ করব।'
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, একসঙ্গে কাজ করার সময় এসেছে এবং পুতিন ট্রাম্পের এই ধারণাকে সমর্থন করেছেন। তিনি জানান, পুতিন এবং ট্রাম্পের মধ্যে ফোনালাপ প্রায় দেড় ঘণ্টা স্থায়ী হয় এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে মস্কো সফরের আমন্ত্রণ জানান।
হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেনের ২০১৪ সালের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'সেই ভূমির কিছু অংশ ফিরে আসবে।'
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানান, তিনি তার প্রতিরক্ষাসচিব পিট হেগসেথের সঙ্গে একমত। হেগসেথ বুধবার ন্যাটো সম্মেলনে বলেছেন, ইউক্রেনের সামরিক জোটে যোগদানের সম্ভাবনা নেই।
ট্রাম্প বলেন, 'আমি মনে করি, এটা সম্ভবত সত্য।'
ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় সমর্থন অব্যাহত রাখবে। ব্রিটিশ উপপ্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেনার আইটিভিকে বলেন, লন্ডনের কিয়েভের প্রতি সমর্থন 'অটল' রয়েছে।
বিবিসির জেমস ওয়াটারহাউজ জানান, মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব পিট হেগসেথের বক্তব্য কিয়েভের জন্য বড় ধাক্কা। নতুন মার্কিন প্রশাসন ইউক্রেনের প্রতি কম সহানুভূতিশীল এবং হেগসেথের মন্তব্য মস্কোকে সন্তুষ্ট করতে পারে।
হেগসেথ বলেন, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না, তারা জয়ী হতে পারবে না এবং স্থবির যুদ্ধরেখা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই। বিবিসির মতে, এটি রাশিয়ার দীর্ঘদিনের আগ্রাসনের সুবিধা বাড়াবে।
জেলেনস্কি বলেন, 'ইউক্রেন ছাড়া ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা হতে পারে না।' তবে ট্রাম্প এবং পুতিন তার অনুপস্থিতিতেই আলোচনা করেছেন। তবে তিনি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তার আলোচনা 'ভালো ও বিস্তারিত' ছিল এবং তিনি মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন।
তিনি লেখেন, 'ইউক্রেনের চেয়ে শান্তি আর কেউ বেশি চায় না।' তিনি আরও জানান, রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করছে। দুই নেতার ফোনালাপ এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়।
এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি রাশিয়ার দখলকৃত ইউক্রেনীয় ভূমির বদলে রাশিয়ার পশ্চিম কুরস্ক অঞ্চলের কিছু এলাকা বিনিময়ের প্রস্তাব দেন। তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, 'রাশিয়া কখনো তার ভূখণ্ড বিনিময় নিয়ে আলোচনা করেনি এবং করবে না।' তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীকে সেখান থেকে উৎখাত করা হবে বা ধ্বংস করা হবে।
জেলেনস্কি আরও বলেন, 'আমেরিকা ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চয়তা আসল নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নয়।'
২০১৪ সালে ইউক্রেনের প্রো-রাশিয়ান প্রেসিডেন্টকে উৎখাত করার পর রাশিয়া ক্রিমিয়া অধিগ্রহণ করে এবং পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন জানায়।
প্রায় তিন বছর আগে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর সংঘাতটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে পরিণত হয়। রাশিয়া কিয়েভ দখল করতে ব্যর্থ হলেও, বর্তমানে ইউক্রেনের পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সারা দেশে আকাশ থেকে হামলা চালাচ্ছে।
ইউক্রেন এর জবাবে আর্টিলারি, ড্রোন হামলা এবং কুরস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে স্থল যুদ্ধ চালিয়েছে।
দুই পক্ষের গোপনীয়তার কারণে সঠিক হতাহত সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন। তবে অনুমান করা হয়, কয়েক লাখ মানুষ নিহত বা আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই সেনা সদস্য। এবং লাখ লাখ ইউক্রেনীয় নাগরিক দেশ ছেড়ে শরণার্থী হিসেবে পালিয়ে গেছে।