এক ব্যক্তিকে গিলে নিয়ে ফের মুখ থেকে উগরে দিল তিমি
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/15/4e2e97d6-2177-460c-f845-08dd4a817620_w1023_r1_s.jpg)
কায়াকিং করছিলেন আদ্রিয়ান সিমানকাস। আচমকা মুখে এক পিচ্ছিল আস্তরণের স্পর্শ অনুভব করলেন।
'এক সেকেন্ড বাদেই বুঝতে পারলাম, আমি কোনো কিছুর মুখের ভেতরে রয়েছি। ওটা সম্ভবত আমাকে গিলে ফেলেছে। হয়তো কোনো ওর্কা তিমি, কিংবা সমুদ্রের কোনো দানব!' বিবিসি মান্ডোকে বলছিলেন ২৩ বছর বয়সি এই ভেনেজুয়েলান তরুণ।
পরক্ষণেই আদ্রিয়ান ভাবতে শুরু করলেন, পিনোকিওর মতো তিনিও কি হাম্পব্যাক তিমির পেটের ভেতর টিকে থাকতে পারবেন? তবে ভাবনাটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। কারণ কয়েক মুহূর্ত পরই দানবীয় প্রাণীটি তাকে আবার মুখ থেকে উগরে ফেলে দিল।
চিলির পাতাগোনিয়ান উপকূলের ম্যাগেলান প্রণালীতে কায়াকিং করছিলেন আদ্রিয়ান ও তার বাবা দাল সিমানকাস। সহসাই পেছন থেকে প্রচণ্ড জোরে কিছু এসে ধাক্কা দেয় তাকে, তারপর আঁকড়ে ধরে গভীরে টেনে নিয়ে যায়।
তার বাবা দাল মাত্র কয়েক মিটার দূরেই ছিলেন। পুরো ঘটনাটি তার ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
আদ্রিয়ান জানান, তিনি চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলেন। ফের চোখ খোলার পর বুঝতে পারেন, তিনি তিমির মুখের ভেতরে আছেন। পিচ্ছিল কিছু একটা তার মুখে লেগে যাচ্ছিল। চারপাশে কেবল গাঢ় নীল আর সাদা রঙের অন্ধকার।
'আমি ভাবছিলাম, ওটা যদি আমাকে পুরোপুরি গিলে নেয়, তাহলে কী করব? তখন তো আর লড়াই করার সুযোগ থাকবে না,' বলেন তিনি।
তবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আদ্রিয়ান টের পেলেন, তিনি যেন ওপরের দিকে ভেসে উঠছেন।
'আমি খানিকটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। জানতাম না কতটা গভীরে ছিলাম, আর নিঃশ্বাস ধরে রাখতে পারবো কি না। মনে হচ্ছিল অনেকক্ষণ ধরে ওপরে উঠছি। দুই সেকেন্ড ধরে ওপরে উঠে এলাম। তারপর বুঝতে পারলাম, ওটা আমাকে খায়নি।'
কাছেই নিজের কায়াকে বসে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে গোটা ঘটনা দেখছিলেন তার বাবা দাল সিমানকাস।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2025/02/15/6ab645d0-eae7-11ef-bd1b-d536627785f2.jpg)
চিলি সর্বদক্ষিণের শহর পান্টা অ্যারেনাসের উপকূলের ঈগল বে অতিক্রম করেছিলেন দুজনে। ঠিক তখনই পেছনে এক বিকট শব্দ শোনেন দাল। পেছনে ফিরে তাকিয়ে আদ্রিয়ানকে দেখতে পেলেন না তিনি।
'এক সেকেন্ডের জন্য আতঙ্কে জমে গেলাম। তারপর দেখলাম, ও সমুদ্রের ওপরে ভেসে উঠছে। এরপর চোখে পড়ল একটা বিশাল শরীর। ওটাকে আমি তিমি বলেই ধরে নিলাম, কারণ এর আকার ছিল বিশাল,' বলেন তিনি।
দাল তার কায়াকের পেছনে লাগানো ক্যামেরা লাগিয়েছিলেন সমুদ্রের ঢেউ ভিডিও করতে; তাতেই ধরা পড়েছিল এই অবিশ্বাস্য মুহূর্ত।
ভিডিওটি দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন আদ্রিয়ান। তার ধারণাও ছিল না, ঠিক কত বড় ছিল তিমিটি।
আদ্রিয়ানের জন্য এই অভিজ্ঞতা শুধু বেঁচে ফেরা নয়, 'দ্বিতীয় জীবন'ও বলা চলে। তিনি বলেন, 'তিমিটি যখন আমাকে উগরে দিল, মনে হলো যেন নতুন জীবন ফিরে পেলাম।'
ব্রাজিলের বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ রোশেদ জ্যাকবসন সেবা বলেন, আদ্রিয়ান যে এত দ্রুত তিমির মুখ থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন, এর পেছনে একটি সহজ কারণ রয়েছে। হাম্পব্যাক তিমির গলা বেশ সরু—বাড়ির পাইপলাইনের মতো। এই গলা ছোট মাছ ও চিংড়ি গেলার উপযোগী।
'তারা শারীরিকভাবে বড় কোনো জিনিস, যেমন কায়াক, টায়ার, এমনকি টুনার মতো বড় মাছও গিলতে পারে না,' বলেন সেবা। 'শেষতক গেলার ক্ষমতা না থাকায় তিমিটি কায়াকটিকে উগরে দেয়।'
তিনি আরও বলেন, এটি সম্ভবত নিছক দুর্ঘটনা ছিল। 'খুব সম্ভব তিমিটি একদল মাছ খাওয়ার সময় ভুলবশত কায়াকটিকেও গিলে ফেলে। খাবারের সন্ধানে তিমিরা যখন দ্রুত ভেসে ওঠে, তখন পথিমধ্যে কোনো বস্তুর সঙ্গে ধাক্কা লাগতে পারে কিংবা ভুলবশত সেটি তাদের মুখে চলে যেতে পারে।'