ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব বিশ্ব খাদ্য পরিস্থিতিতে, শরণার্থীদের রেশন অর্ধেকে নামালো ডব্লিউএফপি
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের প্রভাবে বিশ্ব এখন খাদ্য সংকটের মুখোমুখি। আর এই সংকট যেন বড় আকার ধারণ করার আগেই সামলে নেওয়া যায়, সেজন্য শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত লোকেদের রেশন (খাদ্য) প্রায় অর্ধেকে কমিয়ে এনেছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি)। খবর ব্লুমবার্গের।
ডব্লিউএফপির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলি সোমবার (২০ জুন) এক বিবৃতিতে বলেন, "শরণার্থীরা, যারা আমাদের ওপর নির্ভরশীল, তাদের খাদ্য রেশন কমানোর মতো হৃদয়বিদারক সিদ্ধান্ত নিতে আমরা বাধ্য হচ্ছি।"
জলবায়ুর পরিবর্তনের ধাক্কায় ফলন কম হওয়ায় একদিকে যেমন দাম বেড়েছে, অন্যদিকে যুদ্ধের প্রভাবে ক্ষুধার্তদের জন্য বরাদ্দের তহবিলও কমেছে অনেকাংশে। ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের পর থেকে বেড়েই চলেছে খাদ্যের দাম। যুদ্ধের কারণে খাদ্যশস্য ও উদ্ভিজ্জ তেলের মূল রপ্তানিকারক ইউক্রেন থেকে রপ্তানি তীব্রভাবে কমে যাওয়ায় দাম পৌঁছেছে রেকর্ড উচ্চতায়। আর এরসঙ্গে সদ্য হালকা হওয়া মহামারির প্রভাব তো আছেই।
এদিকে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সংকট মোকাবেলায় ইউক্রেন থেকে যেন গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পণ্যের রপ্তানি পুনরায় শুরু করা যায়, সেই প্রচেষ্টাও চলছে ধীর গতিতে।
জাতিসংঘের সংস্থাটি বলছে, খাদ্য রেশন কমানোর এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইথিওপিয়া, কেনিয়া, দক্ষিণ সুদান এবং উগান্ডায় বসবাসকারী শরণার্থীরা।
ডব্লিউএফপি'র কার্যক্রম জুড়ে ইতিমধ্যেই উদ্বাস্তুদের জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে রেশন কমানো হয়েছে।
জাতিসংঘের হিম্যানিটারিয়ান অফিস (ওসিএইচএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের বিস্তৃত শুষ্ক মরুভূমি জুড়ে প্রায় ১৮ মিলিয়ন মানুষ আগামী তিন মাস মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হবে। ওসিএইচএ'র মুখপাত্র জেনস লারকে জানান, এ অঞ্চল ৩.৮ বিলিয়ন ডলারের আবেদন করলেও তা থেকে ১২ শতাংশ কম অর্থায়ন করা হয়েছে।
গেল মে মাসে গণমাধ্যমে তিনি বলেছিলেন, "বার্কিনা ফাসো, চাদ প্রজাতন্ত্র, মালি এবং নাইজারের পরিস্থিতি ইতোমধ্যেই উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ অঞ্চলের মানুষ আগামী জুন থেকে আগস্ট- এ সময়ে মধ্যে চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হবেন।"
লারকের মতে, ২০১৪ সালের চেয়েও এবার ভয়াবহ একটি খাদ্য সংকট দেখতে যাচ্ছে বিশ্ব।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মতে, গেল বছর ৬৭ শতাংশ উদ্বাস্তু এবং আশ্রয়প্রার্থীরা এমন দেশ থেকে এসেছে, যে দেশগুলো খাদ্য সংকটে ভুগছে। কেবল ইউক্রেন থেকেই ৬ মিলিয়ন মানুষ পালিয়েছে চলতি বছরের ৬ মাসে। ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট যে আরও লাখ লাখ শরণার্থীর জন্ম দিতে চলেছে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বলছে, "খাদ্যের এই সংকট ধ্বংসাত্মক সংঘাত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্রতার সঙ্গে মিলিত হয়ে তৈরি হয়েছে, যা শরণার্থীদের ওপর হেনেছে সবচেয়ে বড় আঘাত।"
খাদ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চাদ প্রজাতন্ত্রের বাস্তুচ্যুত এবং উদ্বাস্তু লোকেদের রেশনের পরিমাণ ইতোমধ্যেই অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। সামনের জুলাই থেকে যদি পর্যাপ্ত তহবিল না পাওয়া যায়, তাহলে এই পরিমাণ আরও কমাতে বাধ্য হবে সংস্থাটি।
এছাড়া, বার্কিনা ফাসোতে কমানোর পাশাপাশি মৌরিতানিয়ার এমবেরা ক্যাম্পেও খাদ্য রেশনের পরিমাণ ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে।