মেরিনে চাকরি: যুগোপযোগী পাঠ্যসূচির অভাব কর্মসংস্থানের সুযোগ কমাচ্ছে
মুন্সীগঞ্জ মেরিন টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা তাদের চার বছরের একাডেমিক ক্যারিয়ারে একবারের জন্যও কোনো জাহাজে ভিজিট করতে পারেনি। তাদের নেই সমুদ্রগামী জাহাজের ইন্টার্নশিপও। ইমপ্লিমেন্টেশন মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন ডিভিশন (আইএমইডি) এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
ব্যবহারিক জ্ঞানের অভাব, পুরানো সিলেবাস, অপর্যাপ্ত ল্যাব এবং শিপিং মন্ত্রণালয়ের সমুদ্রগামী সার্টিফিকেশনের কারণে অনেক ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীই মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং শিপ বিল্ডিং এর চাকরি থেকে বঞ্চিত হয় বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।
মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, চাঁদপুর, সিরাজগঞ্জ ও বাগেরহাট জেলার ৫টি মেরিন ইনস্টিটিউটের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এই প্রতিবেদন।
সমুদ্রগামী জলযান পরিচালনায় এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্পে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির উদ্দেশ্যে ২০১০-২০১৭ মেয়াদে নতুন ৫টি মেরিন ইনস্টিটিউট স্থাপন করে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ।
নির্মাণকাজ ২০১৭ সালে শেষ হলেও এসব ইনস্টিটিউটে ছাত্র ভর্তি করা ২০১৫ সাল থেকে। এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা দুই বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। এর আগে বিএমইটির অধীনে শুধু নারায়ণগঞ্জে মেরিন ইনস্টিটিউট ছিল।
দেশে নতুন স্থাপিত মেরিন ইনস্টিটিউট থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং শিপ-বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চার বছরের ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করে ২০২২ সালের মধ্যে প্রায় ১,৪০৬ জন শিক্ষার্থী এসব ইন্সটিটিউট থেকে পাস করে বের হয়েছেন।
এদের মধ্যে শতকরা ৬৩.৫৮ জনের দেশে- বিদেশে চাকরি হয়েছে।
এ সেক্টেরে দেশে বিদেশে চাকরি সম্ভাবনা থাকলেও নানা প্রতিবন্ধকতায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক শিক্ষার্থী চাকরি পাচ্ছেন না বলে আইএমইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ।
পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের চাকরি হয়নি তাদের বেশিভাগই সুযোগের অভাব এবং পাঠ্যক্রমের সঙ্গে কাজের অসঙ্গতিকে চাকরি না হওয়ার কারণ হিসেবে দায়ী করছেন।
এছাড়া উচ্চতর পড়ালেখা, বিদেশ চলে যাওয়ার কারণে অনেকে কর্মক্ষেত্রে যোগ দেননি। বেতন কম অজুহাতে অনেকে চাকরিতে যোগ দেননি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইন্সটিটিউট অব মেরিন টেকনলোজি, চাঁদপুর এর অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত আলী টিবিএসকে বলেন, "আমাদের ইন্সটিটিউটগুলো প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন, যেখানে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের প্রণীত সিলেবাস অনুসরণ করা হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন অন্য ৫টি মেরিন একাডেমি আছে, যেখানে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী দেওয়া হয়। তাদের তুলনায় আমাদের কোর্স কিছুটা শর্ট।"
"এ কারণে আমাদের গ্র্যাজুয়েটদের ডিপার্টমেন্ট অফ শিপিং থেকে সিডিসি (কন্টিনিউয়াস ডিসচার্জ সার্টিফিকেট) পেতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়।"
তিনি জানান, "কারিগরী শিক্ষা বোর্ড আমাদের কারিকুলাম আরও সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে। যেসব কোর্সের ঘাটতি রয়েছে সেগুলো যোগ করা হবে।"
আইএমটি ফরিদপুরের একজন সিনিয়র শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, "যুগের চাহিদা অনুযায়ী ইন্সট্রুমেন্টগুলো আপডেটেড না। এ কারণে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কিছুটা সংকট আছে। এর ফলে, কোরিয়াতে চাহিদা থাকা সত্বেও সম্প্রতি আমরা পর্যাপ্ত সংখ্যক গ্রাজুয়েট সরবরাহ করতে পারিনি।"
প্রয়োজনের তুলনায় প্রশিক্ষিত শিক্ষক সংখ্যা অর্ধেকের তুলনায় কম জানিয়ে তিনি বলেন, "এ সেক্টরে যথেষ্ট চাকরি আছে। তবে কিছু শিক্ষার্থী ডিপ্লোমার পর উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যায়, অনেকে তাদের সেক্টর পরিবর্তন করে ফেলে।"
আইএমইডির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ৫টি ইনস্টিটিউটে দুটি ডিপ্লোমা কোর্স ছাড়াও শুরু থেকে ৬টি ট্রেডে স্বল্প মেয়াদের কোর্স চালু আছে। নতুন স্থাপিত এইসব ইনস্টিটিউট থেকে দেড় লাখ শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এদের সবারই বিদেশে চাকরি হয়েছে।
ট্রেডগুলো হলো- গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েল্ডিং এন্ড ফেব্রিকেশনস, ইলেকট্রিক ইন্সটলেশন, মেইনটেনেন্স, প্ল্যাম্বিং ফিটিং এবং ড্রাইভিং।