বন্যায় পাকিস্তানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১,১৬২
পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১,১০০ ছাড়িয়েছে। সংবাদপত্র ডনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আজ বুধবার (৩১ আগস্ট) পর্যন্ত বন্যায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৬২ তে। উত্তরাঞ্চল থেকে ধেয়ে আসা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে সিন্ধুর দাদু জেলা। এই এলাকার এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।
পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এনডিএমএ) দৈনিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৪ জুন থেকে এ পর্যন্ত বন্যায় সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এরমধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় আহত হয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৯৪১ জন এবং ৩৬ জন নিহত হয়েছেন।
দাদু জেলা প্রশাসক সৈয়দ মুর্তজা আলি পাকিস্তানি গণমাধ্যমকে জানান, তার জেলার অন্তত ১২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ও বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
তিনি আরও জানান, দাদু শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত খয়েরপুর নাথান শাহ এবং জোহি তালুকের মেইন নারা ভ্যালি (এমএনভি) ড্রেনে পানির স্তর ক্রমেই বাড়ছে।
এমএনভি ড্রেনে এভাবে পানির স্তর বাড়তে থাকলে দাদু শহর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, হিমবাহ গলা পানির সঙ্গে এভাবে ভারি বর্ষণ চলতে থাকলে পাকিস্তানের এক তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড তলিয়ে যেতে পারে পানির নিচে।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শেরি রেহমানও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একমত হয়ে বলেছেন, "গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ও গুরুতর জলবায়ু বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান।"
গেল সপ্তাহে সোয়াত নদী প্লাবিত হয়ে উত্তর-পশ্চিম খাইবার পাখতুনখোয়া (কেপি) প্রদেশে প্রবেশ করে বন্যার পানি। বিশেষ করে এই প্রদেশের চরসদ্দা এবং নওশেহরা জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এলাকার কয়েক হাজার মানুষের বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে, নিরুপায় হয়ে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র ও ত্রাণ শিবিরে।
প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র কামরান বনগাশ জানান, সরকারি আশ্রয় কেদ্রগুলোতে জায়গা না পেয়ে অনেকে রাস্তার ধারেও তাঁবু টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
নজিরবিহীন বর্ষা মৌসুমের প্রভাব পড়েছে পাকিস্তানের চারটি প্রদেশেই। প্রায় ৪ লাখ ঘরবাড়ি ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এবং এরসঙ্গে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাটে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে পাকিস্তানে।
এদিকে, জনগণের দুর্দশা কমাতে আন্তর্জাতিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছে পাকিস্তান সরকার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ পৃথকভাবে খাইবার পাখতুনখোয়ার বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে সফর শুরু করেছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শেষ পরিবারটি দুর্দশা সামলে না ওঠা পর্যন্ত বন্যাকবলিত এলাকায় সফর চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর জন্য অর্থ সহায়তাও ঘোষণা করেছেন।
"আমরা বেলুচিস্তানের জন্য ১০ বিলিয়ন রুপি এবং সিন্ধুর জন্য ১৫ বিলিয়ন রুপি ঘোষণা করেছি। আমি কেপির জন্য ১০ বিলিয়ন রুপি অনুদান ঘোষণা করছি। এনডিএমএ এবং প্রাদেশিক সরকার এই অর্থ কীভাবে ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে সহযোগিতা করবে," সফরকালীন এ ঘোষণা দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
- সূত্র: ডন