ডলারের একক রেট নির্ধারণে রোববার সিদ্ধান্ত দেবে এবিবি, বাফেদা
দেশের সার্বিক মার্কেটের উপর পর্যালোচনা করে ডলারের একক রেট নির্ধারণ করে দিবে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)। আগামী রোববার সংগঠন দুটি ফের আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এ দুটি সংগঠনের হাতে ক্ষমতা দেয়া হয়। বৈঠকে থাকা একাধিক কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ব্যাংকগুলো রপ্তানি আয় এনক্যাশমেন্ট করছে ৯৯ টাকা থেকে শুরু করে ১০২ টাকায়। এছাড়া ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স সংগ্রহ করছে ১০৮ টাকা থেকে ১১০ টাকায়। এই দুইটার সমন্বয় করে তারচেয়েও এক টাকা স্প্রেড রেখে ইম্পোর্ট সেটেলমেন্ট করছে। তাই গভর্নর এই তিনের সমন্বয়ের জন্য সংগঠন দুটিকে এমন দায়িত্ব দিয়েছেন।
বৈঠক শেষে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ-এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন টিবিএসকে বলেন, "আজকে আমাদের বৈঠকটি ছিল বাজারের সার্বিক তথ্য শেয়ারিংয়ের মিটিং। গভর্নর এবিবি ও বাফেদাকে দায়িত্ব দিয়েছে ডলার মার্কেট রেট নির্ধারণের জন্য। আমরা কী সিদ্ধান্ত নিতে পারি সেটা ভাবছি। আগামী রোববার আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবো।"
তিনি আরও বলেন, "সম্প্রতি আমরা মার্কেটে কিছু ভালো খবর শুনছি। গত আগস্টে দেশের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স ভালো অবস্থানে চলে এসেছে। এক-দুই মাসের মধ্যে আরও সহনীয় হয়ে যাবে। বর্তমানে যে অস্থিতিশীলতা আছে তখন আর থাকবে না।"
গভর্নর বলেছেন দুই-তিন মাসের মধ্যে ডলারের রেট স্বাভাবিক অবস্থানে চলে আসবে, সে বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, "বাংলাদেশ ছোট দেশ নয়। আমাদের ট্রেড ভলিউম অনেক বড়। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে বিভিন্ন ধরণের স্টেকহোল্ডার আছে। মার্কেটে ডলারের স্ট্যাবিলিটি আনার জন্য আরও কিছুটা সময় লাগবে," যোগ করেন তিনি।
বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আফজাল করিম বলেন, "ডলারের দাম যাতে আর না বাড়ে আমরা সে ধরনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। বাজার স্থিতিশীল করার জন্য যে ধরনের উদ্যোগ নেয়া দরকার তা নেয়া হবে। এজন্য আরো সপ্তাহখানেক সময়ের প্রয়োজন।"
এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান মাশরুর আরেফিন বলেন, বাস্তবে মার্কেটের অবস্থা কী তা বোঝার উদ্দেশ্যেই এ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "বাফেদা এবং এবিবি আলোচনা করে ডলারের যে রেট নির্ধারণ করবে, বাংলাদেশ ব্যাংক সেটিই মেনে নেবে। রেমিট্যান্স ও এক্সপোর্ট প্রসিডের দর নির্ধারণ করবে সংগঠন দুটি। পরে এই রেটের ওপর ভিত্তি করে বিসি সেলিং রেট ঠিক করবে তারা।"
তারা কবে সেটি নির্ধারণ করে জানাবে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, "আগামী রোববার বা সোমবারের মধ্যেই রেটটি আমাদের জানাবে বলেছে। এই ফিক্সড রেটটি প্রতিদিনই তাদের ওয়েবসাইটে দেয়া হবে।"
এলসি সেটেলমেন্টে ডলারের দাম বেড়েছে
একদিনের ব্যবধানে অন্তত ২ টাকা বেড়েছে ইমপোর্ট লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) সেটেলমেন্টে ডলারের দাম। বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ব্যাংকগুলো ডলারপ্রতি সর্বোচ্চ ১১১ টাকা নিয়েছে এলসি সেটেলমেন্টের ক্ষেত্রে। বুধবার ব্যাংকগুলো ১০৯ টাকা রেটে ডলার বিক্রি করেছিল।
এছাড়া রপ্তানিকারকদের এক্সপোর্ট পেমেন্ট এনক্যাশের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ১০৬ টাকা রেট দিয়েছে ডলারের। বুধবার ১০২ টাকা রেট দিয়েও রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে ডলার পেয়েছিল ব্যাংকগুলো।
এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে রেমিট্যান্সের ডলার কিনতে ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ ১১৪ টাকা রেট দিতে হয়েছে।
খোলাবাজারেও চড়া দামে কেনাবেচা হচ্ছে ডলার। বৃহস্পতিবার মানি চেঞ্জারগুলো ১১৩ টাকায় ডলার কিনে ১১৪ টাকায় বিক্রি করেছে। বুধবারও কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম এমনই ছিল। তবে মঙ্গলবার ১১২ টাকায় ডলার বিক্রি করেছিল মানি চেঞ্জারগুলো।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর মতিঝিল এলাকার একটি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের মালিক বলেন, সবখানেই এখন ডলারের দাম বাড়ছে। ব্যাংকগুলোই তো এখন ১১১-১১২ টাকা করে এলসি সেটেলমেন্ট করছে। সেক্ষেত্রে খোলাবাজারের রেট একটু বেশি হবেই।