পাসপোর্ট-ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই ভ্রমণ, ভোটদানে নিষেধ, রাজা তৃতীয় চার্লস সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য...
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর ব্রিটেনের নতুন রাজা ঘোষণা করা হয়েছে তৃতীয় চার্লসকে। ব্রিটিশ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরপরই বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা পাবেন নতুন রাজা। লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের সব রাজহাঁসের (মিউট সোয়ান) মালিক হওয়া এবং বছরে দুইবার জন্মদিন পালন করার মতো আরও অনেক অজানা-অদ্ভুত প্রথার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে নতুন ব্রিটিশরাজকে।
লাইসেন্স বা পাসপোর্টের প্রয়োজন নেই
ব্রিটেনের নতুন রাজা তৃতীয় চার্লস কোনো পাসপোর্ট ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন। রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো ভ্রমণের জন্য কোনো কাগজপত্র দেখাতে হবে না তাকে, কারণ নথিপত্র রাজার নামেই জারি করা হবে। আর সেই একই কারণে ব্রিটেনের একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাতে পারবেন রাজা তৃতীয় চার্লস।
দুটি জন্মদিন!
রাজা তৃতীয় চার্লসের মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বছরে দুটি জন্মদিন পালন করতেন। সদ্য প্রয়াত এই রানির আসল জন্মদিন ২১ এপ্রিল যা গোপনীয়তা বজায় রেখে পালিত হতো। কিন্তু জুন মাসের দ্বিতীয় মঙ্গলবার, যখন গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া বাইরে প্যারেড করার উপযুক্ত থাকে, তখন জনসম্মুখে পালিত হতো রানির আরেকটি জন্মদিন।
যেহেতু রাজা তৃতীয় চার্লসের জন্মদিন ১৪ নভেম্বর, অর্থাৎ শীতের শুরুতে; তাই তারও আরেকটি জন্মদিন পালন করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজা বা রাণীর জন্মদিন প্রকাশ্যে পালনের অনুষ্ঠানটি গত আড়াইশো বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে। ১৪০০র বেশি সৈন্য, ২০০ ঘোড়া এবং ৪০০ সঙ্গীতশিল্পী এই ডিসপ্লেতে অংশ নেন। রাজকীয় বিমানবাহিনী তাদের উড্ডয়ন-শৈলী প্রদর্শনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ করে এবং এসময় বাকিংহাম প্যালেসের ব্যালকনি থেকে তা উপভোগ করেন রাজপরিবারের সদস্যরা।
ভোটদানে নিষেধ
ব্রিটিশরাজ কখনো নির্বাচনে দাঁড়ান না এবং ভোটও দেন না। রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে রাজনৈতিক যেকোনো ইস্যুতে তাকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে হয়।
তবে সংসদ অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সংসদের আইন অনুমোদন এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাপ্তাহিক বৈঠকের মতো বিষয়গুলোর সাথে যুক্ত থাকতে পারেন তারা।
রাজহাঁস, ডলফিন এবং স্টার্জন
ব্রিটিশরাজ শুধু যে মানুষের উপরেই রাজত্ব করেন তা নয়, পশুপাখির উপরেও রয়েছে তার একচ্ছত্র মালিকানা। ১২ শতাব্দী থেকেই ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের সব মুক্ত জলাশয়ে বিচরণকারী সব মিউট সোয়ান প্রজাতির রাজহাঁসের মালিকানা দাবির অধিকার সংরক্ষণ করেন ব্রিটিশ রাজা বা রানি।
প্রতিবছর টেমস নদীর ধারে রাজহাঁসের সংখ্যা গণনা করা হয় যা এখন একটি সংরক্ষণ ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। এছাড়াও, ব্রিটিশ জলসীমার মধ্যে থাকা সকল স্টার্জন (মৎসবিশেষ) এবং ডলফিনেরও মালিক হবেন রাজা।
কবি নিয়োগ
প্রতি ১০ বছর পরপর একজন বিখ্যাত কবিকে নিয়োগ দেয় ব্রিটেন, যার কাজ হবে রাজার জন্য পদ্য রচনা করা। ১৭ শতাব্দী থেকে ব্রিটেনে চলে আসছে এ নিয়ম।
২০০৯ সালে প্রথম নারী কবি হিসেবে এই সম্মানজনক পদে নিয়োগ পান ক্যারল অ্যান ডাফি। তিনি ২০১১ সালে প্রিন্স উইলিয়ামের বিয়ে, ২০১৩ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেকের ৬০তম বার্ষিকী এবং ২০১৮ সালে প্রিন্স হ্যারির বিয়ে উপলক্ষে কবিতা রচনা করেন।
রাজকীয় ওয়ার্যান্ট
ব্রিটেনের রাজা বা রাণীকে যারাই পণ্যদ্রব্য সরবরাহ করেন বা সেবা দেন, তাদের জন্য রাজকীয় ওয়ারেন্ট একটি বিরাট সম্মানের ব্যাপার এবং ব্যবসায়ে লাভের সুযোগও বটে!
যেসব প্রতিষ্ঠানকে এই ওয়ারেন্ট দেওয়া হয়, তারা তাদের পণ্যের গায়ে রাজকীয় প্রতীক ব্যবহার করতে পারে। বারবেরি, ক্যাডবেরি, জাগুয়ার কারস, ল্যান্ড রোভার, স্যামসাং ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছে এই রাজকীয় ওয়ার্যান্ট রয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি