ফাইনালের আগে সানজিদার প্রেরণাদায়ী বার্তা
দ্বিতীয়বারের মতো মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। শিরোপার লড়াইয়ে আজ বিকাল সোয়া পাঁচটায় নেপালের দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক নেপালের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এই ফাইনালের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রেরণাদায়ী এক পোস্ট দিয়েছেন সানজিদা আক্তার। যেখানে নিজেদের শেষটা দিয়ে চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাংলাদেশের এই মিডফিল্ডার।
আগেও সাফের ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। তবে এবারের গল্পটা একেবারে ভিন্ন। অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে সাবিনা খাতুনের দল। মালদ্বীপ, পাকিস্তান, ভারতকে উড়িয়ে সেমি-ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। সেমিতে ভুটানকে আরও বড় ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট কাটেন সাবিনা-কৃষ্ণারা।
প্রতি ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে গোলবন্যায় ভাসালেও এখন পর্যন্ত একটি গোলও হজম করেনি বাংলাদেশের মেয়েরা। শুরুটা মালদ্বীপকে দিয়ে, শুরুর ম্যাচেই ৩-০ গোলের দারুণ জয়। পরের ম্যাচে পাকিস্তানকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে অধরা জয়ও এবার মুঠোয় এসেছে, মিলেছে ৩-০ গোলের জয়। আর সেমিতে ভুটানকে নিয়ে ছেলেখেলা করা বাংলাদেশ জেতে ৮-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে। চার ম্যাচে বাংলাদেশ গোল করেছে ২০টি, বিপরীতে নিজেদের জাল রেখেছে সুরক্ষিত।
ফাইনালেও একই ধারায় থাকতে চায় বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো শিরোপা উদযাপনে মাততে চান জীবন যুদ্ধে লড়তে অভ্যস্ত বাংলার লড়াকু মেয়েরা। ২২ বছর বয়সী সানজিদা তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা এক লেখায় সেটাই জানিয়েছেন। নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে লড়ার প্রতিশ্রতি জানিয়ে সবার কাছে দোয়াও চেয়েছেন তিনি।
সানজিদার ফেসবুক পোস্টটি তুলে ধরা হলো:
"দ্বিতীয়বারের মতো সাফ উইমেনস চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশ। প্রথমবার ফাইনাল খেলেছি ২০১৬ সালে। সেবার ভারতের বিপক্ষে আমরা হেরে যাই। পাঁচবার সাফের মঞ্চে এসে একবার রানার্সআপ, তিনবার সেমি-ফাইনাল এবং একবার গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিয়েছি আমরা।
আলহামদুলিল্লাহ, আমরা এবার মাঠে দারুণ ছন্দে রয়েছি, ফাইনালে প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নেপাল। স্বাগতিক হিসেবে ফাইনাল খেলা কিংবা স্বাগতিক দলের বিপক্ষে ফাইনাল খেলা সব সময় রোমাঞ্চকর। এ ছাড়াও এবারের ফাইনাল ম্যাচটি কিছুটা ভিন্ন। বহুদিন পর সাফ পাবে নতুন কোনো চ্যাম্পিয়ন দেশ। আর তাই এবার রোমাঞ্চকর একটি ফাইনাল ম্যাচ হতে যাচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় ফুটবল দলের হাত ধরে ২০০৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব পেয়েছিল বাংলাদেশ। এখনও আমরা সেই গল্প শুনি। বাংলাদেশ ফুটবলের বড় সাফল্যের মহাকাব্যে সেটি উজ্জ্বলতম অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এবার আমাদের জেতার সময় এসেছে। আমাদের দলের প্রতিটি সদস্য এটি জিততে মুখিয়ে আছে।
যারা আমাদের এই স্বপ্নকে আলিঙ্গন করতে উৎসুক হয়ে আছেন, সেই সকল স্বপ্নসারথিদের জন্য এটি আমরা জিততে চাই। নিরঙ্কুশ সমর্থণের প্রতিদান আমরা দিতে চাই। ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনীকে একপাশে রেখে যে মানুষগুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই। আমাদের এই সাফল্য হয়তো আরও নতুন কিছু সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া পেতে সাহায্য করবে। অনুজদের বন্ধুর এই রাস্তাটুকু কিছুটা হলেও সহজ করে দিয়ে যেতে চাই।
পাহাড়ের কাছাকাছি স্থানে বাড়ি আমার। পাহাড়ি ভাইবোনদের লড়াকু মানসিকতা, গ্রাম বাংলার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের হার না মানা জীবনের প্রতি পরত খুব কাছাকাছি থেকে দেখা আমার। ফাইনালে আমরা একজন ফুটবলারের চরিত্রে মাঠে লড়বো এমন নয়, এগারো জনের যোদ্ধাদল মাঠে থাকবে। যে দলের অনেকে এ পর্যন্ত এসেছে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, বোনের অলঙ্কার বিক্রি করে, অনেকে পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে।
আমরা জীবনযুদ্ধেই লড়ে অভ্যস্ত। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ে যাবো। জয়-পরাজয় আল্লাহর হাতে। তবে বিশ্বাস রাখুন, আমরা আমাদের চেষ্ঠায় কোনো ত্রুটি রাখবো না ইনশা আল্লাহ। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।"