‘মহিলা কোচ’ টিপ্পনী শোনা রব্বানীই এখন চ্যাম্পিয়ন কোচ
মেয়েদের ফুটবল নিয়ে কাজ করার জন্য একটা সময়ে অনেক ঠাট্টা-উপহাস হজম করতে হয়েছে গোলাম রব্বানী ছোটনকে। শুনতে হয়েছে 'মহিলা কোচ।' তবু দাঁতে দাঁত চেপে মেয়েদের ফুটবল নিয়ে কাজ করে গেছেন জাতীয় ফুটবল দলের স্থানীয় এই কোচ। অবশেষে পরিশ্রমের ফসল উঠেছে তার গোলায়, তিনি এখন চ্যাম্পিয়ন কোচ। নেপালকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ।
এমন দিনে ছোটনের চেয়ে খুশি মানুষ আর কে-ই বা হতে পারেন! তৃপ্তির ঢেকুর তুলে সংবাদ সম্মেলনে গেছেন বাংলাদেশের কোচ। কিন্তু এ সময় পুরনো দিনের কথাও মনে পড়ে গেছে তার। পিছু ফিরে সেই সব দিনের স্মৃতির পাতা ওল্টালেন ছোটন, যেখানে তার জন্য বরাদ্দ ছিল রাশি-রাশি ঠাট্টা-মশকরা। কাউকে নিয়ে অভিযোগ করেননি, তবে সেসব দিনের কথা অনেককেই যেন মনে করিয়ে দিতে চাইলেন তিনি।
এবারের আসরে অপ্রতিরোধ্য ছিল বাংলাদেশ। একটি ম্যাচেও হার মানেনি বাংলার অদম্য মেয়েরা, অপরাজিত চ্যাম্পিয়নের মুকুট পড়েছে সাবিনা খাতুনের দল। এই সাফল্যের কৃতিত্ব দলের সবাইকেই দিলেন ছোটন, পাশাপাশি মনে করলেন সেই সব মানুষের কথা; যাদের কাছ থেকে কেবল অবজ্ঞা মিলেছে তার।
বাংলাদেশের কোচ বলেন, 'এটা আমার একার সাফল্য নয়, সবার সম্মিলিত সহযোগিতায় আমরা এখানে এসেছি। আজ এই জিনিসটা বলতে হয়, যখন আমি মহিলা দলের কোচের দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন আমার বন্ধু-বান্ধবরাও আমাকে বলত যে 'মহিলা কোচ।' যখন রাস্তায় হেঁটে যেতাম, আমাকে বলা হত 'মহিলা কোচ।' এভাবে উপহাস করতো। আমার কাছে ওরকম লাগত না। আমি কাজকেই পছন্দ করতাম।'
পুরো আসরজুড়ে অবিশ্বাস্য ফুটবল খেলায় মেয়েদের স্যালুট জানান ছোটন, মনে করেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের কথাও। তিনি বলেন, 'প্রথমেই আমি মেয়েদের আবারও স্যালুট জানাব। তারা আসলে অবিশ্বাস্য ফুটবল খেলেছে। দেশের প্রতি, বাবা-মায়ের প্রতি তাদের যে কৃতজ্ঞতাবোধ, সেটা তারা দেখিয়েছে। আজ মেয়েরা এ পর্যন্ত এসেছে, তারা তৈরি হয়েছে।'
'ফেডারেশন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, উনি ২০১৬ সালে স্বপ্ন দেখেছিলেন (মেয়েদের নিয়ে), দীর্ঘমেয়াদী ট্রেনিং যদি আমরা করি, একসাথে মেয়েদের যদি রাখতে পারি, তাহলে মনে হয় সফলতা আসবে। সেটা আজ এসেছে। বাংলাদেশের যে ১৮ কোটি মানুষ, আজকের যে অবস্থা, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে, গণমাধ্যমকর্মীরা যেভাবে প্রশংসা করছেন, অবশ্যই ভালো লাগছে।' যোগ করেন তিনি।