করোনা দুর্যোগেও বসে নেই কল্যাণী
শতাধিক বাল্যবিয়ে এবং অসংখ্য নারী নির্যাতনের ঘটনা প্রতিরোধ করে এরই মধ্যে একাধিকবার সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছেন কল্যাণী হাসান। এবার তিনি নেমেছেন করোনা যুদ্ধে।
নিজ এলাকায় দিনরাত পরিশ্রম করে হ্যান্ডমাইকে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত সতর্কবার্তা প্রচার করছেন। দিনমজুর, দুস্থ ও দরিদ্রদের মাঝে বিনামূল্যে মাস্ক, সাবান এবং খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন তিনি। আর দশজন নারী থেকে ব্যতিক্রম কল্যাণী হাসানের এসব উদ্যোগ স্থানীয়দের দৃষ্টি কেড়েছে।
জানা গেছে, নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার দিগদাইর গ্রামের কামরুল হাসান ভূঁইয়ার স্ত্রী কল্যাণী হাসান পেশায় একজন প্রাথমিক শিক্ষিকা। এ ছাড়া উপজেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদকও তিনি।
গত কয়েক বছরে কেন্দুয়া উপজেলার শতাধিক কিশোর-কিশোরীর বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করেছেন তিনি। বিচার প্রাপ্তিতে সহযোগিতা করেছেন অসংখ্য নির্যাতিতা নারীকে। তার এসব উদ্যোগের কথা স্থানীয়রা সবাই কমবেশি জানেন। এবার তিনি মাঠে নেমেছেন করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে।
গত এক সপ্তাহ ধরে গ্রামে গ্রামে গিয়ে হ্যান্ডমাইকে সতর্কবার্তা প্রচার করছেন। চারজন শ্রমিক দিয়ে নিজ বাড়িতেই তৈরি করছেন মাস্ক। এরই মধ্যে দেড় হাজার মানুষের মাঝে মাস্ক এবং সাবান বিতরণ করেছেন। গত দু'দিন ধরে বিতরণ করছেন খাদ্য সহায়তা। দু'দিনে চারশ'টি দরিদ্র, দুস্থ, ছিন্নমূল, দিনমজুর, হিজড়া এবং হরিজন সম্প্রদায়ের পরিবারের মাঝে চাল, ডাল এবং আলু বিতরণ করেছেন।
কেন্দুয়া সদরের শান্তিবাগের বাসিন্দা বৈশাখী হিজড়া বলেন, 'দোকানপাট সব বন্ধ থাকায় গত কয়েকদিন যাবত আমরা বাজার থেকে তোলা (চাঁদা) তুলতে পারছিলাম না। আমাদের হিজড়াদের অনেকের মধ্যে খাদ্যসঙ্কট চলছিল। কল্যাণী দিদি আমাদের প্রত্যেককে চাল-ডাল দিয়ে সহযোগিতা করায় আমরা এখন দু'বেলা খেতে পারছি।'
সাউদপাড়ার ভিক্ষুক জহুরা বলেন, 'যখনই বিপদ-আপদে পড়ি- তখনই কল্যাণী দিদি আমরারে সাহায্য করুইন। আইজও ডাইক্যা নিয়া আমারে চাউল, ডাইল এবং আলু দিছুইন। হেইন একজন উপগারী মানুষ।'
পাঁচ-ছয়দিন ধরে রিকশা চালাতে না পেরে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম সঙ্কটে পড়েছিলেন টেংগুড়ি এলাকার রিকশাচালক বাচ্চু মিয়া। তিনিও সোমবার কল্যাণী হাসানের কাছ থেকে চাল-ডাল এবং আলু নিয়ে গেছেন।
বাচ্চু মিয়া বলেন, 'কল্যাণী বেডির সাহায্যে আপাতত দুইদিনের লাইগ্যা চিন্তামুক্ত অইছি।'
কল্যাণী হাসান জানান, 'প্রথমে আমি নিজের আর্থিক সামর্থ দিয়েই শুরু করেছিলাম। এখন কেউ কেউ আমাকে কিছু আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন। আমার সঙ্গে ১০-১২ জন স্বেচ্ছাসবী বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করছেন।'
'চর্চা সাহিত্য আড্ডা' নামে স্থানীয় একটি সংগঠনের সমন্বয়কারী রহমান জীবন বলেন, 'কল্যাণী হাসান আমাদের অনেকের কাছেই অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি এর আগেও বিভিন্ন আপদে-বিপদে মানুষের পাশে এভাবেই সহযোগিতা করেছেন। তিনি সত্যিকারের একজন সমাজকর্মী।'
কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-ইমরান রহুল আমিন বলেন, 'সমাজসেবী কল্যাণী হাসানের সামাজিক কর্মকা- সম্পর্কে আমি অবগত। এ ধরনের উদ্যোগের জন্য আমি তাকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাই।'