কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার ‘ঈশ্বরের হাত’ গোল দেওয়ার জার্সি
১৯৮৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে 'ঈশ্বরের হাত' নামে বহুল আলোচিত গোলটি দেন দিয়াগো ম্যারাডোনা। আজো যা নিয়ে ঝড় বয়ে যায় ক্রীড়ামোদীদের চায়ের আড্ডায়। গোলটি দেওয়ার সময় 'ফুটবল বিধাতা' যে জার্সি পরেছিলেন– সেটা এবার ঠাই পাবে কাতার বিশ্বকাপের প্রদর্শনীতে।
মাস পাঁচেক আগেই নিলামে রেকর্ড দরে বিকোয় জার্সির শার্টটি। ৯৩ লাখ ডলার দামে কিনে নেন পরিচয় গোপন করা এক ক্রেতা। তার কাছ থেকেই শার্টটি ধার করেছে কাতারের ৩-২-১ স্পোর্টস মিউজিয়াম। আগামী রোববার থেকে আগামী বছরের ১ এপ্রিল পর্যন্ত জাদুঘরটির শোভা বাড়াবে এটি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাতারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা।
ওই ক্রেতার নাম প্রকাশ করেনি কাতার। তবে গত ৪ মে তিনি জার্সিটি রেকর্ড দামে কেনার পর থেকেই তার সাথে এটি ধার নেওয়ার আলোচনা শুরু করে কাতারি কর্তৃপক্ষ।
কাতার মিউজিয়ামসের প্রধান এবং দেশটি শাসনকারী রাজপরিবারের সদস্য– শেখ আল মায়িশা বিনতে হাম্মাদ বিন খলিফা আল থানি বলেন, বিশ্বকাপের বিশেষ প্রদর্শনীতে রাখার জন্য শার্টটি সংগ্রহ করতে পেরে খুবই উচ্ছ্বসিত বোধ করছেন।
এবিষয়ে বার্তাসংস্থা এএফপি'কে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'এই জার্সি অনেক পথ পাড়ি দিয়েছে। আর এই যাত্রার শুরু হয় যখন ম্যাচের পর নটিংহাম ফরেস্টের মিডফিল্ডার স্টিভ হজ ম্যারাডোনার সাথে জার্সি বিনিময় করেন। ফিরে দেখলে একে একটি ইতিবাচক, উদ্দীপক ক্ষণ বলাই যায়'।
ইংল্যান্ডের বনাম আর্জেন্টিনার কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটির অ্যাজটেক স্টেডিয়ামে। এতে ২-১ গোলে হারে ইংল্যান্ড। আর্জেন্টিনার হয়ে দুটি গোলই দেন ম্যারাডোনা।
ফুটবল ইতিহাসে এই ম্যাচটির মতো আলোচিত-সমালোচিত ম্যাচ আর নেই। এর বদৌলতেই কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন দিয়াগো।
ইংল্যান্ডের গোলকিপার পিটার শিলটনের বাধা এড়িয়ে প্রথম গোলটি দিতে ফুটবলে 'পাঞ্চ' কষেছিলেন ১০ নম্বর জার্সিটি পরিহিত ম্যারাডোনা। পরবর্তীতে গোলটি সম্পর্কে বলেছিলেন, 'এতে কিছুটা ম্যারাডোনার মাথা ছিল, আর কিছুটা ছিল ঈশ্বরের হাত'।
প্রথম গোলের পরেই পাঁচ ইংলিশ ডিফেন্ডারকে তুমুল গতি আর নৈপুণ্যে পাশ কাটিয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেন ফুটবল জাদুকর। ২০০২ সালের ফিফা পরিচালিত জরিপে এটি 'শতাব্দীর সেরা গোল' হিসেবে নির্বাচিত হয়।
ম্যারাডোনার জার্সিটি ম্যানচেস্টার মিউজিয়ামকে ২০ বছরের জন্য লোনে দেন হজ। এরপর এটি নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। নিলামে আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন-সহ ছয় উচ্চ দরদাতাদের হারিয়ে এটি কেনেন পরিচয় গোপনকারী এক ক্রেতা।
নিলাম সংস্থা -সোথবি এটি যত দামে বিক্রির আশা করেছিল– চূড়ান্ত দর পাওয়া গেছে তার দ্বিগুণেরও বেশি।
দুঃখজনক হলেও জার্সিটি আর চাক্ষুষ করতে পারছেন না ম্যারাডোনা। ২০২০ সালেই ৬০ বছর বয়সে তিনি জন্মভূমি আর্জেন্টিনায় হার্ট অ্যাটাকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
'ফুটবল ঈশ্বর' রেখে গেছেন অসামান্য সব স্মৃতি। বিশ্ব ফুটবলকে দিয়ে গেছেন অতুলনীয় সব মুহূর্ত। জার্সিটিও তেমন স্মৃতি আর মুহূর্তেরই তো সাক্ষী।
- সূত্র: এনডিটিভি