অনলাইন ব্র্যান্ড প্রমোটার: পণ্যের গুণাগুণ বর্ণনা করে ঈর্ষণীয় আয়!
"আসসালামু ওয়ালাইকুম সবাইকে। আমি শেহেরীন আমিন সুপ্তি, নতুন ফিচার নিয়ে চলে এসেছি 'দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড' পত্রিকার অনলাইন পোর্টালে। আজকে আপনাদের জানাব বর্তমানে ইন্টারনেট জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় পেশার খুঁটিনাটি সম্পর্কে!"
অনলাইন কেনাকাটায় যারা অভ্যস্ত, এই বিশেষ ধরনের ইন্ট্রো দেখে তারা হয়তো আঁচ করে ফেলেছেন সেই পেশাটি কী। বলছিলাম ব্র্যান্ড প্রমোটার বা লাইভ প্রেজেন্টারদের কথা। ই-কমার্স বা এফ কমার্সের সাথে দেশের মানুষের পরিচয় বেশ কয়েক বছর আগে হলেও অনলাইনভিত্তিক ব্যবসাগুলো মানুষের ভরসার জায়গা অর্জন করতে পেরেছে গত দুই-আড়াই বছরেই। করোনাকালীন এসব ব্যবসার প্রসারের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পেশাদার ব্র্যান্ড প্রমোটিং বা লাইভ প্রেজেন্টিং এর কাজটিও। ব্র্যান্ড প্রমোটাররা বিক্রয়যোগ্য নানা পণ্যের গুণমান, দামসহ বিস্তারিত সব তথ্য তুলে ধরেন অনলাইন লাইভে এসে। বর্তমানে নানা অঙ্গনের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্বরা তাদের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে যুক্ত হচ্ছেন ব্র্যান্ড প্রমোটিং এর সাথে।
কয়েক বছর আগেও ব্র্যান্ড প্রমোটার বলতে মানুষ জানতো নির্দিষ্ট কোম্পানি থেকে নিয়োগকৃত কর্মচারীদের, যারা সরাসরি কাস্টমারদের কাছে গিয়ে সেই কোম্পানির পণ্যের প্রচারণা চালাতেন। তাদের মাসিক আয়ও ছিলো খুব সীমিত। তবে গত দুই বছরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মাঝে এ পেশা সম্পর্কে ধারণার আমুল পরিবর্তন ঘটেছে। এখনকার ব্র্যান্ড প্রমোটাররা অনলাইন লাইভের মাধ্যমেই পৌঁছে যান কাঙ্ক্ষিত দর্শকদের কাছে। তারা শুধু একটি কোম্পানির সাথেই চুক্তিবদ্ধ থাকতে বাধ্য না, ইচ্ছামতো কাজ করতে পারেন অনেক কোম্পানির সাথে। ঈর্ষণীয় আয়ও আছে তাদের। ৪৫ মিনিট-এক ঘণ্টার একটি লাইভ থেকে যাদের অনেকেই আয় করেন ২০-৬০ হাজার টাকা।
ব্র্যান্ড প্রমোটারদের এই আয় নিয়ে অবশ্য অনলাইন জগতে সমালোচনাও চলে হররোজ। কারো কারো মতে "মুখে আটা-ময়দা মেখে ঘণ্টাখানেক ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বকবক করেই" এত টাকা চার্জ করা রীতিমতো ডাকাতি! আবার কেউ কেউ তাদের ফেরিওয়ালা বলেও মজা নেন। তবে এসব সমালোচনাকে ছাপিয়েই একেকজন ব্র্যান্ড প্রমোটার তার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে নিয়েছেন সামাজিক মাধ্যমের দর্শক-ক্রেতা আর ব্র্যান্ড মালিকদের কাছে। কাজের প্রতি সত্যিই কতটা নিবেদিত থাকলে লাখ লাখ দর্শকের আস্থা অর্জন করা যায় তা জানতে কথা বলেছি এসময়ের জনপ্রিয় কয়েকজন ব্র্যান্ড প্রমোটারের সঙ্গে।
বারিশা হক
ট্রেডিশনাল কিংবা অনলাইন মিডিয়া দুই জায়গাতেই সমানভাবে জনপ্রিয় তারকা বারিশা হক, যিনি বারিশ হক নামেই বেশি পরিচিত। ২০০৮ সাল থেকেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে স্কুল পর্যায়ের কুইজ-বিতর্ক প্রতিযোগীতার মাধ্যমে মিডিয়ার সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। পরবর্তীতে বুলবুল ললিতকলা একাডেমি থেকে নাচের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর থেকেই বিভিন্ন স্টেজ শো-তে নাচ, মডেলিং, অভিনয় আর উপস্থাপনার কাজ করতে থাকেন তিনি। কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনের নানা ঘটনার মাধ্যমে মিডিয়ার আলোচনা-সমালোচনায় থেকেছেন প্রায়ই। ফেসবুকে তার অসংখ্য ফলোয়ার।
"করোনায় যখন স্টেজ শো-সহ শোবিজ ইন্ডাস্ট্রির সব ধরনের কাজ বন্ধ হয়ে গেল, তখন আমি একটা অল্টারনেটিভ কিছু করার চেষ্টা করছিলাম। আমার আর্নিং সোর্সটা ঠিক রাখার জন্যই অন্য কোনো সেক্টরে কাজের সুযোগ খুঁজছিলাম। তখনি দেখলাম ব্র্যান্ড প্রমোটিং-এ অনেকেই খুব সফলতার সাথে কাজ করছে। ঘরে থেকেই কাজটা করা যেত বলে সেখান থেকেই আমার এই পেশায় যাত্রা শুরু," বলছিলেন বারিশ হক।
বর্তমানে তার অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজটি ফলো করেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। অনলাইন ব্যবসা বাড়ার সাথে সাথে লাইভ প্রেজেন্টারদের চাহিদাও বাড়ছে সমান তালে। তাই প্রতিদিনই কমপক্ষে ৩-৪টি লাইভ করতে হয় বারিশকে। ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখের মতো উপলক্ষ বা শীতের মৌসুমে কাজের চাপ বেশি থাকলে দৈনিক লাইভের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭-৮টিতে। পণ্যের ধরণ অনুযায়ী লাইভপ্রতি বারিশের পারিশ্রমিক বর্তমানে ৩০-৬০ হাজার টাকা।
বারিশ হকের টিমে বর্তমানে কাজ করেন ৮ জনের মতো। তার ফেসবুক পেইজ ম্যানেজ করা, শিডিউল ঠিক করা, প্রোডাক্ট রিসিভ-ডিসপ্যাচ করা, সেগুলো গুছানো, মেকআপ করা, ছবি তোলাসহ যাবতীয় সব কাজে সাহায্য করেন তারা।
শাম্মা রুশাফি অবন্তী
নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে আইইএলটিএসের প্রশিক্ষক, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ই কমার্স ব্র্যান্ডের জনসংযোগ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন শাম্মা রুশাফি অবন্তী। তবে দেশের জনপ্রিয় নায়ক সিয়াম আহমেদকে বিয়ে করার পর হয়ে ওঠেন মিডিয়ার পরিচিত মুখ। ২০২১ সালে মা আর স্বামী সিয়ামের অনুপ্রেরণায় এক বন্ধুর ব্যবসায়ীক পেইজের জন্য শুরু করেছিলেন ব্র্যান্ড প্রমোটিং। প্রথমে পেশাদার চিন্তা না থাকলেও ধীরে ধীরে কাজের প্রতি ভালোবাসা থেকে স্থায়ী হন এই কাজে।
বর্তমানে অবন্তীর অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ "ShammaShadows"-এর ফলোয়ার সংখ্যা সাড়ে ৬ লাখেরও বেশি। প্রতিদিনই প্রায় ২-৩টা প্রমোশনাল লাইভের কাজ করেন তিনি। তবে নতুন মা হওয়ার কারণে কাজের সংখ্যা অনেকটাই সীমিত করতে চাইছেন এখন। লাইভপ্রতি অতিরিক্ত পারিশ্রমিক নেওয়ার পক্ষপাতি না অবন্তী। বাসা থেকে করা লাইভগুলোতে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক নেন তিনি। তবে নামী-দামী কোনো ব্র্যান্ডের কাজে বাসা বাইরে গিয়ে কাজ করতে হলে সঙ্গত কারণেই আরেকটু বেশি চার্জ করেন।
লামিয়া মোক্তার লিন্ডা
ফেসবুকে লাইভ অপশন চালু হওয়ার পর থেকেই নিজের পেইজে মেকআপ নিয়ে নানান ভিডিও করতে শুরু করেছিলেন লামিয়া মোক্তার লিন্ডা। দেশে ব্র্যান্ড প্রমোটিং এ পথিকৃতদের একজন বলা যায় তাকে। প্রায় ৬ বছর ধরে ব্র্যান্ড প্রমোটিং এর কাজ করছেন তিনি।
"নিজের ভালোবাসার জায়গা থেকেই মেকআপ নিয়ে কথা বলা, মেকআপ কম্পেয়ার করা, মেকআপ নিয়ে আমার আইডিওলজিটা সবার মাঝে তুলে ধরা, ভালো-খারাপ নানা দিক, কীভাবে করতে হবে মেকআপ ইত্যাদি নানা বিষয়ে কথা বলতাম আমি। শুরুটা হয়েছিল ইউটিউব দিয়ে। পরবর্তীতে ফেসবুকে আসি। একটা সময়ে কিছু কিছু ব্র্যান্ড আমার কাছে আসে তাদের প্রোডাক্টের ব্যাপারে ম্যাস অডিয়েন্সকে জানাতে। সেই থেকেই কাজের শুরু। তবে সেসময়ে প্রমোটিং কোনো বিজনেসের মতো ছিল না। এখন কাজের জায়গা অনেক বিস্তৃত। মানুষ চাইলেই ব্র্যান্ড প্রমোটার হিসেবে কাজ করতে পারেন," বলেন লিন্ডা।
কাজের ব্যাপারে বেশ সিলেক্টিভ তিনি। 'কোয়ান্টিটি'র চেয়ে 'কোয়ালিটি'কেই এগিয়ে রাখতে চান তিনি। ঈদ বা বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া দিনে একটার বেশি প্রমোশনাল লাইভ করতে চান না লিন্ডা। যেকোনো প্রডোক্ট প্রমোশনের আগে অনেকটা সময় নিয়ে সেটি সম্পর্ক নিজে জানার চেষ্টা করেন। মূলত স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড আর মেকআপ প্রোডাক্ট নিয়েই কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
ফেসবুকে লামিয়া মোক্তার লিন্ডার অফিশিয়াল পেইজে ফলোয়ার সংখ্যা আড়াই লাখের বেশি। ব্র্যান্ড প্রমোটিং এর পেশাদার কাজের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সামর্থ্য অনুযায়ীই সম্মানী দাবী করেন লিন্ডা। পরিস্থিতিভেদে ফ্রি-তে কাজ করে দিতেও দ্বিধা নেই তার।
নুসরাত আকতার লোপা
পোশাকের ব্র্যান্ড 'হুর নুসরাত' দিয়ে অনলাইন-অফলাইন জগতে সমানভাবে জনপ্রিয় নুসরাত আক্তার লোপার নাম। ২০১৫ সাল থেকে অনলাইন ব্যবসা শুরু করার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি তৈরি করেছেন অনেক নতুন কর্মসংস্থান। প্রতিনিয়ত তরুণদের অনুপ্রাণিত করেন নানা কাজে। প্রফেশনালি ব্র্যান্ড প্রমোটিং এর কাজে যুক্ত না হলেও প্রায়ই ছোট-বড় নানান প্রতিষ্ঠানের অনুরোধ রাখতে করেছেন লাইভ প্রেজেন্টিং এর কাজ। নতুনদের এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে তাগিদ দিয়েছেন তিনি প্রায়ই।
জনপ্রিয় পেশাদার ব্র্যান্ড প্রমোটারদের সম্পর্কে নুসরাত বলেন, "দিন-রাত প্রচুর কষ্ট করে তারা এই অবস্থানে এসেছেন। নিজেদের একটা ফেইস ভ্যালু তৈরী করতে হয়েছে তাদেরকে, যা তাদের এত বেশি আয়ের যোগ্য করে তুলেছে। একদিনে তা সম্ভব হয়নি। কষ্ট ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। নতুন যারা এই কাজে আসতে চায় তাদেরকে অবশ্যই কষ্ট করেই নিজেদের তৈরি করতে হবে।"
নিজের ভ্যারিফাইড ফেসবুক একাউন্টেই নুসরাতের ফলোয়ার চার লাখের উপর। তাদের সামনে তিনি নিজের ব্র্যান্ড ছাড়াও অন্যান্য ব্র্যান্ডের প্রচার করেন প্রায়ই। অন্য কাজের ব্যস্ততায় কখনো এক্ষেত্রে সময় দিতে না পারলেও নতুনদের পরিচয় করিয়ে দেন নুসরাত। ব্র্যান্ড প্রমোটারদের- প্রমোটার বলা যায় তাকে। যারা নতুন কাজ করছেন তাদের দিকনির্দেশনা দিয়ে সাহায্য করতে কোনো কৃপণতা নেই তার।
তবে এই ইন্ডাস্ট্রিতে বর্তমানে কাজের সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে না বলে আক্ষেপও জানান নুসরাত আক্তার। "কিছু কিছু মানুষ অনেক অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছেন আবার কিছু মানুষ টাকাই পাচ্ছেন না। সঠিক মূল্যায়নের অভাবে অনেকেই কাজে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা অনেকেই ২-৩ হাজার টাকায়ও লাইভ করাতে চায়, যেটা কোনোভাবেই যথাযথ না," বলেন তিনি।
পেশাগত খুঁটিনাটি
ব্র্যান্ড প্রমোটিং এর কাজে শক্ত অবস্থান গড়তে চাইলে পরিশ্রমের বিকল্প নেই বলে জানান প্রত্যেকেই। সফল এই প্রমোটারদের মতে এই পেশায় সবচেয়ে বড় স্কিল হলো সুন্দর বাচনভঙ্গি।
ব্যক্তিসত্ত্বা বজায় রেখে নিজের মতো কাজ করা, আত্মবিশ্বাসী হওয়া, ধৈর্যশীল হওয়া, স্পষ্টভাষী হওয়া, শালীনতা বজায় রাখা, সৃজনশীল হওয়া, পরিপাটি সাজসজ্জা আর উপস্থাপন দক্ষতা ব্র্যান্ড প্রমোটিং এর কাজে গুরুত্বপূর্ণ স্কিল। লাইভ করার আগে যে প্রোডাক্ট নিয়ে কথা বলতে হবে সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া আবশ্যক। লাইভের দর্শকের প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে তাদের আগ্রহ ধরে রাখা সম্ভব না।
ব্র্যান্ড বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনও জরুরি। বারিশ হকের মতে, শুরুতেই খোঁজ নিতে হবে ব্র্যান্ডটি কত বছর ধরে মার্কেটে আছে, তার ব্যাকগ্রাউন্ড কী, রিভিউ কেমন। লামিয়া মোক্তার লিন্ডার মতে, নিজের পার্সোনালিটির সাথে যায় না এমন প্রোডাক্ট বা ব্র্যান্ডের প্রমোশন করা উচিত না।
ব্র্যান্ড প্রমোটার হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেতে হলে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের গ্রহণযোগ্যতার জায়গা করে নেওয়াও জরুরী বলে মনে করেন অনেকেই। এখানে যার ফলোয়ার যত বেশি তার পারিশ্রমিকও তত বেশি। অতিরিক্ত পারিশ্রমিক নিয়ে সমালোচনার জবাবে বারিশ বলেন, "অনলাইন ব্র্যান্ড প্রমোটাররা বেশি সম্মানী দাবি করার যোগ্যতা রাখে বলেই তারা এটা দাবি করতে পারে। আজকে একটা নতুন প্রমোটার এসে যদি লাইভপ্রতি ৫০ হাজার টাকা চায় তাকে অবশ্যই ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে না,
একটা পেইজ থেকে লাইভের পর যখন বেশি পরিমাণে সেল হচ্ছে, বাম্পার হিট হচ্ছে তখন সেই পার্সেন্টেইজ হিসেবে সম্মানীটা তারা ডিজার্ভ করে বলেই এই সম্মানীটা উঠে এসেছে। ব্র্যান্ড ওনাররাও এই সম্মানী দিয়েই কাজ করাচ্ছেন। এটা নিয়ে আসলে সমালোচনার কিছু নেই। কারণ আমরা কারো দ্বারে গিয়ে কাজ চাচ্ছি না। আমাদের দ্বারে মানুষ আসছে কাজ নিয়ে। আপনার বাজেট কম হলে কম পারিশ্রমিক নেওয়া প্রমোটারদের দিয়ে কাজ করাবেন। এটাই স্বাভাবিক।"
অন্যদিকে নুসরাত আক্তার লোপা মনে করেন ব্র্যান্ড প্রমোটিং-এ সর্বোচ্চ আর সর্বনিম্ন পারিশ্রমিকের একটা সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। তাহলে সবার মান বজায় থাকে। সবার জন্য সম্মানজনক ক্ষেত্রও বজায় থাকে। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে লাইভ করানোর পর ব্যবসায় লভ্যাংশ উঠে আসবে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ব্যবসায়ীদের।
তবে অনলাইন লাইভে ব্র্যান্ড প্রমোশন করলেই অবধারিতভাবে বিক্রি বাড়বে- এমন ধারণা পরিহার করার পরামর্শ দেন শাম্মা রুশাফি অবন্তী। তার ভাষ্যে, "প্রমোটিং আর সেলিং কিন্তু দুইটা ভিন্ন জিনিস। পোস্টারে সেলিব্রিটির চেহারা দেখেই যে মানুষ দোকানে ঢুকে জিনিসটা কিনে ফেলবে তা না। ওই চেহারা দেখে মানুষ ব্র্যান্ডটাকে চেনে, কেনার বিষয় পরে আসে। এই কাজে ব্র্যান্ডটাকে পরিচিত করানোই মেইন। মানুষ প্রমোশন আর সেলিং এর জায়গাটাকে গুলিয়ে ফেলে। প্রমোশন অনেকটাই হেল্প করে সেলিং এ, কিন্তু যে জিনিসটা আপনি বিক্রি করতে চাচ্ছেন সেটা যদি মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী না হয় তাহলে তো হবে না।"
ব্র্যান্ড প্রমোশনের কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই সাইবার বুলিং এর শিকার হতে হয় উপস্থাপকদের। এর বিরুদ্ধে যথাযথ ও কার্যকরী আইন থাকা জরুরী বলে মনে করেন তারা। সম্প্রতি বারিশ হকের গর্ভকালীন ব্র্যান্ড প্রমোটিং-এর কাজ নিয়ে ফেসবুকে আক্রমণাত্মক ট্রলিং ভিডিও ভাইরাল হলে সেই ভিডিও তৈরি করা ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেন তিনি। পুলিশের সাইবার ইউনিটের তৎপরতায় দোষীকে শাস্তির আওতায়ও আনা হয়।
অনলাইনে কাজ করতে গিয়ে হ্যারাসমেন্টের শিকার হওয়া আমাদের জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন নুসরাত। এক্ষেত্রে শক্তিশালী ও কার্যকরী সাইবার আইন প্রণয়ন জরুরী। কাজে টিকে থাকতে হলে নেতিবাচক মন্তব্য অগ্রাহ্য করে ধৈর্যধারণ করতে হবে বলে জানান তিনি।
কাজ শুরু আগে নিজের পরিবারের সমর্থন আদায় করার প্রতি গুরুত্ব দিতে বলেন লিন্ডা। কারণ নিজের আশেপাশে সাপোর্টিভ পরিবেশ না থাকলে কাজের প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে কাজ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব।
বর্তমানে অনেক ব্র্যান্ডই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নতুন ব্র্যান্ড প্রমোটারদের কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে। উপস্থাপনের দক্ষতা থাকলে অনলাইনে ব্র্যান্ড প্রমোটিং যে কারো জন্যই হয়ে উঠতে পারে কাজের সুবর্ণ সুযোগ।