আট মাসে কার্ডে লেনদেন বেড়েছে ১৬৬%
সহজে লেনদেনের সুবিধার্থে ব্যাংক চেক এর তুলনায় কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের প্রবণতা বেড়েছে। চলতি বছরে প্রথম আট (জানুয়ারি থেকে আগস্ট) মাসে ২৭১৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬৬ শতাংশ বেশি।
গত বছরের প্রথম আট মাসে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দেশের খোলা বাজারে গত কয়েক মাস ধরে ডলার সংকট চলছে। মানুষ ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসার কাজেও অনেকেই বিদেশে কার্ডের মাধ্যমে ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে কার্ডের মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা ও ডলারের লেনদেন বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্ট মাসে ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে ৩৬ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। যা আগের মাসে ছিল ৩৮ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। এ হিসেবে জুলাই মাসের চেয়ে আগস্ট মাসে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে ১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা।
আগস্ট মাসে স্থানীয় মুদ্রায় কার্ডে ৩৬ হাজার ৩৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়। আর বৈদেশিক মুদ্রায় এর পরিমাণ ৫২০ কোটি টাকা। স্থানীয় মুদ্রায় আগস্ট মাসে লেনদেন কমলেও ডলারে বেড়েছে।
এ বিষয়ে মিচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি মাহবুবুর রহমান বলেন, "স্বশরীরে ব্যাংকে লেনদেনের চেয়ে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনে সুবিধা হওয়ায় এর ব্যবহার বেড়েছে। যারা সম্প্রতি বিদেশে যাচ্ছেন ভ্রমণে ও শিক্ষার উদ্দেশ্যে, তারা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডলার ব্যবহার করছেন। যার কারণে তাদের ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে।"
তিনি আরো বলেন, "খোলা বাজারের ডলার কিনতে গেলে ১১৫ টাকার বেশি দিতে হয়। বর্তমানে যারা কার্ডের মাধ্যমে ডলার নিয়ে যাচ্ছেন তারা ১০৫ টাকা পেয়ে থাকেন, তাই কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে।"
দেশে অনেক আগেই ক্রেডিট কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অনুমোদন দেওয়া হয়। আর ২০২০ সালের জুনে ব্যাংকগুলোকে গ্রাহকদের হিসাবের বিপরীতে আন্তর্জাতিক ডেবিট কার্ড ইস্যুর অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দ্বৈত মুদ্রার এসব কার্ড দিয়ে দেশে বসেই বিদেশের হোটেল বুকিং, নির্দিষ্ট পরিমাণের কেনাকাটাসহ নানা খরচ করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী, কার্ডে বছরে খরচ করা যাবে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার। গ্রাহকদের কাছে নগদে ও কার্ডে দুভাবেই ডলার বিক্রি করে ব্যাংক। এতদিন নগদের চেয়ে কার্ডে ডলার নেওয়ার খরচ ছিল কম।
তবে সম্প্রতি বাফেদা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কার্ডের ডলারের বিনিময় মূল্য হবে নগদ ডলারের মতোই। তাই সামনে কার্ডের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রার ব্যবহার মাধ্যমে কমে আসবে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন চলতি বছরের প্রথম মাস থেকে টানা বাড়ছে। জানুয়ারিতে ২১৯, ফেব্রুয়ারিতে ২৫৬, মার্চে ২৮০, এপ্রিল ২৪১, মে ৩৫৮, জুন ৩৯৯, জুলাই ৪৪০ ও আগস্টে ৫২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা মোট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৮০ হাজার ৪২৯টি। এর মধ্যে ডেবিট কার্ড ২ কোটি ৮৩ লাখ ৭২ হাজার ৫৯৪। ক্রেডিট কার্ড ২০ লাখ ২২ হাজার ২৫৯ এবং প্রিপেইড কার্ড রয়েছে ২৯ লাখ ২৫ হাজার ৫৭৬। সংখ্যার মতো কার্ড লেনদেনের সিংহভাগই হয় ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে।
গেল আগস্ট মাসে ডেবিট কার্ডে ৩৩ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ২ হাজার ৩০২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। আর প্রি-পেইড কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২৯৭ কোটি টাকা।
কার্ডের মাধ্যমে ডলারের লেনদেন বাড়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, "ডলার ডিমান্ড সাপ্লাই অসমন্বয় রয়েছে। তাই মানুষ নগদ ডলার না পেয়ে বিদেশ ভ্রমণ, চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য কার্ডের মাধ্যমে ডলার লেনদেন করছে। ফলে কার্ডের মাধ্যমে সম্প্রতি সময়ে ডলারে লেনদেন বেড়েছে।"
দেশে পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। ডলার বিক্রিসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েও ডলারের দামের অস্থিরতা থামাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে ডলারের বিপরীতে ক্রমশ মান হারাচ্ছে বাংলাদেশি টাকা।
সর্বশেষ গত বুধবার আন্তঃব্যাংকে সর্বনিম্ন ১০৪ টাকা ৭৬ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ১০৫ টাকা ৬৬ পয়সা দরে ডলার বিক্রি হয়। মঙ্গলবার আন্তঃব্যাংকে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা ১০ পয়সা এবং সর্বোচ্চ ১০৫ টাকা দরে ডলার বিক্রি হয়।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে ৯৭ টাকায়। গত মঙ্গলবার কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৬ কোটি ২০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৩৮ হাজার কোটি টাকার মতো উঠে এসেছে।
গত অর্থবছর ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়। এভাবে ডলার বিক্রির ফলে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে ওঠা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে।