কোভিড রোগীদের সেবা দেওয়া চিকিৎসক ডেঙ্গুতে মারা গেলেন
"জ্বর, মায়ালজিয়া এবং শুকনো কাশিতে ভুগছি। সবেমাত্র কোভিড রোস্টার শেষ করেছি এবং ডিউটির সময় মশার বড় বড় কামড় খেতে হয়েছে। আমাকে আপনার প্রার্থনায় রাখবেন।"-এই মেসেজ দেয়ার দুই দিনের মধ্যে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৩৪ বছর বয়সী ডা. আসাদ শিকদার। কর্তব্যনিষ্ঠ এ চিকিৎসক তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেছেন কিন্তু মশা নিধনের দায়িত্ব যাদের তাদের অবহেলার কারণের অকালেই প্রাণ হারালেন।
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইডিসিএইচ) কর্মরত ছিলেন তিনি। রেসিডেন্ট কোর্স শেষ করে আর কিছুদিন পর বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ হতেন এ মেধাবী চিকিৎসক। কিন্তু ডেঙ্গুতে সব শেষ হয়ে গেলো।
বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রাটর ডা. নিরুপম দাস বলেন, "দুই দিন জ্বরের পর ডা. আসাদকে রবিবার সন্ধ্যায় মুগদা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গু এনসেফালাইটিস বলে ধারণা করা হচ্ছে।"
মানিকগঞ্জে বাড়ি ছিলো ডা. আসাদের। শুক্রবার সেখানে দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা দিতেন তিনি। গত শুক্রবারও বাড়িতে যাওয়ার আগে হাসপাতালে কোভিড ডিউটি করেছেন তিনি। ডিউটি শেষে বাড়িতে যাওয়ার পর জ্বর আসে তার। জ্বরের একদিন পর শনিবার মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে ডেঙ্গু শনাক্ত হলে শনিবার তার প্ল্যাটিলেটের মাত্রা ছিলো ২ লাখের বেশি। পরদিন (রোববার) প্ল্যাটিলেট ১ লাখ ১০ হাজার হলে ও ব্লাড প্রেশার কমে যাওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। রোববার সন্ধ্যায় হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ডা. আসাদের সিনিয়র সহকর্মী এবং মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. এম এ তাহের টিবিএসকে বলেন, "কোভিডের সময় মুগদা মেডিকেলে ডা. আসাদ আমার সাথেই কাজ করতো। রোববার তার স্ত্রী আমাকে ফোন করে ওকে মুগদা মেডিকেলে নিয়ে আসার কথা বলে। আমি ওর জন্য কেবিন রেডি করে রেখেছিলাম। কিন্তু ওকে যখন আনা হয় ইমার্জেন্সিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় ক্লিনিক্যালি ডেথ। তারপরও আমরা ওকে সিসিইউতে নিয়েছিলাম। অনেক চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারলাম না।"
তিনি বলেন, "আসাদ অনেক হাসিখুশি ও মিশুক ছেলে ছিলো। যেখানেই যেতো সেখানেই মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে পারতো। ডেঙ্গু থেকে আসলে কী হলো তা আমরা বোঝার আগেই চলে গেলো।"
তিন বছর আগে বিয়ে করেছেন আসাদ। ৯ মাস বয়সী তার একটি ছেলেসন্তান আছে।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন ডা. আসাদ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আসাদ শিকদারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাধারণ সম্পাদক ডা. মো এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, "কোভিডে আমরা অনেক চিকিৎসক হারিয়েছি, এখন ডেঙ্গুতেও চিকিৎসক মারা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমাদের হাসপাতালগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার করুণ দশা নিয়ে সব সময় সমালোচনা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি আপনারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় জোর দিন, মশক নিধনে গুরুত্ব দেন। হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসকেরা মশার কামড়ে প্রাণ হারাবে সেটা তো হতে পারেনা। পাশাপাশি কোভিডের মত ডেঙ্গুতেও চিকিৎসকদের নিজেদের সতর্ক থাকতে হবে।"