খুলনা রেলস্টেশনে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা, আসামী ১৭০
খুলনা রেলস্টেশনে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। এতে ১৫০ থেকে ১৭০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে।
শনিবার রাত ১০টার দিকে খুলনা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা মো. খবির আহমেদ।
তিনি বলেন, 'মামলায় বলা হয়েছে, শনিবার দুপুরে বিএনপির সমাবেশে আসা অজ্ঞাত ১৫০ থেকে ১৭০ জন ব্যক্তি খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে হামলা করেছে। ওই সময়ে স্টেশনের ২৫টি গ্লাস ভাঙচুর করা হয়। রেলস্টেশন ভাঙচুর, স্টেশনের নিরাপত্তা কর্মী ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে এ মামলা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'যেহেতু ভাঙচুর ও হামলা করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাই মামলায় অজ্ঞাত বলা হলেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদেরকেই গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।'
খুলনা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, 'সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা রেলস্টেশনে নিজেরাই সংঘর্ষে জড়ান। পরে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়।'
তবে খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এসএম শফিকুল আলম মনা বলেন, 'সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ এবং পুলিশ তাণ্ডব চালিয়েছে। পথে পথে নেতা-কর্মীদের বাধা দেয়া হয়েছে; তাদের আটক করা হয়েছে। ট্রেনে যারা সমাবেশে এসেছেন, তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।'
শনিবার খুলনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। ওইদিন খুলনায় বন্ধ ছিল সকল ধরণের গণপরিবহন ও লঞ্চ চলাচল। যশোরের কিছু নেতাকর্মী ট্রেনযোগে খুলনায় এসেছিলেন। স্টেশনে নেমে তারা একপর্যায়ে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
সমাবেশে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত তার বক্তব্যে বলেছিলেন, 'আমরা দুর্বল নয়। যশোর থেকে আসা নেতাকর্মীদের রেলস্টেশনে বাধা দেওয়া হয়েছিল। আমরা শক্তি দেখিয়ে দিয়েছি। যেখানে বাধা আসবে, শক্তি দেখিয়ে দিব।'
একই সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'গত দুই-তিনদিনে ৫ শতাধিক নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হাজারো নেতা-কর্মীকে আহত করেছে। চুকনগরে তিনজনকে গুলি করেছে, কেশবপুরে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ। মোংলায় ট্রলারে আসা কয়েকশ নেতাকর্মীকে আহত করেছে। ট্রলার ডুবিয়ে দিয়েছে। রূপসা, তেরখাদা, দিঘলয়ার জনগণের একমাত্র বাহন ট্রলারে আসা ১০০ নেতা-কর্মীকে আহত করেছে।'
তিনি বলেন, 'খালিশপুর, দৌলতপুর, খান জাহান আলী থেকে সমাবেশে আসা নেতা-কর্মীদের আহত করা হয়েছে। বাগেরহাটে হামলা করে ৭০ জনের মতো নেতাকর্মীকে আহত করেছে, গ্রেপ্তার করেছে ৫০ জন নেতা-কর্মীকে। খুলনার ৫ ও ৭ নং ঘাটে আসা ট্রলার ডুবিয়ে দিয়েছে। গাজীরহাটের একজন কর্মীকে পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছে, এখনো তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।'
'খুলনা রেলস্টেশনে নেতা-কর্মীদের মারধর করেছে। রামপাল, কাটাখালিতে হামলা হয়েছে, রূপসা ঘাটে হামলা হয়েছে, জেলখানা ঘাটেও হামলা হয়েছে। এত মানুষ আহত হলো, এত মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হলো কেন? শুধু মিটিং বন্ধ করার জন্য?'
ফখরুল আরও বলেন, 'তিনদিন ধরে সব পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। বাস, লঞ্চ, খেয়াঘাট বন্ধ করেছে, তারপরও কি আপনাদের এই গণতন্ত্রের যে আকাঙ্ক্ষা, আপনাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম, সে লড়াইয়ে কি বাধা দিতে পেরেছে, পারে নাই। ইতিহাস বলে, যেকোনো দিন জনগণের ন্যায়সংগত দাবি শুধু শক্তি দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না।'