পশ্চিমারা বলতে চায় না, কিন্তু হিমার্স ধবংস করছে রাশিয়া
ইউক্রেনীয় সাঁজোয়া যান ধবংসে কামানের বদলে দিন দিন বাড়ছে রাশিয়ার ড্রোন ও মিসাইল ব্যবহারের নির্ভরশীলতা। এগুলি রণাঙ্গনের সম্মুখভাগ জুড়ে ধবংস করছে ইউক্রেনীয় ট্যাংক বা গোলন্দাজ কামান। কৌশলের এই পরিবর্তনের মাধ্যমে ভালো ফলাফলই পাওয়া যাচ্ছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত বেশকিছু ভিডিও চিত্রে এই সাফল্য স্পষ্টও হয়েছে। খবর ইউরেশিয়ান টাইমসের
ইউক্রেনীয় বাহিনী রণাঙ্গনের সম্মুখভাগজুড়ে রুশ বাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা হাই-মোবিলিটি রকেট আর্টিলারি সিস্টেম (হিমার্স বা হাইমার্স) ও ড্রোন দিয়ে রুশ সেনাদের রসদ ও গোলাবারুদ সরবরাহকেও ব্যাহত করছে। এই হুমকি মোকাবিলায় আরও বেশি আত্মঘাতী ও নজরদারি ড্রোন ব্যবহার করছে রাশিয়া।
ড্রোনগুলি ইউক্রেনীয় বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সমরাস্ত্র শনাক্ত করছে। রুশ গণমাধ্যম ইজভেস্তিয়ার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, শনাক্ত হওয়ার পর হিমার্স লঞ্চার ধবংস করতে বাক এম৩ মিসাইল ব্যবহার করছে রাশিয়া। বাক এম-৩ একটি মধ্যম পাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র। এটিকে ভূমিতে অবস্থিত টার্গেটে আঘাত হানতে ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে অভিনব।
তবে প্রয়োজন থেকেই এই কৌশল নিয়েছে রুশ বাহিনী। আসলে, হিমার্স দূর থেকে রকেট নিক্ষেপ করেই দ্রুত নিজের অবস্থান ত্যাগ করে। তখন এটিকে পুনরায় শনাক্ত করা হয়ে পড়ে কঠিন। বাক এম-৩ এর মতো আকাশে ব্যবহার্য অস্ত্র প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়ামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সময় উল্লেখযোগ্য হারে কমানো সম্ভব হয়েছে।
হিমার্স দিয়ে রাশিয়ার অনেক গোলাবারুদের ডিপো ইতঃপূর্বে ধবংস করেছে ইউক্রেন। তাই এগুলি সম্মুখভাগের আরও পেছনে সুরক্ষিত দূরত্বে সরিয়ে নিয়েছে রাশিয়া। সেখান থেকে সম্মুখভাগে গোলাবারুদ বহনেও সময় লাগে। এজন্য ড্রোন দিয়ে শনাক্ত করে বাক এম-৩ মিসাইল দিয়ে আঘাত হানা হয়ে উঠেছে কার্যকর এক সমাধান।
এসব ব্যাখ্যা দিয়ে সামরিক বিশেষজ্ঞ ভ্লাদিস্লাভ শুরিগিন ইজভেতসিয়াকে জানান, 'আমরা একটি রিকনসেন্স ট্রাইক সার্কিট তৈরির কাজ করছি– এর আওতায় ড্রোনের মাধ্যমে টার্গেটের তথ্য খুঁজছি। আর সেটি শনাক্ত হওয়া মাত্রই তার উপর লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত হানতে পারে– এমন মিউনিশনের মাধ্যমে হামলা করা হচ্ছে'।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অনেকগুলি ভিডিও প্রকাশ করেছে– যেখানে ইউক্রেনের ট্যাংক, এম৭৭৭ হাউইটজার কামান এবং বাক-এম১ লঞ্চার আত্মঘাতী রুশ ড্রোন ধবংস করছে এমন দৃশ্য রয়েছে। সচল লক্ষ্যবস্তুতে হামলার সক্ষমতা-ও বেড়েছে রুশদের।
রাশিয়ার কামিকাজি ড্রোনগুলিকে টার্গেটের তথ্যউপাত্ত সরবরাহ করে অনেক উঁচুতে উড্ডয়নকারী নজরদারি ড্রোন। যাতে থাকে মানসম্মত অপটিক্যাল সরঞ্জাম, ক্যামেরা, রেডার ইত্যাদি। নজরদারি ড্রোনের অপারেটর লক্ষ্যবস্তু শনাক্তের পর, সেটির অবস্থানের তথ্য কামিকাজে ড্রোনের অপারেটরকে পাঠায়। ওই দিকনির্দেশনা ডিজিটাল পদ্ধতিতে কামিকাজে ড্রোনে আপলোডের পর– সেটিকে নিরাপদ দূরত্ব থেকে হামলার উদ্দেশ্যে উৎক্ষেপণ করে কামিকাজে ড্রোনের অপারেটর।
লক্ষ্যবস্তুর কাছাকাছি এলাকায় আসার পর অপারেটরদের এই চেইনের মাধ্যমে আবারও পেয়ে যায় কামিকাজে ড্রোন।
রাশিয়ার ড্রোন ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও– সে তুলনায় উপেক্ষিত হয়েছে সোভিয়েত আমলের প্ল্যাটফর্ম বাক-এম৩ এর সাফল্য।
বাক এম৩ বনাম হিমার্স
বাক এম-২ ও এম-৩ মিসাইল ডিফেন্স দিয়ে হিমার্স থেকে নিক্ষেপ করা অনেক রকেট আঘাত হানার পূর্বেই ধবংস করা হয়েছে। এবার বাক এম-৩ মিসাইলকে হিমার্স লঞ্চারগুলি ধবংসে নিয়োজিত করা হয়েছে।
ইজভেতসিয়া একজন বাক-এম৩ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম অপারেটরের সাক্ষাৎকারও নেয়। তিনি জানান, বাক এম-৩ তুলনামূলক আধুনিকায়িত সংস্করণ হওয়ায় আমরা কোন উৎস থেকে হিমার্স রকেট নিক্ষেপ করছে– সেটি শনাক্ত করতে পারি। এরপর শত্রুর রকেট ধবংস করার বদলে লঞ্চারটিকে ধবংস করতে আমরা পাল্টা মিসাইল নিক্ষেপ করি।
উল্লেখ্য, মাত্র ৫ মিটার উঁচু দিয়ে উড়ে আসা বস্তুকেও শনাক্ত করতে পারে বাক এম-৩ এয়ার ডিফেন্স। কোথাও থেকে নিয়মিত বিরতিতে একের পর এক রকেট নিক্ষেপ করা হলে– ওই স্থানটি সুনির্দিষ্টভাবেও শনাক্ত করতে পারে এর রেডার।
বাক এম-৩ মিসাইল নিজস্ব কমান্ড গাইডেন্স ও অ্যাকটিভ হোমিং– দুইভাবেই লক্ষ্যবস্তুর দিকে ধেয়ে যেতে পারে। মিসাইলে রয়েছে ডাইরেকশনাল ওয়ারহেড।