কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন সেপ্টেম্বরে বেড়েছে ২১৭%
ডলারের সংকটের মধ্যেও সেপ্টেম্বর মাসে কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ছিল ঊর্ধ্বমুখী। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ২১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ ৫৮৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য থেকে জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে কার্ডধারীরা খরচ করেছে ১৮৪.৬ কোটি টাকা, যা এই বছরের তুলনায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা কম।
এদিকে, আমদানি দায় বৃদ্ধির কারণে দেশের রিজার্ভ নিয়মিত কমছে, তার মধ্যে যোগ হয়েছে ক্রেডিট কার্ডে ফরেন করেন্সিতে অধিক লেনদেন।
গত এক বছরের তুলনায় ২৩.৮১ শতাংশ কমে ৯ নভেম্বর রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪.২ বিলিয়ন ডলার।
ব্যাংকাররা বলছেন, দেশে ক্যাশ ডলারের সংকট তৈরি হওয়ায় ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ফরেন কারেন্সি লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে।
তাছাড়া, অধিক আয়ের লোকজনের বিদেশে ভ্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি ও ক্যাশ ডলারের চেয়ে কার্ডে ডলারের রেট কম হওয়ায় লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে।
যদিও সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক উভয়ই গত মে মাস থেকে তাদের কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করছে, উচ্চ এবং উচ্চ-মধ্যম আয়ের লোকজন বিদেশে ভ্রমণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা।
এদিকে, দেশে রিজার্ভের পরিমাণ কমতে থাকায় ব্যাংকগুলোতে তরল ডলার সংকট তৈরি হয় গত এপ্রিল থেকে।
গত ১২ জুলাই প্রথমবারের মতো খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। এরপরে ক্রমান্বয়ে দাম বাড়লে-কমলেও ১০ আগস্ট ডলারের দাম বেড়ে যায় ১২০ টাকায়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে ক্যাশ ডলারের নির্ভরতা কমাতে কার্ড ব্যবহার বাড়াতে বলা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ক্যাশ ডলারের সংকট বাড়ায় গত মে মাস থেকে কার্ডের মাধ্যমে ডলারের লেনদেন বেড়েছে। এপ্রিলে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ২৪১ কোটি টাকা, মে মাসে এসে লেনদেন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫৮ কোটি টাকায়।
তারপর থেকে টানা চার মাস যাবৎ কার্ডের মাধ্যমে ফরেন কারেন্সি লেনদেন বাড়ছে। আগস্টে লেনদেন হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ৫৮৪ কোটি টাকার।
সরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের হেড বলেন, মঙ্গলবার ব্যাংকগুলো ক্যাশ ডলার এনডোর্স করেছে ১০৮ টাকায়। খোলা বাজারে ডলারের দাম ১১২ টাকা। অথচ বিদেশে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খরচ করা ডলার দাম দিচ্ছে মাত্র ১০০ টাকায়। তাই ক্রেডিট কার্ডে ডলারের লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "ক্যাশ ডলার সংকটের পর থকে ক্রেডিট কার্ড নেওয়া গ্রাহকের পরিমাণ বাড়ছে, বিদেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে গ্রাহক পণ্য কেনায় ঝুঁকছেন বেশি। এছাড়া আমদানিতে এলসি মার্জিনসহ বিভিন্ন শর্ত থাকায় ছোট ছোট ব্যবসায়িরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পণ্য আমদানি করছেন যার কারণে কার্ডে লেনদেন বেড়েছে।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সীমা অনুযায়ী, এক বছরে একটি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার ব্যয় করতে পারবেন একজন গ্রাহক। সেক্ষেত্রে একই পরিবারে অধিকাংশ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ছোট ছোট ব্যবসায়িরা বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করছে।
যদিও গত ৪ সেপ্টেম্বরের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে ২৭টি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের সীমা অতিরিক্ত খরচ করায় তাদের কারণ জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে। ব্যাংকের অন্তত ৭১ জন ক্রেডিট কার্ডধারী ১২ হাজার ৫০০ থেকে ২০ হাজার ডলার খরচ করেছে।
এদিকে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে লেনদেন সেপ্টেম্বরে আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে ১৮৯ কোটি টাকা।
সেপ্টেম্বরে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৮৭ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। যদিও জুনে মোবাইল ব্যাংকিং এ লেনদেন হয়েছে ৯৪ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা।
কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সেই মাসে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন বেশি হয়েছে। তার আগে গত রোজা ও রমজানের ঈদ উপলক্ষে এপ্রিলে ১ লাখ ৭ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।